কিডনিকে ধ্বংস করছে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, তা হলে প্রতিকারের পথ কী?
বুকের বাম দিকে ব্যথা দিয়ে শুরু। আর শেষ? অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি দিয়ে। তবে পরিবারের দুর্ভাবনা এখানেই শেষ নয়। বলা ভাল শুরু। দেখা গেল কিডনি বাঁচাতে, একান্ত জরুরি অপারেশনটি করতে পারছেন না চিকিৎসক। অথবা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরেই শুরু করতে হচ্ছে ডায়ালিসিস। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের হাতে স্রেফ দুটো অপশন খোলা। হয় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে সমস্যার আশু সমাধান অথবা তাৎক্ষণিক ওষুধ দিয়ে রোগটাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা।
দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা এই ঘটনা পরম্পরাকেই চ্যালেঞ্জ করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিলীপ কুমার। রবিবার কলকাতাতেই এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়ে দিলেন, এই সমস্যার সমাধান বাতলে ফেলেছেন কলকাতা শহরের চিকিৎসরকরাই।
দিলীপবাবুর কথায়, “অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে ব্যবহৃত হয় কন্ট্রাস্ট মিডিয়া। কন্ট্রাস্ট মিডিয়া আয়োডিন দিয়ে তৈরি এক ধরনের ঘন ডাই যা স্টেইনের গতিপ্রকৃতি অবস্থান ইত্যাদি বুঝতে সাহায্য করে। কিন্তু এই ডাই ব্যবহার করলে রোগীর শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা হুহু করে বাড়তে থাকে। ফলে দফারফা হয় রোগীর কিডনির। রোগীর শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ১.৭ এর বেশি থাকলেই আর সার্জারির ঝুঁকি নেওয়া যায় না। এই সমস্যার মোকাবিলা করতেই আমরা আইভাস অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি নামক ব্যবস্থার শরণাপন্ন হয়েছি। এর ফলও পাচ্ছি হাতেনাতে।”
আইভাস অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এমন এক পরিষেবা, যার দ্বারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীও নির্বিঘ্নে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাতে পারবেন। সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রেও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বিপজ্জনক ভাবে বাড়বে না।
কিন্তু খরচ? এই ধরনের ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তের মাখাব্যথা তো হয়ে দাঁড়ায় খরচটাই। এ ক্ষেত্রেও আশ্বাস দিচ্ছেন শহরের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপবাবু। তিনি নিজে হাতে ৬টি সফল অস্ত্রোপচার করেছেন। দিলীপবাবুর দাবি, “প্রাথমিক খরচ ৩০-৪০ হাজার টাকা বাড়়লেও ডায়ালিসিসের মতো বড় খরচের সম্ভাবনা থেকে আপনাকে বাঁচাবে আইভাস।”
ইতিমধ্যেই শহরের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে শুরু হয়েছে জিকো কন্ট্রাস্ট অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। দিলীপবাবুদের বিশ্বাস, খুব শিগগির বহু মানুষ এই পরিষেবার ফল ভোগ করবে। তাঁর সঙ্গে একমত এই শহরের বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। যেমন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, উন্নত দেশগুলিতে বেশ কয়েক বছর আগেই কন্ট্রাস্ট মিডিয়া ব্যবহারের খারাপ দিকগুলি নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। ভারতে এই নিয়ে তুলনায় চর্চা কম। তার মূল কারণ হল খরচ। তবে বিকল্প না ভেবে উপায় নেই৷ অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এই ক্ষতিকারক আয়োডিন ব্যবহার হবে না।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তপোজ্যোতি বর্মন বললেন, “বহু ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির দিন কয়েকের মধ্যে রোগী নতুন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন। রোগীর পরিবারকেও বোঝানো মুশকিল হয়ে যায় যে আমাদের কোনও বিকল্প নেই। কলকাতায় ইন্ট্রাভাসকুলার আল্ট্রাসাউন্ড চালু করতে পারলে অনেক ঝক্কি এড়ানো যাবে। চিকিৎসকদের ঝুঁকিও কমবে।”