ভ্রাম্যমান আদালতরে অভিযান:: সারের মোড়ক পরিববর্তন-প্রতারিত হচ্ছে কৃষক
প্রতিনিধি॥ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত সারের মোড়ক পরিববর্তন করে দেশীয় সারের মোড়ক ব্যবহার করে প্রতারণা করছে একটি পরিবহন ঠিকাদার সংস্থা। রাকিব পরিবহন নামের এই সংস্থাটি দির্ঘদিন যাবত এই প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই সার ক্রয় করে প্রতারিত হচ্ছে কৃষকরা। বিদেশ থেকে নির্ধারিত বস্তায় এই সার আমদানী করে দেশীয় সারকারখানার নামে মোড়ক করে চালিয়ে দেওয়ায় দেশীয় সারের প্রতি কৃষক আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে করছেন সংস্লিষ্ঠরা। পাশাপাশি দেশীয় সারের সুনাম নষ্ঠ হলেও প্রতারনার মাধ্যমে সংস্থাটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দেশের কৃষকদের সারের চাহিদা পূরণ করতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ভর্তুকী দিয়ে আমদানী করা হচ্ছে বিদেশি সার। তবে বিদেশি সারের গুনগত মান ভাল না থাকায় এই সার কৃষক ক্রয় করতে আগ্রহী হয়না। ফলে দিনের পর দিন এই সার খোলা আকাশের নিচে পরে থাকে। বেশীদিন এই অবস্থায় থাকার কারনে সারের গুনগত মান অনেকটা নষ্ট হয়ে যায় এবং জমিতে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। নষ্ট হওয়া এই সার আশুগঞ্জের রাকিব পরিবহন নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মোড়ক পরিবর্তন করে রাতের আধারে। এতে করে বিদেশী নষ্ট হওয়া সার দেশীয় সারকারখানা কাফকোর মোড়কে করে পরিবর্তন করে রাকিব পরিবহন সংস্থা। এতে করে দেশীয় সারের বস্তা কিনে প্রতারিত হচ্ছে কৃষকরা। আর সংস্থাটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। শুক্রবার গভীর রাতে রাকিব পরিবহন নামে এই চক্র আশুগঞ্জ নৌ বন্দর এলাকায় গোপনে মোড়ক পরিবর্তন করতে দেখা যায়। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় কর্মরত শ্রমিকরা। চক্রটিকে রক্ষা করতে শনিবার সকাল থেকে দিনভর চলে নানান নাটকীয়তা। পরে রাকিব পরিবহনকে ভোক্তা অধিকার আইনের ৪৪ ধারায় অভিযুক্ত করে নামমাত্র একটি জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। পরিবহন ঠিকাদার রাকিব এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ নাসির মিয়া জানান, নির্ধারিত ব্যাগ না থাকায় সাময়িক ভাবে এটি করা হয়েছে। কারখানায় সরবরাহ করার সময় অবশ্যই নির্ধারিত বস্তায় পুণরায় ব্যাগিং করে সরবরাহ করা হতো।
এ ব্যাপারে জেলা সার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ জালাল উদ্দিন যৌথভাবে জানান, ব্যাগ পরিবর্তনের অধিকার বিসিআইসি বা সরকারের ছাড়া কারো নেই। ব্যাগ পরিবর্তন করা হলে কৃষক প্রতারিত হন বা সারের গুনগত মান নষ্ট হয়। বিসিআইসি বা প্রশাসনের উপস্থিতিতে আমদানিকৃত সার ব্যাগিং করা হলে ভাল হতো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ তৌফিক আহমেদ খান জানান, বিষয়টি শুনেছি। নির্ধারিত বস্তায় ব্যাগিং না করা অন্যায়। এতে করে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যজিষ্ট্রেট ও উপজেলা সহকারি কমিশনার ফেরদৌসী আক্তার জানান, নির্ধারিত বস্তায় ব্যাগিং না করায় ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ৪৫ ধারা মোতাবেক রাকব পরিবহনের মালিক নাসির মিয়াকে ২৫‘হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ইউএনও আশুগঞ্জ সন্দ্বীপ কুমার সিংহ জানান, প্রাথমিক ভাবে জরিমানা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যেসব কারখানা বা যাদের মাল পরিবহন করা হচ্ছে তাদের সাথে আলাপ করে এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।