কসবা সালদা গ্যাস থেকে বঞ্চিত যেন নিজ গৃহে পরবাসী
খ.ম.হারুনুর রশীদ ঢালী : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বনামধন্য ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জনপদ কসবার সাধারণ মানুষ অনেকবারই বঞ্চিত,প্রতারিত ও উপেক্ষিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার ও কর্তা ব্যক্তিরা বহু বহু সুন্দর আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন।বাস্তবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিটি সরকার এ অঞ্চলের সম্পদ অন্য অঞ্চলে নিয়ে অনুন্নত অঞ্চলকে উন্নত করছে। মিল,কারখানা স্থাপন করছে।সর্বোপরি এ অঞ্চলের গ্যাস সারা দেশেই ব্যবহার হচ্ছে। কিন্ত কসবার মানুষ এখন এর ব্যবহার থেকে বঞ্চিত। কসবা সর্বদলীয় ভাবে আন্দোলন হয়েছে। “কসবার গ্যাস কসবা চাই-আর না হলে রক্ষা নাই”। এই রকম শত শত শ্লোগানে আকাশ বাতাস ধবনিত হয়েছে।অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কসবাবাসী নিজগৃহে পরবাসী হয়ে আছে।আর এর ফলে কসবার মানুষের মাঝে আজও ক্ষোভের অন্ত নেই। সালদা গ্যাস ফিল্ড কসবায় অবস্থিত।এখানে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেছে। আবার নতুন কুপে সন্ধান পাওয়া গেছে। এত গ্যাস পাওয়ার পরও কসবা বাসীর প্রত্যেকের ঘরে জ্বলছে কাঠের চুলা। ফলে জ্বালানী সস্কট মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমসীম খাচ্ছেন গৃহীনীরা। তাই চড়া দামে একাধিক কোম্পানীর বাজারজাত বোতল গ্যাস ১৬শত টাকা দিয়ে ক্রয় করে রান্নার কাজ শেষ করতে হচ্ছে। প্রতিটি সরকারের আমলে সরকার ও কর্তা ব্যক্তিরা প্রতিটি ঘওে গ্যাস সরবরাহের কথা ও আশ্বাস দিলেও আজও তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি।নানান অজুহাত তুলে বাহানা দেখিয়ে অর্থ ও বাজেট সস্কটের কথা বলে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে কসবা-আখাউড়াবাসীর ন্যায্য অধিকার থেকে।আবার গ্যাসের সন্ধান লাভের পর গ্যাস ক্ষেত্র স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের নামেও স্থানীয় ভূমি মালিকদেও সাথে প্রতারিত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।জমি অধিগ্রহণ করে লোকজনকে ক্ষতিগ্রস্থ ও ঠকানো হয়। এর পরও কসবাবাসীকে গ্যাস সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।বাংলা প্রবাদে আছে“ ভালো সমালোচনা চাটুকারিতার চেয়ে মঙ্গলজনক”।আর সমালোচনা করা এটা প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।বিগত ২৪জুন ১৯৯২ইং বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সালদানদী গ্যাস ফিল্ড সংলগ্ন কুল্লা পাথর শহীদ মিনার চত্বরে ও কুটি জাজিয়ারা দুইটি বিশাল জনসমাবেশে ওয়াদা করেছিলেন কসবায় গ্যাস সরবরাহ করার যথাযথ ব্যবস্থা করার এবং তৎকালীন জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত মন্ত্রী তথকালীন প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা বাস্তবায়নের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ওয়াদা ছিল।