আশুগঞ্জের সাথে নাওঘাট গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন !
মোঃ তারিকুল ইসলাম সেলিম : আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের সাথে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অর্ন্তগত নাওঘাট গ্রামটি যুগের পর যুগ মাত্র আধা কিলোমিটার রাস্তার সংযোগ না থাকায় যুগের যুগ ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে । আশুগঞ্জের সাথে ব্যক্তিগত গাড়ী, রিকসা, সিএনজি করে সরাসরি যোগাযোগ নেই । এতে অসংখ্য মানুষের যাতায়াত কষ্ট দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ।
আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অর্ন্তগত এ গ্রামের মানুষ প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হলে সাদেকপুর, তারুয়া ও আড়াইসিধা ইউনিয়নের ৪-৫টি গ্রামের প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে ১৫ মিনিটের রাস্তা পনে-এক থেকে এক ঘন্টা সময় লেগে যায় । অন্যদিকে আশুগঞ্জ থেকে বিশ্ব রোড হয়ে বিরাসার দিয়ে নাওঘাট-খাকচাইল সড়কে প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার ঘুরে নাওঘাট প্রবেশ করতে হয়। এছাড়া নাওঘাটসহ আশপাশের চার পাঁচটি গ্রামের মানুষ বাজার থেকে সদায়পাতি নিয়ে রিকসা বা সিএনজি নিয়ে আসা- যাওয়া করতে পারে না । ফলে নাওঘাট গ্রামের উপর দিয়ে অন্য ৩টি ইউনিয়নের খাকচাইল, বিলকেন্দুয়াই, ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াতের লাগামহীন কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে । গ্রামগুলোর মানুষজনের হাট-বাজার তো বটেই শিক্ষা-চিকিৎসা গ্রহনেও দারুনভাবে ব্যহত হচ্ছে ।
নাওঘাট গ্রামের উপর দিয়েই চলে গেছে ঢাকা-চট্রগ্রাম, ঢাকা-সিলেট রেল সড়ক । গ্রামের উত্তর সীমানায় নাওঘাট আংশিক ভূখন্ডে তালশহর রেলস্টেশন প্রতিষ্ঠা হয়েছে । নাওঘাট গ্রামের সন্নিক্যটে ও স্টেশনের একটু পশ্চিমে অবস্থিত এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ হাট তালশহর নতুন বাজার । প্রতি শুক্র ও সোমবার বসে হাট । তালশহর বাজারে বহুদূর দূরান্ত থেকে প্রচুর ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয় । বাজারের পূর্ব-দক্ষিন দিকে রয়েছে পশ্চিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালশহর হাই স্কুল এবং উত্তর-পশ্চিমে কিরিমিয়া ফাজিল মাদ্রাসা রয়েছে। সময়ের বিবর্তনে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে বহুদূর এগিয়ে গেছে । মানুষ ঘর থেকে বের হলেই রিকসা, সিএনজি কিংবা বাসে চড়ার সুযোগ পান । কেবল নাওঘাটবাসী সে সুযোগ-সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত রয়েছে । যদিও গ্রামটির সাথে তিন থেকে চারটি সড়ক সংযোগের সম্ভাবনা রয়েছে । কিন্তুু পয়েন্টের মাঝামাঝি রেলস্টেশন হওয়ায় সড়কগুলোর সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।
এলাকাবাসীর মতে তিন থেকে চারটি রাস্তা সংযোগে বড় বাধা তালশহর রেলস্টেশন । শুধু তা-ই নয়, এখানে কোন ট্রেন স্ট্রোপিজ না থাকায় স্টেশনটিও এখন তালশহর, নাওঘাট ও আশপাশে গ্রামের বিশার জনগোষ্ঠীর কাছে বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছে । তালশহর রেলস্টেশন থেকে রেল লাইনের দক্ষিন পাশ ঘেঁষে তালশহর নতুন বাজারের সাথে নাওঘাট-খাকচাইল সড়কটি মাত্র আদা কিলোমিটার সড়ক নির্মান করলেই দীর্ঘদিনের যাতায়াত সমস্যার সমাধান হতো । অন্যদিকে বড়হরন থেকে রেল লাইনের পাশ ঘেঁষে নাওঘাট গ্যাং কোয়াটার পর্যন্ত নির্মান হওয়া সড়কটি সংস্কার করে স্টেশনে নাওঘাট-খাকচাইল সড়কের সাথে সংযোগ করে দিলে জেলা সদরের সাথে এ এলাকার রাস্তার দূরত্বও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার কমে যাবে । তা যদি হয়, তা-হলে কয়েকটি গ্রামের সড়ক যোগাযোগের নতুন মাত্রা যোগ হবে । যোগাযোগের সোনালী অধ্যায়ে যোগ হবে নাওঘাট, তালশহর, তারুয়া, খাকচাইল, ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বড় হরন সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম । প্রশ্ন হলো রাস্তাটি কে করবে ?
