সাহসিকতায় তিরস্কার :: আশুগঞ্জে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে বদলি হলেন ইউএনও!
বিশেষ প্রতিবেদক :: সরকারী জায়গায় অবৈধভাবে দখল করা স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে বদলি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছার। বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মোমিনুর রশিদ আমিন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে পার্বত্য বান্দরবন জেলার আলীকদম উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
তাকে বদলির আদেশটি আশুগঞ্জ আসার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাকে এই ভাবে বদলির বিষয়টিকে স্থানীয়রা ভালভাবে নেয়নি এবং ক্ষোভ ও দুংখ প্রকাশ করেছে ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় ২০১৬ সালে ১২ জুন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন আমরুল কায়ছার। যোগদানের পর থেকে আশুগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ রোধ, আধুনিক উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন নির্মাণ, বিভিন্ন রাস্তাঘাট নির্মাণ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মান উন্নয়ন, প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যালয় গুলোতে মিড ডে মিল চালু, উপজেলা পরিষদে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও পার্ক স্থাপনসহ উপজেলা আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।
এতকিছু করলেও আশুগঞ্জ উপজেলার সরকারি কাচারি পুকুরে পার্শ্বে র্দীঘ দিন দখলে থাকা সরকারি জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে প্রভাবশালিদের রোষানলে পড়তে হয়েছে তাকে। একটি সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জে কাচাঁরি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করলেও তিনজন প্রভাবশালীর অবৈধ স্থাপনা তাদের ক্ষমতার জন্য অপসারণ করা যায়নি।
২০১৭ সালের ১৫ জুলাই স্থানীয় জনগণের সুবিধা ও শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধণের জন্য উপজেলা শহরের কাচারীপুকুরের চার পাশে রাস্তা তৈরী করার জন্য অবৈধ ভাবে স্থাপনা উচ্ছেদ করা শুরু করে। এসময় র্যাব, পুলিশ, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। অভিযান কালে দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু, ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম স্বপন ভুইয়া, আবুল খায়ের, আবুল হোসেন ও বিএনপি নেতা আব্বাস উদ্দিন খান এর বহুতল ভবন সহ অর্ধশতাধীক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার চেষ্ট করেন ইউএনও। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছার রোষানলে পড়েছিলেন দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ধান চাল ব্যবসায়ি সমিতি সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম স্বপন ভুইয়া ও বিএনপি চেয়ারপ্যার্রসন খালেদা জিয়া সাথে বিমান ক্রয় দুর্নীতি মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আমলা ও বিএনপি নেতা আব্বাস উদ্দিন খান এর।
আর এই অপসারণ না করার কারনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসন থেকে পরপর তিনবার শোকজও করা হয়। সর্বশেষ ইউএনও অবৈধ স্থাপনা অপসারন করতে গেলে বাধাঁ দেয় দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার র্শীষ কর্মকর্তা তার কথিত আত্্রীয়দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু। এই সময় তাকে তাদের কথা শুনতে বলেন নতুবা বান্দরবন যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এর পরই এই আত্বীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা র্শীষ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আমিরুল কায়ছার এর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এই প্রতিবদেন এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার তাকে পার্বত্য বান্দরবন জেলার আলীকদম উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। কথিত রয়েছে তাদের তিনজনের মদদেই এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আশুগঞ্জ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এই বদলির আদেশ আশুগঞ্জে আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুকে) সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই সময় নানান প্রতিবাদের কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে অবৈধ দখলদারদের কাছে সততার এমন হার ভবিষ্যতে আশুগঞ্জে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
এদিকে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছারকে বদলীর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি প্রভাশালী গোয়েন্দো প্রতিবেদনের কারনে তাকে বদলী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। এছাড়া তিনি সরকার বিরোধী কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বদলির সাথে সাথে তাৎক্ষনিক স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এড. মো. জিয়াউল হক মৃধা তাকে স্ব-পদে রাখার জন্য সংস্থানপনমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব সংস্থাপনকে তিনি ডিও লেটার (আধা সরকারিপত্র) প্রদান করেছে।
এই বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. জিয়াউল হক মৃধা এমপি জানান, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছার যোগদানের পর থেকে আমার সাথে সুসস্পর্ক ছিল এবং বর্তমানেও আছে। এছাড়া এই মিথ্যা প্রতিবেদন যারা তৈরি করেছে আমি তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
সরকার বিরোধী কাজে ব্যস্ত থাকেন এই বিষয়টি নিয়েও উপজেলা আ.লীগ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিবাদে তারা জানান, সরকারের প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি আমাদের সহায়তা করে যাচ্ছেন। এই দিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রতিবদ জানিয়েছেন। এক প্রতিবাদে তারা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছার একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
অভিযোগে বিষয়ে দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, কাচারী পুকুর পাড়ে আমাদের বিল্ডিং ভাংঙ্গা বর্তমানে উচ্চ আদালতের আদেশে বন্ধ আছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে যখন ভাঙ্গতে আসে তখন আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তবে তাকে কোন প্রকার হুমকি দেয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আমার সম্পর্ক ভাল। র্শীষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার প্রভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন।
সরকারি আদেশ অমান্য করেন বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক হাজী মো. ছফিউল্লাহ জানান সরকারী কোন আদেশ অমান্য করেছেন এমটি আমার জানা নাই। আমরা তার কাছ থেকে এলাকার উন্নয়নে সকল সুযোগ সুবিধা পেয়েছি। প্রতিবেদনে যদি উল্লেখ করা হয় সে সরকারী আদেশ মানে নাই। তাহলে তা পুরোটাই মিথ্যা।
বদলির বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছার বলেন, বদলির আদেশ হাতে পেয়েছি। বদলি সরকারী চাকরীতে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে অন্যকিছু আছে কিনা আমি জানি না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. রেজওয়ানুর রহমান আশুগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।