Main Menu

আখাউড়ায় ভাঙচুরের ঘটনা সাংবাদিকদের না জানাতে মুচলেকা নিল পুলিশ!

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে এক প্রবাসীর বাড়ির পাকা সীমানা প্রচীর ও টিনের বেড়া ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো থানা বা আদালতে কিংবা সাংবাদিকদের কাছে কোনো অভিযোগ করা যাবেনা মর্মে মুচলেকা নিয়েছে পুলিশ। উপায় না পেয়ে এমন মুচলেকা দেওয়ার পর থেকেই ভয়ে তটস্থ ইকবাল হোসেন বেলাল নামে ওই প্রবাসী। ঈদের আগেরদিনের এ ঘটনায় ঈদের আনন্দও মাটি হয়েছে তারা পরিবারের।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলা সদরের রাধানগর এলাকার মৃত আবু ছায়েদের ছেলে ইকবাল হোসেন বেলাল দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী। বর্তমানে ছুটিতে তিনি দেশে অবস্থান করছেন। বেলালের সঙ্গে জায়গা নিয়ে প্রতিবেশী মৃত রাখাল চন্দ্র বণিকের ছেলে শিপন চন্দ্র বণিকের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ বিরোধের জেরে গত ২ মে ভোরে শিপন ও তার সহযোগীরা বেলালের বাড়ির পাকা সীমানা প্রাচীর ও টিনের বেড়া ভেঙে জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে।

পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯- এ ফোন করে ঘটনা জানানো হলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে শিপন বণিকসহ ৫ জনকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ধৃতদের সনাক্ত করার কথা বলে বেলালকে থানায় ডাকা হয়। পরে বেলালসহ ৩জন থানায় গেলে তাদেরকেও আটক করে আদালতে চালান করে দেওয়ার ভয় দেখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সরকার।

পরবর্তীতে জায়গা নিয়ে চলমান বিরোধ স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক করে মিমাংসা করা হবে এবং সালিশের আগপর্যন্ত আর কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত না হওয়ায় এবং ভাঙচুরের ঘটনায় থানা বা আদালত অথবা মিডিয়া ও কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ না করার শর্তে মুচলেকা নিয়ে উভয় পক্ষকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মুচলেকার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ইকবাল হোসেন বেলাল বলেন, শিপন জোর করে আমার বাড়ির জায়গা দখলে নিতে চায়। ওইদিন (২ মে) ভোরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলবলসহ আমার বাড়িতে এসে হামলা করে সে। আমার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে বাড়ির উঠানে ঘর তৈরির চেষ্টা করে। থানায় জানানোর পরও শিপনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। আমাদেরকে ভোর ৫টায় থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে আটক করা হয়। এরপর বলা হয় দুইপক্ষকে আদালতে চালান করবে। পরবর্তীতে আমাদের দুই পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে দুপুর ৩টার দিকে আমাদের ছাড়া হয়।

শিপন চন্দ্র বণিক বলেন, কোনো পক্ষই সালিশের সিদ্ধান্তের বাইরে থানায়, আদালত, মিডিয়া বা অন্য কোনো সংস্থায় অভিযোগ করতে পারবেনা মর্মে মুচলেকা নেওয়া হয়। এ সময় ওসি তদন্ত সাহেব ছাড়া অন্য কোন পুলিশ সদস্য ছিল না। বিষয়টি একদিনের মধ্যে মিমাংসা করার কথা ছিল। কিন্তু পৌরসভার মেয়র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব থাকায়, তিনি ফেরার পর আমাদের বিষয়টি নিয়ে সালিশ বৈঠক হবে। ওই সালিশে আমি আমার বিরুদ্ধে আনা জায়গা দখলের অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরব।

কারও কাছে অভিযোগ না করার মুচলেকা নেওয়ার বিষয়ে আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সরকার বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকরা এসে পুলিশের কাছে ২৪ ঘণ্টার সময় চান- যে তারা স্থানীয়ভাবে এটি মিমাংসা করবেন। সাংবাদিক বা অন্য কারও কাছে অভিযোগ করা যাবে না- এমন কথা আমরা কেনো বলতে যাব? থানায় তো সাংবাদিকরাও এসেছিলেন। এছাড়া জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, দুই পক্ষই মারামারি করেছিল। তারা যেন আবার মারামারি বা বিশৃঙ্খলা না করেন, সেজন্য মুচলেকা নেওয়া হয়। কোথাও কোনো অভিযোগ করা যাবে না- এমন মুচলেকা পুলিশ নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুচলেকায় কী লেখা আছে সেটি আমি না দেখে বলতে পারব না। তবে যদি কারও কাছে কোনো অভিযোগ না করার কথা লিখা থাকে, তাহলে সেটি অবান্তর। ওনি চাইলে জাতিসংঘে গিয়ে অভিযোগ করুক, সমস্যা কী?