নাওঘাট গ্রামটি আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অর্ন্তগত হলেও গ্রামের উত্তর সীমানায় তালশহর সদর ইউনিয়নে মাত্র রেলস্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে যেতে চারশো মিটার রাস্তা পড়েছে । বাজারে যেতে বাকি সবটুকু রাস্তা তালশহর ইউনিয়নের সীমানায় পড়েছে । মাঝখানে আরেক বাধা রেলবিভাগ । ত্রিমুখী সমস্যা ছাড়াও স্থানী এমপি এ্যাড. জিয়াউল হক মৃধার নানা অজুহাতে ডিও লেটারে দস্তখতের গরিমাসি তো আছেই । তবে যা কিছুই হোক রাস্তাটি নির্মানে দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মধ্যে আন্তরিকতা ও সমন্বয় ঘটলে তাতে কোন সমস্যা থাকবে না । উল্লেখ্য যে, পূর্বকালে থেকেই কৃতি-সন্তানদের প্রসূতিগারখ্যাত নাওঘাট গ্রামে অনেক জ্ঞানী-গুণী কৃর্তিমান মানুষদের মিলন মেলায় পূরিপূর্ন ছিল। যাঁরা দেশ-বিদেশে সরকারি-বেসরকারি বহু উচ্চুপদস্থ ছিলেন এবং আছে। তাদেরও কেউ গ্রামে রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে তেমন এগিয়ে আসেনি । ১৯৮৪ সালে তৎকালীন সমাজ কল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী নাওঘাট গ্রামের রত্নবধূ ব্যারিস্টার রাবিয়া ভূঁইয়া নাওঘাট দক্ষিনপাড়া (মাগুড়া) থেকে তালশহর রেলস্টেশন পর্যন্ত গ্রামের মধ্যে দিয়ে নাওঘাট-খাকচাইল সড়কটি নির্মান করেন । ১৯৯৩ সালে বাকিটুকু সম্পূর্ন হয় । গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তাটিরও নানা খানাখন্ডে নাজুক অবস্থা । উচ্চু-নিচু টিলা টাক্কুর বেয়ে যানবাহন চলাচল করে । ফলে ধূলাবালিতে পুরো এলাকার আবহাওয়া ভারি ও আঁধার নেমে আসে ।
রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে । সামনে বৃষ্টিবাদল দিন ঘনিয়ে আসছে তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করেনি । নানা টালবাহানা করে দিনের পর দিন সময় ক্ষেপন করছে । দেখা বা তদারকি করার কেউ নেই । কতৃপক্ষে যেনও চোখ বুজে আছে । ১৯৯৮ সালে নাওঘাট গ্রামের কৃতি-সন্তান তৎকালীন এলজিইজির অতিরিক্ত সচিব কাজী আব্দুল বায়েস বড়হরণ থেকে রেললাইনের দক্ষিনপাশ ঘেঁষে তালশহর বাজার পর্যন্ত রাস্থাটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন । নাওঘাট গ্যাংকোয়াটার পর্যন্ত প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর নানা জটিলতায় কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায় । এলাকাবাসী পায়ে হেটে রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারলেও বর্তমানে রাস্তার কোন কোন জায়গা থেকে মাটি সরে জমিনে পরিনত হয়ে গেছে । এ রাস্তাটি নির্মান কাজ সম্পূর্ন করা তো দূরের কথা। আজ পর্যন্ত কেউ সংস্কার করতেও এগিয়ে আসেনি । ২০১৭ সালে গ্রামবাসীর উদোগে নাওঘাট-খাকচাইল সড়ক থেকে প্রাইমারী স্কুল-মধ্যপাড়া জামে মসজিদ পর্যন্ত সড়কটি উত্তর দিকে মাঠে (ফসলী জমি)’র