মানুষ মানুষের জন্য:: সততার অনন্য দৃষ্টান্ত
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকে ॥ ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইলে মানসিক ভারসাম্যহীন নিখোজ অন্তর ( শিউলী রানী সরকার) কে পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়। এবং অত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে একটি সেলাই মেশীন দেয়াও হয়। গত কাল বিকালে উপজেলা মিলনায়তনে এ অনুষ্টানের আযোজন করা হয়। সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ হোসেন মাক্কি এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি অন্তর (শিউলী রানী সরকার), সভায় বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি, চান্দুরার চেয়ারম্যন শামীমুল হক, ঠাকুর মেজবাহ উদ্দিন ঠাকুর মিজান, সিদ্দিকুর রহমান, জেলা জাতিয় পাটির সহসভাপতি রহমত হোসেন, সরাইল ডিগ্রি কলেজের অধক্ষ্য মৃধা আহমেদুল কামাল, ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি আল আমিন শাহিন, যুবলীগ নেতা মাফুজ আলী, পরগনার পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ কামরুজ্জামান ইউছুফ । সেই পর্যটক জনাব শামীম আহমেদও অশ্র“জলে সিক্ত হলেন।
বাবার মর্যাদায় শামীম আহমেদের নেতৃত্বে তারই দেয়া নাম “অন্তর” কে (শিউলী রানী সরকার) স্বামী, সন্তান ও পরিজনের কাছে তুলে দেওয়া হচ্ছে আজকের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। পর্যটক বন্ধুরা মিলে তাদের অন্তরকে একটি সেলাই মেশিন, সোনার নাকফুল, নগদ টাকা, জামা কাপড় ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিয়ে তার বাবার বাড়ি দাউরিয়া গ্রামে পৌছিয়ে দেবেন। ব্যতিক্রমধর্মী ও মানবিক আবেদনময়ী এ অনুষ্ঠানটির স্বার্থকতা কালের কপোলতলে কখনো হারিয়ে যাবে না, রয়ে যাবে চিরদিন।
ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদ গত বছর ২৫ নভেম্বরে ১৪ জন বন্ধুদের সাথে বান্দরবন জেলার থানচিতে অদূরে গাছের নিচে একটি মেয়েকে অসহায় অবস্থায় দেখে। শামীম আহমেদ জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান। বর্তমানে পারিবারিকভাবে তিনি ঢাকায় বসবাস করছেন। ঢাকাস্থ যমুনা ব্যাংক এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কর্মজীবন অতিবাহিত করছেন। শামীম আহমেদ টাকা দিতে চাইলেও নিতে রাজি হলনা মেয়েটি। কিছু খাবার কিনে দেওয়ার পর মেয়েটি হাত বাড়াল। খাবারটি তুলে দিতে পেরে খুশি হল সেই পর্যটক।
তিার গায়ে একটি ছেঁড়া কম্বল ছাড়া আর কোন কাপড় নেই। দ্রুত কাপড়ের ব্যবস্থা করে স্থানীয় এক মহিলার মাধ্যমে পরানো হল তাকে। বান্দরবান জেলার থানচিতে এভাবেই ধরা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটি। বেড়াতে যাওয়া সহকর্মী বন্ধুদের সাথে সেই পর্যটক আবার থানচি থেকে ঘুরে চলে আসলেন ঢাকায়। কিন্তু মনটা তার পড়ে থাকল থানচির । বন্ধুরা ঠিক করল, মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে আসতে হবে। যে কথা সে কাজ। মেয়েটির খোঁজে গত ৫ই মার্চ ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে অবরোধ চলাকালীন সময়ে আবার একদিন বান্দরবনের থানচিতে গিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। ঢাকায় এনে ৭ই মার্চ শেরেবাংলা নগর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটে ডাঃ প্রফেসর মোঃ তাজুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা করা হল। একজন মহিলাকে বেতন দিয়ে তার সেবার কাজে নিয়োগ করা হল। এক মাস আট দিন চিকিৎসার পর গত ১৫ই এপ্রিল ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে গ্রামীণ এক পরিবেশে তার পরিচর্যা চলতে লাগল। মানসিক প্রশান্তি আনয়ন ও অতীতের স্মরণশক্তির পুনর্জাগরণে গ্রামীণ পরিবেশটি তাকে অনেক সহায়তা করেছে। মেয়েটির মুখ থেকে হঠাৎ দুটি শব্দ বের হলো-চান্দুরা ডাকবাংলা। দুটি শব্দের পেছনে কাজ শুরু করলো বন্ধুরা। ফেসবুকেও যোগাযোগ চললো। চান্দুরার চেয়ারম্যান শামীমুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। গত ২৯ এপ্রিল মেয়েটির ছবি দিয়ে পোষ্টার করে বন্ধুরা মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পোষ্টারিং করে চলে আসল ঢাকায়। ক’দিন পর মেয়েটির মুখে আবার ক’টি নাম উচ্চারিত হলো-সাগর, হৃদয়, লিপি। ঢাকা থেকে পুনরায় যোগাযোগ করা হল চান্দুরার চেয়ারম্যানের সঙ্গে। সাগর, হৃদয়, লিপির খোঁজ করে গত ৫ মে হারানো সেই মেয়েটির ঠিকানা চেয়ারম্যান সাহেব বলে দিল শামীম আহমেদকে। মেয়েটির বাবা শাহজাদাপুর ইউয়িনের দাউরিয়া গ্রামের সতীষ সরকার। হিন্দু পরিবারের এই মেয়েটির নাম শিউলী রানী সরকার। সে সাগর, হৃদয়, লিপি নামের তিন সন্তানের জননী। স্বামী ফালান সরকারের বাড়ী শাহজাদাপুর গ্রামেই। অতঃপর বাড়ীর লোকজনদের খবর দেয়া হল ঢাকায় যেতে। গত ২৬ মে আত্মীয় স্বজনরা শ্যামলী আদাবরে গিয়ে যাযাবরী জীবন শেষে সুস্থ পরিবেশে ফিরে পেল পাঁচ বছর আগে হারানো তাদের শিউলি রানি সরকার-কে, ফালান সরকারও খুঁজে পেল তার জীবন সঙ্গিনীকে, সাগর, হৃদয়, লিপিরা তাদের মায়ের বুকে মাথা রেখে শাড়ীর আঁচলে চোখের পানি মুছলো। আনন্দের এ ঝিলিক দেখে বাবাতুল্য সেই পর্যটক জনাব শামীম আহমেদও অশ্র“জলে সিক্ত হলেন। ামী, সন্তান ও পরিজনের কাছে তুলে দেওয়া হচ্ছে আজকের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। পর্যটক বন্ধুরা মিলে তাদের অন্তরকে একটি সেলাই মেশিন, সোনার নাকফুল, নগদ টাকা, জামা কাপড় ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিয়ে তার বাবার বাড়ি দাউরিয়া গ্রামে পৌছিয়ে দেবেন। ব্যতিক্রমধর্মী ও মানবিক আবেদনময়ী ।