নবীনগরে একটি খুনের ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে পড়ছে গ্রামের অনেক পরিবার



মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর থেকে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে একটি খুনের ঘটনায় প্রায় অর্ধশত বাড়ি ঘরে হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই গ্রামের অনেক পরিবার। আধিপত্য বিস্তারের পূর্ব বিরোধের জেরে গত ৩ মার্চ উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে।
এর জের ধরে মো: দুলাল মিয়া (৪৫) নামে এক ব্যক্তি খুন হয়।এই নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তান্ডব চলে ওই গ্রামের অনেক বাড়িতে। এসব বাড়ির সব ঘরেই ধারালো অস্ত্রেরর কোপের ছাপ রয়েছে। হামলার পর থেকে নারী-শিশু ছাড়া দেখা মেলে না কোনো পুরুষের। তবে এসব মানুষগুলোর অনেকেই বিরোধের জেরে খুনের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।
ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের মহিলারা জানান,গ্রামের দুটি পরিবার নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য এই খুনা-খুনির ঘটনা করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের কষ্ট দিচ্ছে। এই সংঘাতের কারনে তারা নিজের জমিতে ফলালো সবজি বাজারে তোলতে পারছেনা,জমিতেই সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।এখন ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে না খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন তারা।
তার আরো বলেন, খুনের ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ পাড়ায়। অথচ হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে উত্তর পাড়ার বাড়ি-ঘরে। ঘটনার রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল তখনই হামলা চালানো হয়। সব মিলিয়ে এক থেকে দুইশ বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার সময় স্থানীয় ছত্তর মিয়ার বাড়ির উঠানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সূত্র জানায়, গত দুই বছর ধরে লক্ষ্মীপুর গ্রামের আতশ আলী, মোল্লা বাড়ি, দফের আলীর বাড়ি, পনাগাজীর বাড়ির সঙ্গে খাঁ বাড়ি, ভূঁইয়া বাড়ি, হুরাগাজীর বাড়ি, কাতাইরা বাড়ি ও লাডুর বাড়ির লোকজনের বিরোধ চলে আসছে।
বছর দুয়েক আগে ফুটবল খেলা নিয়ে আতশ আলীর বাড়ি আর হুরাগাজীর বাড়ির মধ্যে ঝগড়ার ঘটনায় মামলা-মোকদ্দমা হয়। এটি মিমাংসার জন্য এলাকায় এসে দু’পক্ষকে নিয়ে গত ৩ মার্চ বৈঠকে বসার কথা ছিলো নবীনগর থানা পুলিশের। কিন্তু ওইদিনই একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা করে।
সরজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহের ও জিল্লু মিয়ার ওপর এক পক্ষের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে জিল্লু মিয়া গুরুতর আহত হলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এ ঘটনার জের ধরে ওই রাতে বাড়িতে যাওয়ার পথে মুসলিমের বাড়ির সামনে হামলা হয় দুলালের ওপর।
নবীনগর থানার ওসি আসলাম সিকদার জানান, খুনের অভিযোগে একটি এবং জিল্লু মিয়াকে মারধর ও বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। গভীর রাতে ঘটনাটি হওয়ায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করছে পুলিশ। এসব ঘটনায় মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।