অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে ফারাবীর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে: র্যাব
ডেস্ক ২৪:: ঢাকায় একুশের বইমেলা সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার তিনদিন পর সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
তার নাম শফিউর রহমান ফারাবী।
র্যাব মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বিবিসিকে জানিয়েছেন ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাস টার্মিনাল থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।
এখন র্যাবের হেফাজতেই তাকে রাখা হয়েছে।
দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ফারাবীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পেয়েছে।
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী দাবি করেছেন ব্লগে লেখালেখির সূত্রে অভিজিৎ রায়ের লেখার সঙ্গে তিনি পরিচিত হন। পরে লেখালেখি নিয়েই অভিজিতের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়”।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় “অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ফারাবীর সম্পৃক্ততার নানা তথ্য প্রমাণ তারা পেয়েছে। অভিজিৎ ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন তথ্য ফারাবী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতেন এবং তাঁকে হত্যার জন্য উস্কানি দিতেন”।
সেখানে মি. মাহমুদ খান জানান, “ফারাবী ব্লগে উগ্র মতবাদ প্রচার করতো এবং ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলে তাকে হত্যা সহ নানা ধরণের হুমকি দিতো সে”।
তিনি জানান, “অভিজিৎ রায়ের বিষয়েও এ ধরণের মন্তব্য ফারাবী করেছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে”।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উল্টো দিকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন সড়কে সন্ত্রাসীরা মি. রায় এবং তার স্ত্রীর উপর হামলা করে।
এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় দুজনকে।
হাসপাতালে নেবার কিছুক্ষণ পর মারা যান মি. রায়।
পরে মি. রায়ের বাবা শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
অভিজিৎ হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি।
মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী মি. রায়’কে তার লেখালেখি ঘিরে হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা।
এর মধ্যেই গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশে ফেরেন।
মি. রায় হত্যার পর থেকেই মি, ফারাবীর কিছু ফেসবুক পোস্ট গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটগুলোতে আলোচনায় আসে যেখানে অভিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে নানা ধরণের মন্তব্য ছিল।
তবে পুলিশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন মন্তব্য করেনি।
রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে চেয়েছে এবং সরকার তাদের প্রস্তাব ইতিবাচক ভাবেই গ্রহণ করেছে।
কে এই ফারাবী :
ব্রাক্ষ্মবাড়ীয়া জেলার সদর থানাধীন বড়ভিলা কুমারশীল মোড় কালাইশ্রী পাড়া গ্রামের মৃত ফেরদৌসুর রহমানের ছেলে শফিউর রহমান ফারাবী। বয়স আনুমানিক ২৯ বছর। ১৯৮৬ সালে জন্ম। ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক স্তর শেষে ২০০১ সালে এসএসসি ও ২০০৫ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫-২০০৬ সেশনে পদার্থ বিজ্ঞানে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়ন করছে।
র্যাবরে দাবি ফারাবী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত। ২০১০ সালে বিভিন্ন নাশকতা ও ভাঙচুরের মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এক মাস পর তিনি জামিনে মুক্ত হন।
মুফতি মাহমুদ বলেন, গত ৩/৪ বছর যাবৎ ব্লগার হিসেবে বিভিন্ন ব্লগে ইসলামিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে লেখালেখি করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ফারাবী। তার লেখায় ‘কথিত নাস্তিক ব্লগারদের’ বিভিন্ন ব্লগের বিরোধিতার কথাও থাকত।’
বিভিন্ন ছদ্মনামের ব্লগারদের সঙ্গে তার মতোবিরোধ ছিল উল্লেখ করে র্যাবরে মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, ‘থাবা বাবা (ব্লগার রাজীব), আসিফ মহিউদ্দিন, অভিজিত রায়, তসলিমা নাসরিন, দাড়ি-পাল্লা ধমাধম, দিগম্বর-পয়গম্বর, সানতুনু মহাপাত্র, অগ্নিবীন, আল্লামা শয়তান (মশিউর রহমান), সানতুনু আদিম, প্যানগান দেবতা এবং হিন্দু যোদ্ধা নামক ব্লগারদের সাথে ধর্ম নিয়ে তার মত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। এদের সঙ্গে প্রায়ই তিনি ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জড়িয়ে পড়তেন।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থাবা বাবা ব্লগের ব্লগার রাজিব হায়দার মিরপুরে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়। তিন খুন হওয়ার আগে রাজীব হায়দারের সঙ্গে ফারাবীর বিভিন্ন ব্লগে কড়া বিতর্ক হয়। নিহত রাজীবের জানাজায় ইমামমতী করায় ওই এমামকে হুমকি দেয় ফারাবী। এসময় তিনি গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সে পুনরায় বেরিয়ে আসেন।’
র্যাবের গণমাধ্যম কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘অভিজিত রায়ের ইসলামের বিরোধী লেখালেখি ৪/৫ বছর পূর্বে ফেইসবুকের মাধ্যমে ফারাবী দেখতে পায়। এরপর থেকেই সে অভিজিতের লেখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা মন্তব্য লিখত।