আখাউড়ায় লকডাউন ভেস্তে দিয়ে ইউএনও নৌ ভ্রমণে!
লকডাউন বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ে প্রধান ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও)। তবে ব্যতিক্রম নজির সৃষ্টি করলেন আখাউড়ার ইউএনও। লকডাউন ভেস্তে দিয়ে পরিবারের সদস্য ও কয়েকজন জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দঘন নৌ ভ্রমণ করেছেন। আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূইয়া, ইউপি সদস্য কুতুব উদ্দিনসহ ৩০/৩৫জন এতে অংশ নেয়। উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূইয়া তার ফেসবুক আইডি থেকে নৌকা ভ্রমনের দৃশ্য লাইভ প্রচার করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকার ছাউনিতে বসা চেয়ারম্যান সহ বেশির ভাগ লোকজনের মুখে মাস্ক ছিল না। এতে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে আখাউড়ায় তীব্র সমালোচনাও শুরু হয়েছে।
চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূইয়া বলছেন প্রজেক্ট দেখতে ইউএনও নৌকা নিয়ে বের হন। ইউএনও সাংবাদিকদের প্রশ্নে বেশ চটলেও চেয়াম্যানের সুরে সুর মিলিয়ে পরিবার নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরের পর ইউএনও’র সরকারি গাড়ি ও একটি প্রাইভেটকারে করে কয়েকজন আজমপুরের খেয়াঘাট এলাকায় যান। পরে ইউএনও রুমানা আক্তারসহ তাঁর পরিবারের লোকজন ও উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া স্বপনের পরিবারের লোকজন একটি নৌকায় করে ভ্রমণে যান।
নৌকার একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, শিশুসহ অন্তত ১৫ জন এর ছাউনীতে বসে আছেন। তারা একে অপরের সঙ্গে গল্পে মশগুল। একজন নৌকা থেকেই পানিসহ সবার বসে থাকার দৃশ্য ধারণ করছেন। নৌকাটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্যও ধারণ করেন স্থানীয় লোকজন।
এদিকে নৌকায় উঠার সময় ইউএনও’র সরকারি গাড়িসহ দু’টি গাড়ি সড়কে রাখা হয়। এতে করে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আজমপুরের কাজী শরীফ নামে এক যুবক মোটর সাইকেল নিয়ে যেতে পারছিলেন না বলে গাড়ি সরাতে অনুরোধ করেন।
একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ওই যুবক বলছেন যে তিনি মোটর সাইকেল নিয়ে যাওয়া পথের রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থাকায় যেতে পারছিলেন না। সড়কের মাঝে রেখে দেয়া গাড়ি সরানোর কথা বললে উল্টো আরো হুমকি দেয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ইউএনও’র গাড়ি রাস্তায় থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যেতে পারবেন না বলেও জানানো হয়।
উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) কাজী ইউসুফ বলেন, ‘ইউএনও’র গাড়ি রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা নিয়ে আমার ভাতিজা ও এলাকার ছেলেদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের তর্কাতর্কি হয় বলে শুনেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রজেক্টের কাজে কি-না জানি না মনে হয় চেয়ারম্যান দাওয়াত করেছিলেন।
উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া স্বপন বলেন, ‘আমাদের এলাকার খেয়া ঘাটে ইরিগেশন প্রকল্প দেখতে এসেছিলেন ইউএনও। পরে এখানে একটি বিনোদন স্পট করা যায় কি-না সেটি দেখানোর জন্য ইউএনওকে নিয়ে যাওয়া যায়। পরে অনতিদূরেই থাকা বিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যানের একটি মাছের প্রজেক্ট দেখতে নৌকায় উঠা হয়। আমি বলেছিলাম যে ওই প্রজেক্ট দেখে এলে আমাদের এখানেও একটি প্রজেক্ট করা যাবে।’
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আক্তার বলেন, ‘জাইকার একটা প্রজেক্ট দেখতে আমি সেখানে যাই। যেহেতু আমার পরিবারের লোকজন ঈদ উপলক্ষে আমার এখানে ছিলেন সেহেতু তাদেরকে নিয়ে গেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একজন ইউএনও’র গাড়ি কি রাস্তায় রাখা যাবে না। আমার তো একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। আমি তাদেরকে সময় দিতে পারছিনা বলে নিয়ে গেছি। এটা নিয়ে নিউজ করার মতো কি আছে।’