আশুগঞ্জে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও পরামর্শ শুনতে স্কুলে স্কুলে “UNO BOX”



শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা জানতে ও সমাধান করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার উপজেলার স্কুলে স্কুলে“UNO BOX” বসানো শুরু করেছে। এই বক্সে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ দিতে পারবেন। আর এটি খুলে সকল অভিযোগ কিংবা পরামর্শ সরাসরি দেখবেন আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই। উপজেলার দুটি স্কুলে এটি পরিক্ষা মূলকভাবে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন এই বক্সে অভিযোগ দিলে দ্রুত কাজ হবে। পরিবার ও শিক্ষকদের বলতে না পারা বিভিন্ন সমস্যা গুলো তারা অনায়াসে এই বক্সে লিখে দিতে পারবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও শুভাকাঙ্খিদের বিভিন্ন পরামর্শও এখানে দেয়া যাবে।
এই ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার’র সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেনির মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার মূলে ছিল ইভটিজিং। ভাল রেজাল্টের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানি ও প্রশ্নফাসের মত অপরাধ। তাছাড়া নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ক্লাশ প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র্যাগিং এসব সমস্যা সংক্রান্ত তথ্যগুলো সঠিক সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌছায় না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা পরিবারের ভয়ে কিংবা শিক্ষকদের সাথে খোলা মেলা কথা বলতে না পরার কারনে অনেক সময় চুপ করে থাকেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মনে বিরুপ প্রভাব পড়ে।
এসব বিষয় মাথায় রেখে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাঠ ও স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটি করে “UNO BOX” স্থাপন করে তালাবদ্ধ করে রাখার চিন্তা করেন। এর চাবি ইউএনও অথবা তার কোন প্রতিনিধির কাছে থাকবে। এই বক্সটি সপ্তাহের একটি দিন খোলা হবে। বক্সে কোন অভিযোগ থাকলে তা সাথে সাথে সংগ্রহ করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিক ভাবে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি বক্স বসানো হয়েছে।
এই ব্যাপারে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বক্সটিকে শিক্ষার্থীরা ভালভাবেই দেখছেন। তারা মনে করেন পরিবার কিংবা শিক্ষকদের সাথে বলতে না পারা অনেক সমস্যার কথাই তারা এই বক্সে লিখতে পারবে। এছাড়া ইভজিটিং, বখাটের উৎপাতসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে বলে মনে করছেন তারা। রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সায়েদা খানম বুষরা জানান, অনেক সময় রাস্তায় আমাদের সাথে অনেক অশোভন আচরন হয় যা আমরা পরিবার ও শিক্ষকদের সাথে শেয়ার করতে পারি না। এই বক্সটি হওয়াতে আমরা খুশি, কেননা এখন থেকে কোন সমস্যা হলে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বলতে পারব। তবে সব ধরনের গোপনীয়তা যেন রক্ষা করা হয়। নবম শ্রেণির ছাত্রী নূরে জান্নাত তোষা জানান, এটি খুবই ভাল উদ্যোগ। রাস্থাঘাটে কোন ধারনের ডিস্টার্ব ফিল করলে এখানে জানানো যাবে। গার্লস স্কুলের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়। অভিভাবক মো. সাইদুর মিয়া জানান, এই বক্সটি হওয়াতে আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুশি। কারন যে কোন সমস্যা আমরা সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানতে পারব। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি দেয়া হোক।
রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল আযাদ জানান, এই বক্সটি ইভটিজারদের জন্য হুমকি। শিক্ষার্থীদের মাঝে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। বাল্যবিবাহ, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতি বন্ধ হবে। আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানে এই “টঘঙ ইঙঢ” বসানো খুবই প্রয়োজন। কেননা এই বক্সটি সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদারকি করবেন।
এই বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বুধবার সকালে জানান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রশাসনের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই “টঘঙ ইঙঢ” টি কাজে আসবে। সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিকে মনিটরিং করার কারনে এই বক্সটির উপর সকলের আস্থা তৈরি হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্লাশ প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্তি শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র্যাগিং এসব সমস্যা কমে আসবে। প্রাথমিক ভাবে এই বক্সটি দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যে কোন পরামর্শও দেয়া যাবে এই বক্সে।