নবীনগরের বিদায়ী ইউএনও তানভীর গাজী’র বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে জুতাপেটা করাসহ নানা অভিযোগ
মিঠু সূত্রধর পলাশ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী আফিসার সালেহীন তানভীর গাজী’র বেশ কয়েটি কর্মকান্ড নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় বেশ তোলপাড় চলছে।
সদ্য বিদায়ী এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছেন। এর আগে নবীনগরে থাকাকালীন দীর্ঘ নয়মাস তিনি কিছু মানুষের উপর অমাবিক নির্যাতন চালিয়েছেন,যে সব ঘটনা এখন মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে।
শনিবার নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্মচারি ও ডাক্তার গণের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র স্থানীয় সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদলের কাছে জমা দেয়া হয়। ওই অভিযোগপত্রে হাসপাতালের ডাক্তার মো: সায়মুল হুদা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালেহীন তানভীর গাজীর বিভিন্ন অমানবিক অপকর্মের দৃশ্য দেখা যায়।
ওই অভিযোগপত্রে লেখা হয়, গত ২০ জানুয়ারি হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় মো: মারজান চৌধুরীকে কর্তব্যরত অবস্থায় ডা: সায়েমুল হুদার নির্দেশে বিদায়ী নির্বাহী অফিসার সালেহীন তানভীর গাজীর কার্য্যালয়ে ডেকে পাঠান। সেখানে উপস্থিত ওয়ার্ডবয় মারজানকে ডাক্তার সায়েমুল হুদা ও ইউএনও সম্পূর্ন আইন বর্হিভুত ভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
পুরো ঘটনা শুনে উপস্থিত শতাধিক মানুষের সামনে এ অমানবিক ঘটনাসহ নানা ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ডাক্তার সায়েমুল হুদাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলি হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন স্থানীয় সাংসদ।
অপর এক ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী ইউএনও সালেহীন তানভীর গাজী স্থানীয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সাংস্কৃতিক কর্মী আব্বাস উদ্দিন হেলাল নামের এক যুবককে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৪ জানুয়ারি বিদায়ী ইউএনও তানভীর গাজী তার নিজ কার্য্যালয়ে ডেকে নিয়ে জুতা পেটা করেন। তারপর এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ওই সংস্কৃতি কর্মীকে হুমকি প্রদান করেন ।
শনিবার (০৩/০২) এ ঘটনা জানা জানি হলে উপজেলার সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট এ বিষয়ে এক মানবন্ধন কর্মসূচির ডাক দিলে স্থানীয় সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল নিজে এর বিচার করবেন বলে আশ্বাস দেন।
পরে আব্বাস উদ্দিন হেলাল সহ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাদের নিয়ে স্থানীয় এমপি উপজেলার ডাক বাংলোতে এক দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেখানে সাংসদ সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা উপস্থিত থেকে নির্যাতিত হেলালের মুখ থেকে ঘটনা শোনার পর আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে এ ঘটনায় জড়িত ইউএনও’র অফিস সহকারি মো: মিজানুর রহমানকে সাংসদ ফয়জুর রহমান স্থানীয় ডাক বাংলোতে ডেকে পাঠায়। সেখানে অফিস সহকারি মিজানুর রহমানকে আব্বাস উদ্দিন হেলালকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছনা করার ঘটনায় জড়িত থাকার কারনে দুঃখ্য প্রকাশ করে নবীনগর থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। তার কিছুক্ষন পর মিজানুর রহমান ডাক বাংলো থেকে যাওয়ার পথে স্থানিয় আওয়ামীলীগ নেতা ও জনসাধারণের রোশানলে পড়েন ।
এ ঘটনার সময় সাবেক ইউএনও সালেহীন তানভীর গাজী নিজ কর্মস্থল থেকে এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে পুরাতন কর্মস্থল নবীনগরে অবস্থান করছিলেন।
এদিকে অফিস সহকারি মিজানুর রহমানের উপর হামলার ঘটনায় শনিবার রাতে স্থানীয় ৪ আওয়ামীলীগ নেতাকে ভ্রাম্যমান আদালতে ১ লাক্ষ টাক জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও সালেহীন তাভীর গাজী আরেক মুক্তিযুদ্ধার সন্তান ও স্থানিয় পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: কাউছার আলম শিবুকে গত দু’মাস আগে এক ভূমি কর্মকর্তার সাথে কথা কাটাকাটি করার কারনে বাজারের উপজেলা পরিষদ রোডে শতশত লোকজনের সামনে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে তিন মাসের সাজা প্রদান করেন।
তাছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে অনেক শিক্ষক,ডাক্তার অনেক শ্রেণি পেশার মানুষকে সালেহীন তানভীর গাজী শারীরিক ও মানুষিক ভাবে লাঞ্ছনা করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন বলে এলাকাবাসি সাংসদের কাছে অভিযোগ দেন।
এ বিষয়ে প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালেহীন তানভীর গাজী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন,আমি কর্তব্যরত অবস্থায় বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করায় তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সে জন্য তাদের এইসব মিথ্যা অভিযোগ। তাছারা আব্বাস উদ্দিন হেলাল কে আমি চিকিৎসার জন্য গত ২০ জানুয়ারী আর্থিক ভাবে বিশ হাজার টাকা সহযোগীতা প্রদান করেছি। ২৪জানুয়ারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোষ্টের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়েছে মাত্র। এটা কিভাবে লাঞ্ছনার সামিল হয়। আমি নবীনগরে থাকা অবস্থায় সততার সহিত কাজ করেছি।হয়তো এটাই আমার অপরাধ।