মধ্যে দিয়ে তালশহর বাজার পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মান কাজ শুরু হয় । মাত্র কয়েকশো মিটার সড়ক দৃশ্যমান হওয়ার পর নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে নির্মান কাজ আটকে যায় । ভূঁইয়া বাড়ির মোড়ে পাকা পুলটি ২৫ বছর আগে মানুষ পায়ে হেটে চলাচলের জন্য নির্মান করা হয়েছিল । পুলের উপর একটা রিক্সা উঠলে একজন মানুষ সাইড দিয়ে যেতে পারে না । পুলটি সুঁড়ো হওয়ায় যানবাহনে চলাচলে অনুপোযী হয়ে পড়েছে । এটি ভেঙ্গে নতুন একটি ওয়াই ব্রিজ করা অতিজরুরী। এছাড়া গ্রামের ভিতরে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় কাঁচা রাস্তা সংস্কার করা জরুরী । ভূঁইয়া বাড়ির থেকে প্রাইমারী স্কুল হয়ে পশ্চিমপাড়া থেকে নাওঘাট-খাকচাইল সড়ক পর্যন্ত সংস্কার ও পিস ডালাই করা এখন সময়ের দাবি । অথচ এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোন নজর নজর নেই ।
বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা একটা মাত্র রাস্তার অভাবে সরাসরি গাড়ি, সিএনসি, রিকসা নিয়ে নাওঘাট গ্রামে আসতে না পেরে অনেকটা খুচট খেয়েই পায়ে হেটে কিংবা তারুয়া হয়ে খাকচাইল-নাওঘাট রাস্তা দিয়ে দুই তিন ইউনিয়ন ঘুরে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন । তারাও যাতায়াত দুুুুর্ভোগের শিকারে পড়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে রাস্তা-ঘাট নির্মানের ওয়াদা করেন । বিশেষ করে সবার মুখেই তখন তালশহর রেলস্টেশন থেকে তালশহর বাজার পর্যন্ত নাওঘাট-খাকচাইল সড়কটি সংযোগ স্থাপনের জন্য বিশেষ গুরুত্ব পায় । কিন্তু কেউ কথা দিয়ে কথা রাখেনি । অনেকেই নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা করে নাই । এভাবে দিনের পর মাস, তারপর বছর পেরিয়ে গেলেও কারোই রাস্তাটি নির্মানে এখন পর্যন্ত কোন তৎপরতা গ্রামবাসির চোখে পরেনি । কখন চোখে পরবে তাও কারো জানা নেই । এভাবেই বছরের পর বছর পেরিয়ে তারাও হয়তো অতীতের অন্যসব জনপ্রতিনিধিদের তালিকায় যোগ হবেন । এছাড়া আড়াইসিধা উত্তর বর্তমান আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এপর্যন্ত যাঁরাই চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এসেছেন । তারা কেউ নিজ নির্বাচনী ইউনিয়নভুক্ত নাওঘাট গ্রামে সরাসরি আসতে পারেনি, এসেছেন তালশহর কিংবা তারুয়া ইউনিয়ন ঘুরে । যে কারনে তাঁরা সবাই এ রাস্তাটি নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন । জয়ী হওয়ার পর তাঁদের কেউই রাস্তাটি সংযোগ দেওয়া তো দূরের কথা । এ ব্যাপারে কোন রকম চিন্তাও করেনি । এখন জনমনে প্রশ্ন ! তাহলে কি ভোটের রাজনীতিতে নাওঘাটবাসীর কাছে রাস্তাটি নির্মাণের কথা বলে ভোটের সুবিধা নিতেই বার বার মুলা ঝুলিয়ে তারা তাদের ফায়দা হাসিল করছে..? তা-না হলে কথা দিয়ে কেউ কথা রাখেনি কেন..?