কিন্ত বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলেও সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন হয়নি। একই ভাবে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্লেখ্য যে,কসবা-আখাউড়া থানাদ্বয় সমগ্র এলাকায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্রয়োজনে গ্যাস সরবরাহ করা সম্পর্কে মহান জাতীয় সংসদে গত ০৪-০২-১৯৯২ইং হতে ১৬-০২-১৯৯৩ইং এবং ০৬-০৭-১৯৯৪ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে জরুরী জনগুরুত্ব সম্পন্ন বিষয় সর্ম্পকে কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ নং ধারা অনুযায়ী তৎকালীন জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রদও নোটিশের জবাবে কসবা-আখাউড়া থানায় গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস প্রদান করেছিলেন।তার সুবাদে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্টিবিউশন কোং লিঃ এর তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক(পরিঃও উন্নয়ন),ব্যবস্থাপক(পরিকল্পনা)বিগত ২৩-১০-১৯৯২ ইং কসবা-আখাউড়া এলাকাটি পরিদর্শন করে।পরিদর্শনকারীগণ উক্ত এলাকাদ্বয় গ্যাস সরবরাহের উৎস,সামগ্রিক অবস্থা,গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় অন্যান্য বিষয়ে বিগত ২৯-১১-১৯৯২ ইং প্রস্তুতকৃত সরেজমিনে প্রতিবেদনটি ১৭-১২-১৯৯২ইং সচিব,বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ঘণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সচিবালয় বরাবর সূত্র নং-৪৩-০৪-০২/৫২০ এর মাধ্যমে পেশ করেছিলেন।দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর এভাবে বার বার জনতার দাবী এবং সরকারের প্রধান মন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ হতে বসেছে।আর কসবা-আখাউড়াবাসী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।গ্যাস আন্দোলনকারীরা দুঃখ করে বলেন আন্দোলন করেই গেলাম কিন্ত কেউ কথা দিয়ে কথা রাখে নাই ।যখন কোনো রাজনৈতিক কোনো ইসু থাকেনা তখনই সময় কাটানো বা জনগণকে কে দেখানোর জন্য একটি আন্দোলনের ডাক দেয়।কোনো না ভাবে স্বার্থ হয়ে গেলেই তখনিই স্বার্থবাজরা চুপ চাপ নিরব ভূমিকা পালনের অনেক ইতিহাস জানা আছে বলে সচেতনমহল জানান। কসবা উপজেলায় গ্যাস সংযোগ বাস্তবায়ন পরিষদ বৃহস্পতিবার ৬ জুন আবারো গ্যাসের দাবীতে আন্দোলন করার সিন্ধান্ত নেয়। সকাল ১০টায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে।বিগত দিনের কঠিন আন্দোলনের মুখে সংশ্লীষ্ট মন্দ্রণালয় প্রতিশ্র“তি করেছিল কিন্ত আন্দোলনকারীদের এক রহস্যজনক ভূমিকা পালনের ফলে মাঝ পথে এসে থেমে যায় সকল আন্দোলন। এবং আবারো এই আন্দোলন মাঝ পথে এসে কোনো না ভাবেই থেমে যায় কি না কসবা উপজেলার সচেতনমহলের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। “সালদার গ্যাস কসবা চাই,কসবার গ্যাস কসবা চাই ”এই ধরণের বহু শ্লোগান আর সর্বদলীয়ভাবে যে গ্যাস আন্দোলন মানুষের মাঝে টনক নড়েছিল।গ্যাস আন্দোলনের কতিপয় নেতাদের ৫২/৫৩ খেলার ফলে আন্দোলনের মাঠ থেকে মুখ ফিরে নিতে বাধ্য হতে হয়েছে বলে আন্দোলনের কতিপয় নেতারা কসবা উপজেলা প্রেসক্লাব সাংবাদিকদেরকে জানান। কসবা উপজেলা বাসী বার বার আন্দোলন করে কোন না কোন ভাবেই মাঝ পথে এস থেমে যায়।আবার এই সর্বশেষ আন্দোলনটি মাঝ পথে এসে আবার থেমে যাবেনা বলে আন্দোলনের সদস্য সচিব মনিরুল হক সহ আরো অনেকে জানান। এই কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য কসবার সালদা গ্যাস থেকে কসবার মানুষ বঞ্চিত যেন নিজ গৃহে পরবাসী। |
« সরাইলে দেওয়ান মাহবুব আলীর ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত (পূর্বের সংবাদ)
(পরের সংবাদ) সরাইল গ্যাসের দাবীতে ঢাকা-সিলেট, কুমিলা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ »