আশুগঞ্জের মৈশাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
বিশেষ প্রতিবেদক :: আশুগঞ্জের মৈশাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বই বিতরন, রেজাল্ট কার্ড প্রদান, খেলাধূলার নাম করে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। আর এসব অনিয়মে সহযোগীতা করছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি মো. নাছির মিয়া। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর এসব অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিবাবকরা। আর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্তকালীন কোন বিষয়ে কথা বলতে রাজি না হলেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম তদন্তে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে জানান।
অভিযোগ, অভিবাবক ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আশুগঞ্জ উপজেলার মৈশাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে প্রায় ৯৬৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র রয়েছে ৩৯৮ জর এবং ছাত্রী রয়েছে ৫৭১ জন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছে ৭ জন। এর মধ্যে একজন শিক্ষিকা রয়েছে নৈমিত্তিক ছুটিতে। বিভিন্ন সময়ে স্কুলের রেজাল্ট কার্ড নেওয়ার জন্য ২৫ টাকা, বই বিতরনের সময় জন প্রতি ২০ টাকা ও খেলাধূলার জন্য জনপ্রতি২৫ টাকা করে আদায় করা হয়। আর এই টাকা দিতে কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। স্কুলে কোন কারনে একদিন উপস্থিত না থাকলে দিতে হয় ১০ টাকা করে। আর এই টাকার কোন হিসাব কারো কাছে থাকে না। কেউ এ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। গত কয়েক মাস যাবত এই অবস্থা চলছে বিদ্যালয়টিতে। আর এতে করে এই বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা টাকা ছাড়া যাচ্ছেনা। অভিবাবকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নাছির মিয়া তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। পরে অভিবাবকরা এই বিষয়ের প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিববকরা। এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করার জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলে সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য মঙ্গলবার (২৭.০১.১৫) স্কুলে যায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাস্বেরা জানাত। সেখানে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, অভিবাবক ও স্কুলের সকল শিক্ষকের সাথে কথা বলেন তিনি। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা।
অভিাযোগকারী অভিবাবক মো. হাসান মিয়া জানান, আমার মেয়েকে প্রতিদিন টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠাতে হয়। তা না হলে সে বিদ্যালয়ে যেতে চায়না। আমি এর কারন জানতে চাইলে সে জানায় স্কুলে একদিন না গেলে ১০ টাকা করে দিতে হয় আর টাকা না দিলে স্যারেরা মারধর করে। তাই টাকা দিতে হয়। এ বিষয়ে আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান সভাপতির সাথে কথা বলতে।
আরেক অভিযাগকারী মো. হুমায়ুন কবির শুভ জানান, বিদ্যালয়টিতে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে দেখে এলাকাবাসীর পক্ষে আমি অভিযোগ করেছি। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি মো. নাছির মিয়ার নির্দেশে শিক্ষকরা ফলাফল প্রকাশের জন্য ২০ থেকে ২৫ টাকা, বই বিতরনের জন্য ২৫ টাকা, অনুপস্থিত থাকলে ১০ টাকা ও পরীক্ষায় ফেল করলে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য ২’শ থেকে ৫’শ টাকা করে নেয়। এটি অন্যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুল হক জানিয়েছেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে খেলাধূলা বাবদ ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল পরে তা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি নাছির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাস্বেরা জান্নাত জানিয়েছেন, তদন্তে যাকিছু পাওয়া গেছে তা হুবুহু আমি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। এব্যাপারে কিছু বলতে নিষেধ রয়েছে। তাই আমি কিছু বলতে পারব না।
এব্যাপারে আরেক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম জানিয়েছেন, তদন্তে মেশাইর স্কুলে বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়া গেছে এবং তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন সিদ্ধান্ত নিবেন।
অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্ধীপ কুমার সিংহ তদন্ত চলাকালীন কোন বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি না বলে জানান।