এবার বিজয়নগরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকায় ইউপি সদস্যদের নাম্বার!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের দেয়া বিশেষ ওএমএস সুবিধায় জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ণাঢ্য এক নেতার ‘ভাগ বসানোর’ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের তালিকায় ফোন নাম্বার উঠেছে একটি ইউনিয়ন পরিষদের দু’জন সদস্যের।
উপহারের জন্য করা তালিকায় উপকারভোগীদের নামের পাশে জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের একজন পুরুষ ও একজন নারী সদস্যের (মেম্বার) নাম্বার দেয়া হয়েছে।
এতে করে উপকারভোগীর বদলে ওই ইউপি সদস্যদের নম্বরেই যাবে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের টাকা।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ঈদ উপহার হিসেবে নগদ দুই হাজার ৫০০ টাকা করে দিচ্ছেন। এজন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক এবং সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছে। তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে দেয়া হচ্ছে ঈদ উপহার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়টি উপজেলার ৭৫ হাজার পরিবারকে দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার।
উপহারের জন্য রোববার (১৭ মে) ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ ৩২৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকাটি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বকুল পরিষদের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দিয়েছেন। তবে ওই তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তালিকার ১২ নম্বর ক্রমিকে মজুর হিসেবে উল্লেখ করা আড়িয়ল গ্রামে বাসিন্দা উষা রানী দাসের নামের পাশে তার মোবাইল নাম্বারের বদলে দেয়া হয়েছে পরিষদের সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য সুমিত্রা রানী দাসের নাম্বার (০১৭৫২৯৮৪২৩২)। আর ২৮৮
নম্বর ক্রমিকে ডালপা গ্রামের বাসিন্দা ও দিনমজুর নায়েব আলীর নামের বিপরীতে দেয়া হয়েছে ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান মিয়ার মোবাইল নাম্বার (০১৭২০৯৮৬২২৪)। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দুই হাজার ৫০০ টাকা ওই দুইজনের বদলে দুই ইউপি সদস্যের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে পৌঁছে যাবে।
নারী ইউপি সদস্য সুমিত্রা রানী দাস উপকারভোগীর নামের পাশে তার নাম্বার থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তার মোবাইল নাম্বার না থাকার কারণে আমার নাম্বার দিয়েছি। তারাই বলেছে আমার নাম্বার দেয়ার জন্য।
তবে ইউপি সদস্য মো. শাহজান মিয়া বলেন, অনেক যাচাই-বাছাই করে নাম্বারগুলো দেয়া হয়েছে। আমার নম্বার কোনোভাবেই যাওয়ার কথা না। আমার ওয়ার্ড থেকে নায়েব আলী নামে কারো নাম আমি দেইনি। তাছাড়া ডালপা আমার ওয়ার্ডের না।
ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বকুল বলেন, তালিকায় ত্রুটি- বিচ্যুতি আছে কী না জানার জন্যই আমরা তালিকা প্রকাশ করেছি। তবে ইউপি সদস্যের নাম্বারটি কীভাবে এসেছে সেটি বলতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার বলেন, আমাদের কাছে যে ভুল ধরা পড়েনি সেটি যেন লোকজন আমাদেরকে বললে সংশোধন করে দিতে পারি সেজন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি আমি এখনই দেখছি।
এর আগে, সরকারের দেয়া বিশেষ ওএমএস সুবিধার জন্য তালিকায় তার স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনের নাম তোলেন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলম। তিনি জেলা শহরের কাউতলি এলাকার ওএমএস ডিলার। ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি হয়েও গরীবের ওএমএস তালিকায় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের নাম তোলার কারণে জেলা ওএমএস কমিটি তার ওএমএস ডিলারশিপ বাতিল করে।
এছাড়াও এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার দায়ে গতকাল রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাকবুল হোসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রতিবেদনটি পূর্বে দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত