সৌদি আরবে বেড়েই চলেছে বাংলাদেশীদের অপরাধ
সৌদি আরবে বাংলাদেশী শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা তাদের সুনাম ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। গত ৭ অক্টোবর মিসরীয় নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যার দায়ে ১১ জনের মধ্যে আটজনকে প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরও কতক বাংলাদেশী ভারত, নেপাল, ফিলিপিন, থাইল্যান্ডি আর কেরেলাদের যোগসাজশে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নারী কেলেঙ্কারি, মানিলন্ডারিং, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আঞ্চলিক প্রভাব বিস-ার আর খুনের মতো জঘন্য ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে।
সরকার বা দূতাবাসের কোনো প্রতিবাদ না থাকায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশীদের সে খবর প্রচার হচ্ছে। অনেক সময় অপরাধ না করেও বিদেশী পত্রিকার শিরোনামে তাদেরকে জড়িয়ে মিথ্যা খবর ছাপা হচ্ছে। আবার কৌশলে সৌদি মিডিয়াকে কাজে লাগানো হচ্ছে শুধু বাংলাদেশের শ্রমবাজার নষ্ট করতে। ফলে বিদেশীদের কাছে কলঙ্কিত হতে চলেছে মহান স্বাধীনতার মাধ্যমে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা। কেঊবা আবার দেশে হত্যা, খুন, ধর্ষণ কিংবা ডাকাতি মামলা থেকে বাঁচতে আত্মগোপন করে থাকলেও তাদের চিরাচরিত সে অভ্যাস বদলায়নি বরং দূতাবাসের সহযোগিতা নিয়ে বীরত্বের সাথে কাজ চালাচ্ছে। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে নীরব চাঁদাবাজি করছে। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে একের পর এক অপরাধ করার ফলে সাধারণ শ্রমিকেরা হয়রানি আর বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রম মন্ত্রণালয়, রিক্রুটিং অ্যাজেন্সি এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন- কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা বিশেষ করে রিয়াদের বাথা, হারা, জেদ্দার বালাদ, দাম্মাদেরর সিকোর মতো স’ানগুলোতে প্রবাসীদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা প্রবল আকার ধারণ করেছে। যার দরুণ অন্য দেশের নাগরিকেরা অপরাধমূলক কাজ করলে তার দায়ভার বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশীদের নিতে হচ্ছে। আর মিডিয়া তা ফলাও করে প্রচার করছে। সর্বোপরি বিদেশী মিডিয়া ও দূতাবাসের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা কতক শ্রমিক দালালের সামানে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা বড় অসহায় হয়ে পড়ছেন।
অনেক আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা নিজ কর্ম ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। অতীত ঐতিহ্যের ফলে একটা সময় ছিল যখন সৌদি আরবে আসতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিমানভারা ছাড়া অন্য কোনো খরচ লাগত না। থাকা-খাওয়ার ব্যবস’াও মালিক করত। তা ছাড়া অনেক সময় শ্রমিকদের মালিক বা স্পন্সর একাধিক ভিসা দিয়ে আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে আসার সুযোগ করে দিত। এমনকি ভিসার সাথে অফিসিয়াল খরচের জন্য কিছু রিয়ালও দিত। বাংলাদেশী শ্রমিকেরা অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের চেয়ে কাজ দ্রুত আয়ত্ত করতে পারায় স্পন্সররা শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের অগ্রাধিকার দিতেন, যা বিদেশী নাগরীকদের কাছে পরিচিত। তথাপি মালিক পক্ষ মাঝে মধ্যে মূল্যবান সামগ্রী উপহার দিয়ে তাদের থেকে বেশি কাজ আদায় করে নেয়। কিন’ বর্তমান প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এখন সেই একই শ্রমিকদের সন্দেহ তালিকায় রেখে ঠকবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী হিসেবে মনে করা হয়। ফলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। তা ছাড়া দিচ্ছে না আকাম বা পেশা পরিবর্তনের সুযোগ। বড় বড় কোম্পানিতে যাও দু-একটা ভিসা পাওয়া যায় তা আবার সাধারণ শ্রমিকদের নাগালের বাইরে। অন্য দিকে চড়া মূল্য তো আছেই। এখন বাংলাদেশী একটা ভিসা লাগাতে ৮-৯ লাখ টাকা গুনতে হয়। তাও বিমান টিকিট ছাড়া।
সমপ্রতি বিদেশীদের প্ররোচনায় বাংলাদেশী শ্রমিকেরা নির্ধারিত তারিখ দিয়ে মারামারি করে রিয়াদের হারা ভার্সন নামক এলাকায়। বি.বাড়িয়া এবং দোহারের লোকদের পরস্পরবিরোধী লাঠিমিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে এ মারামারিতে লিপ্ত হয়, যা এলাকাবাসীর ওপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। বিদেশেও রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের নামে ২৮ অক্টোবরের মতো সোনার ছেলেদের লগি-বৈঠা,লাঠিসোঁটার হুঙ্কার আর নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা পত্রিকার পাতা, ইন্টারনেট, ভিডিও চ্যানেল ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন শহরে প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। তখন বাংলাদেশের স্টাইলে একদল আরেক দলকে রাম দা, চায়নিজ কুড়াল, ছুরি, তরবারি নিয়ে আক্রমণ করে, যা প্রতিরোধ করতে অনেক সময় স’ানীয় প্রশাসন হিমশিম খেয়ে যায়। বিদেশীদের এজেন্ডা বাস-বায়নে তারা আরবদের সাথে পর্যন- সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। খুন, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরিসহ বেআইনি ও অবৈধ কার্যকলাপে এত বেশি জড়িত হয়ে পড়ছে যে অন্য কোনো দেশের লোক অপরাধ করলেও সৌদি কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ বাংলাদেশীরাই করেছে ভেবে তাদের গ্রেফতার করে। ছাত্রদের মধ্যে হাতেগোনা দু-চারজন অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়লেও মদিনা, উম্মুল কোরা, কিং সউদ বিশ্ববিদালয়সহ সৌদি আরবের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশী ছাত্ররা অনেক সুনামের সাথে পড়ালেখা করে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস’ান করে। যদিও থেমে নেই রিয়াদ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইস্কুলের ম্যানিজিং কমিটি গঠন নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি আর দলাদলি।
বাংলাদেশ সরকার যদি বিশেষ টিমের মাধ্যমে মিডিয়ার আগ্রাসন, দূতাবাসের স’ীরতা ও শ্রমিকদের অপরাধ দমনে কেনো পদক্ষেপ না নেয় তা হলে হয়তো অচিরেই আবারো শিরশ্ছেদের মতো কলঙ্কিত অধ্যায়ের ঘটনা ঘটবে।
« ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ১২০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার (পূর্বের সংবাদ)