খাগড়াছড়িতে পুলিশে আটক ছেলে, হাতকড়া হাতে মাকে ভালবাসার শেষ পরশ
পুলিশের উপস্থিতিতে হাতকড়া পড়া অবস্থায় মা’কে শেষ পরশ ও বিদায় জানালেন পাহাড়ী ছাত্রনেতা বিপুল চাকমা।
বিপুল চাকমা ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। গত রোববার সকালে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাতে পানছড়ি থেকে গাড়ি যোগে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন তিনি। সেসময় পানছড়ির থানার সামনে গাড়ি থামিয়ে অসুস্থ মায়ের সামনে পুলিশ তাকে আটক করে। এতে তার মা আরও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আর চট্টগ্রাম নেওয়া হয়নি। চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রোববার রাত পৌনে তিনটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
সহকর্মীর মা’য়ের মৃত্যুতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ইউপিডিএফের সমর্থক মাইকেল চাকমা।
তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: ‘উর্দি পরা পুলিশ ও বিজিবি’র সশস্ত্র প্রহরা, পায়ে বিরাট ডান্ডাবেরি, হাতে লাগানো হাতকড়া আর তাতে বাঁধা লম্বা মোটা রশি, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, এভাবেই পুত্র গেলেন তাঁর প্রায়ত জম্মধাত্রী মমতাময়ী মায়ের শেষ দর্শন করতে। পুত্র যখন বাড়িতে পৌঁছলেন তখন বাড়ির সামনে মায়ের নিথর দেহটি শুয়ে ছিল কফিনে। ক্রোধে শক্ত হয়ে গিয়েছিল তাঁর সমস্ত শরীর। স্নেহভরা মূখখানায় হাতের উঞ্চতা ছুঁয়ে দিয়ে পুত্র মায়ের প্রতি শেষ ভালোবাসার পরশ ভূলিয়ে দিলেন। এরপর সে এক গভীর কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার দৃষ্টিতে ক’ফোটা চোখের জল ফেলে নীরবে তাকিয়ে রইলেন মায়ের প্রতি।’
‘শ্মশানে নেয়া হলো মা’কে। হাজারো শোকাতুর ক্রুদ্ধ জনতা এগিয়ে চলল শবদেহ বহনকারীদের অনুস্মরণ করে। আগেই প্রস্তুত ছিল চিতা। চির নিদ্রায় শায়িত মা’কে তোলা হলো সেখানে। পু্ত্রের হাতে জ্বলে উঠলো মশাল। অগ্নি সংযোগ করলেন চিতায়। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলো আগুনের উত্তাপ। কুন্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উঠতে লাগলো আকাশ ভেদ করে। আগুনের উত্তাপ আর ধোঁয়ার কুন্ডলীর সাথে অনন্ত নীল আকাশে অদৃশ্য হতে লাগলেন মা। এই পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে ছাই ও ধোঁয়া হয়ে বিলীন হয়ে গেলেন তিনি। পুত্র ফিরলেন কারাগারের অন্ধকার প্রকৌষ্ঠে। বিচ্ছেদের মাঝেও এ এক অমানবিক ও নিষ্ঠুর বিচ্ছেদ। এভাবেই ঘটে গেলো এক মা ও তাঁর রাজবন্দি পুত্রের মহা বিচ্ছেদ, রচিত হলো এক অনবদ্য ইতিহাস।’
‘এই করুণ ও মর্মান্তিক মা-ছেলের বিচ্ছেদের ইতিহাস একদিন উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী শাসকগোষ্ঠীর কাল হয়ে দাঁড়াবে। এই ইতিহাস শত হাজার ক্রুদ্ধ ও প্রতিবাদী বিপুলের জম্ম দেবে। মামলা-হামলা, দমন-পীড়ন, জেল-জুলুমের মতো বর্বর রাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমে একটি জেগে ওঠা জাতিকে দমিয়ে রাখা যায় না। ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশরা পারেনি, ভিয়েতনামে ফরাসি ও আমেরিকানরা পারেনি, তৎকালীন পাঞ্জাবি শাসকরা পারেনি। কালের পরীক্ষায় সে নীতি বারবার ভূল প্রমাণিত হয়েছে। অতএব উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী শাসকরাও পরাজিত হবে, পরাজিত হতে বাধ্য।’