‘রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামলানো যেত’
রাখাইন প্রদেশে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমার সরকার আরও ভালোভাবে সামাল দিতে পারত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি।
১৩ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আসিয়ানের ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের এক আলোচনায় প্রশ্ন করা হলে সু চি এ মন্তব্য করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক আচারণের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রশংসিত হলেও বিশ্বব্যাপী সমালোচনায় বিদ্ধ হয় মিয়ানমার, বিশেষ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চি।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী হিসেবে পরিচিত সু চি বলেন, ‘কিছু উপায় অবশ্যই ছিল যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল।’
বিশ্বব্যপী সমালোচনা এবং চাপে থাকার পরও মিয়ানমারের এই স্টেট কাউন্সিলর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘রাখাইনের সকল পক্ষকেই সুরক্ষা দিতে হবে।’
মিয়ানমারের একটি আদালত ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে স্টেট সিক্রেটস অ্যাক্টস (রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন) লঙ্ঘনের দায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এই দুই সাংবাদিক মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহের সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন।
রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিকের প্রসঙ্গে সু চি বলেন, ‘তারা সাংবাদিক বলে তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় তাদের শাস্তি। তারা রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সংগ্রহ করেছিল। আমরা যদি সবাই আইনের প্রতি আস্থা রাখি তবে ওই রায়ের বিপক্ষে তাদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে। কেন এই রায় ভুল তার বিরুদ্ধে তাদের অবশ্যই প্রমাণ তুলে ধরতে হবে।’
গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ছয় লাখ ৭২ হাজার মানুষ পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে; যাদের ৯০ শতাংশই নারী-শিশু ও বৃদ্ধ।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে চার লাখ ৫০জন রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে; যার মধ্যে দুই লাখ ৭০ হাজারই নতুন। এসব শিশুর মধ্যে আবার অভিভাবকহীন ৩৬ হাজার ৩৭৩ শিশুও রয়েছে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। পালিয়ে আসা শিশু শরণার্থীদের বাইরেও প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ১০০ নবজাতক।
বর্বর ওই অভিযানে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচার গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।