Main Menu

রাজন হত্যার বিচার শুরু

+100%-

দুই মাস ১২ দিনের মাথায় শুরু হল শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার বিচার কাজ। মঙ্গলবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযুক্ত ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। টানা নয়টি তারিখে ৩৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এই মামলায় রায় ঘোষণা করা হবে।

বিচার কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি সৌদিতে আটক প্রধান অভিযুক্ত কামরুল ইসলামকে। অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালী ও নীতি নির্ধারণী মহল থেকে বারবার কামরুলকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ঘোষিত হয়েছিল টাইফ্রেইমও। আশ্বাস আর ঘোষণাতেই সীমাব্ধ থেকেছে তা। কামরুলের সাথে পলাতক রয়েছে তার ভাই শামীম আহমদ ও অপর আসামি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার পাভেল ইসলামও। তাদের পলাতক ধরেই বিচার কাজ শুরু হয়েছে।

সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট মফুর আলী জানান, মঙ্গলবার চার্জ গঠনের শুনানি চলাকালে পলাতকরা ছাড়া চার্জশিটভূক্ত সকল আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে আদালত আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন করেন।

পিপি মফুর আলী জানান, মামলার পরবর্তী ৯টি তারিখে লাগাতার স্বাক্ষ্য গ্রহনের আদেশ দেন বিচারক। ১, ৪, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ অক্টেবর যথাক্রমে এই মামলার ৩৮ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, আসামী শামিম, মুহিত, ময়না ও তাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যার পর শিশু রাজনের লাশ গুম করার চেষ্টার অপরাধে পৃথক ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধার আদালতে স্থানান্তর করেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেদুল করিম। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর ওই আদালতে মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হচ্ছে, জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালিকের ছেলে কামরুল ইসলামের সহোদর মুহিত আলম (৩২), বড় ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), জালালাবাদ থানার পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া (২০), একই এলাকার দুলাল আহমদ (৩০), আয়াজ আলী (৪৫), তাজ উদ্দিন বাদল (২৮), ফিরোজ মিয়া (৫০), আছমত আলী (৪২) ও রুহুল আমিন (২৫)। তাজ উদ্দিন বাদল ও রুহুল আমিন ছাড়া বাকি ৮ জন এ ঘটনায় আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। কারান্তরীন মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগম ও শ্যালক ইসমাইল হোসেন আবুলসের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় চার্জশীট থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২৪ আগস্ট চার্জশিট আমলে নিয়ে পলাতকদের মালামাল বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন। ২৫ আগস্ট পলাতক কামরুল ও শামীমের মালামাল ক্রোক করে নগরীর জালালাবাদ থানা পুলিশ। তবে দিরাইয়ে পাভেলের বাড়িতে বাজেয়াপ্ত করার মত তার কোনো মালামাল ছিল না বলে জানায় পুলিশ। ৩১ আগস্ট কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ ও পাভেলকে পলাতক দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৮ জুলাই ভোরে ‘চোর’ সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের শিশু রাজনকে। রাজন সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের বাদেয়ালি গ্রামের শেখ আজিজুর আলমের বড় ছেলে। নির্যাতনকারীরাই শিশুটিকে পেটানোর ভিডিও ধারণ করে এবং তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। নিন্দা-সমালোচনা ও তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। তারপরই একেএকে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।






Shares