সরাইলে নির্মাণ কাজ চলাকালেই স্কুল ভবনে ফাঁটল::শ্রেণী কক্ষের অভাবে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ সরাইলের পানিশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে চরম অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কোন রকমে দায় সারছেন ঠিকাদার। নয় মাসের কাজ ৩০ মাসেও শেষ করতে পারছেন না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সাড়ে নয় শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যদের কোন অভিযোগ আমলেই নিচ্ছেন না ঠিকাদার। নির্মাণ কাজ চলাকালেই ভবনের বেশ কয়েক জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাঁটল ।
তড়িগড়ি করে সিমেন্ট দিয়ে দিচ্ছেন সান্তনার লেপপোছ। ঠিকাদার বলছেন তবে কাজের মান নিম্নমান এটা মিথ্যা। নানা প্রতিকূলতার কারনে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। শিক্ষকদের ব্যবহার সন্তোষজনক নয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত বিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৮৭। কক্ষের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে গিজাগিজি করে চলছে পাঠদান। অনেক চেষ্টা ও তদবিরের ফলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ১টি নতুন ভবনের অনুমোদন পায়। যেখানে পাঠদানের পাশাপাশি সেমিনারের কাজও চলবে। কাজের ব্যয় ধরা হয় ৬২ লাখ ৫১ হাজার ৮৭ টাকা। কাজটি পান জেলা শহরের কালাইশ্রী পাড়ার মেসার্স সুপার কন্সট্রাকশন নামের ঠিকাদারি ফার্ম। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ফেব্রুয়ারী। সময় ২৭০ জন শিক্ষার্থী এক কক্ষে অত্যন্ত কষ্টে ক্লাশ করছে। ঠিকাদার চার তলা ফাউন্ডেশন ভবনের কাজ শুরু করেন। দুইদিন করলে তিনদিন বন্ধ থাকে কাজ। কাজে ব্যবহার করছেন নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। দরজা জানালার মাপ ও মালামালে করেন হেরফের। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যরা নিয়মিত যেনতেন কাজের অভিযোগ করলেও ঠিকাদার তাদের কোন পাত্তাই দেননি। তার ইচ্ছেমতই চালিয়ে যাচ্ছেন কাজ। হঠাৎ ভবনের ৩-৪ জায়গায় বাহিরে ভিতরে দেখা দেয় ফাঁটল। দ্রুত কোন রকমে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ফাঁটল ঢাকার চেষ্টা করেন। ছাদের কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। বৃষ্টি হলেই লেগে যায় পানি। ফলে ছাদটি অচিরেই ডেম্প হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কাজের ধীরগতি ও মান নিয়ে স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা পরিষদ এবং শিক্ষার্থীরা হতাশ। শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ আবদুল মোমিন ক্ষোভের সাথে বলেন, এত নিম্নমানের কাজ মেনে নেওয়া যায় না। কাজের শুরু থেকেই বিদ্যালয়ের বিদ্যুত ব্যবহার করছেন ঠিকাদার। ৪০ হাজার টাকা বিল এসেছে। একটি টাকাও দেননি তারা। প্রধান শিক্ষক লীল মোহন সূত্রধর বলেন, ঠিকাদার মনগড়া মত কাজ করে চলেছেন। শুরু থেকে নিম্নমানের কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছি। কর্তৃপক্ষ তাকে শোকজ ও করেছে। তিনি কিছুই আমলে নেননি। কাজের দীর্ঘ সূত্রিতার কারনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ধ্বংসের পথে। গত দুটি জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়েছে শুধু শ্রেণী কক্ষের অভাবে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য মোঃ ধন মিয়া, মোঃ আরজু মিয়া ও হাজী আঙ্গুর মিয়া বলেন, শুরু থেকেই একদম বাজে কাজ হচ্ছে।
কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় মারামারিও হয়েছে। ঠিকাদার নিজেই নাকি সরকার। তিনি কারো কথা শুনেন না। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান বলেন, শুরু থেকেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারনেই ভবনে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। আমি ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ঠ প্রকৌশলীকে অনেক তাগিদ দিয়েছি। তারা আমার কোন কথাই শুনেনি। এক সময় তারা কাজটি বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। ঠিকাদার মোঃ হুমায়ুন মিয়া সম্প্রতি কিছু মিঠা ইট নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কাজের মান ও নির্মাণ সামগ্রী বিষয়ের অভিযোগ মিথ্যা। দুইবার দরপত্র আহবান করায় সময় লেগেছে। এ ছাড়া ২০১৩ ও ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র দশ ভাগ বিল পেয়েছি। কাজ পেতে কুমিল্লা অফিসে এক/দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শুরু থেকেই অসহযোগীতা করে আসছেন। আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে কাজটি হ্যান্ড অভার করব।
তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি নিশ্চিত কিউরিং বা মশলায় ভেজালের কারনে দেওয়াল ফেঁটে গেছে। ফাঁটা ব্লকটি ভেঙ্গে পুনরায় করার নির্দেশ দিয়েছি। আমি লিখিত ভাবে সতর্ক করেছি। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে। সকলের সহযোগীতার কারনে শতভাগ অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে পারেনি। তবে ঘনঘন মিস্ত্রি ও লেবার পরিবর্তন করেছেন ঠিকাদার। কিছুদিনের মধ্যে কাজটি শেষ করে দিব।