আশুগঞ্জের আলোচিত তুর্না হত্যা মামলার বাদিকে বিএনপি নেতা ও আসামীর স্বজন কর্তৃক হত্যার হুমকী
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে আলোচিত তুর্না হত্যা মামলার বাদি ও তার বাবা মফিজুল হককে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকী ও বিভিন্নভাবে হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বাদি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ার কারনে মামলা চালানোর জন্য নিজের বাড়ি বিক্রি করতে চাইলেও আসামীর পিতা ও তার সহযোগীরা সেটি দিচ্ছে না। এদিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য জানিয়েছেন বাদিকে। এই অবস্থায় প্রশাসনের যথাযথ হস্থক্ষেপ ও মামলার একমাত্র আসামীর ফাঁসির দাবি করেন মামলার বাদি ও নিহতের পিতা মফিজুল হক।
লিখিত অভিযোগ ও মামলার বাদি মফিজুল হকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাা আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামের নিহত কামরুন নাহার তূর্ণার সাথে একই এলাকার তার চাচাত ভাই আরিফুল হক রনির সাথে ২০১২ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সাংসারিক জীবনে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তুর্নার কোন ভাই বোন না থাকায় বাবার সকল সম্পত্তির মালিক হন তিনি। এই সম্পত্তি তার স্বামী রনির নামে লিখে দেওয়ার জন্য পারিবারিক কলহ লেগে ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৪ এপ্রিল সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল তুর্না। বিকালে স্বামীর বাড়ির ছাদের একটি পরিত্যাক্ত পানির ট্যাংক থেকে তুর্নার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় নিহতের হাত-পা বাধাঁ ও মুখে পলিথিন মোড়ানে ছিল। এই ঘটনায় নিহতের পিতা মফিজুল হক বাদি হয়ে তার মেয়ের স্বামী আরিফুল হক রনিকে প্রধান আসামী করে আরো অজ্ঞাত দুই জনকে আসামী করে আশুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রায় এক মাস পর হত বছরের মে মাসের ২১ তারিখ এই মামলায় তুর্ণার ঘাতক স্বামী রনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে আদালত থেকে রিমান্ডে আনা হলে তুর্নাকে হত্যার সকল বিষয় সে স্বীকার করে। বর্তমানে ঘাতক রনি জেল হাজতে রয়েছেন।
এদিকে তুর্ণা হত্যার মামলা রুজুর পর থেকেই মামলার বাদি মফিজুলকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত হুমকী দিয়ে আসছে নিহতের ঘাতক স্বামী রনির পরিবারের লোকজন। মামলা তুলে না নিলে মামলার বাদিকে মফিজুলকে হত্যার হুমকী দিচ্ছে তারা। শুধু তা-ই নয় মামলার ঘটনা আপোষ মিমাংসা না করা পর্যন্ত তার বাড়িও বিক্রি করতে দিচ্ছে না। এরই ধারাবাহিকতায় ৬ ফেব্রুয়ারী সকালে বাদি মফিজুলের বাড়িতে এসে তুর্নার হত্যাকারী রনির পরিবারের লোকজন এসে তাকে মামলা তুলে ফেলার হুমকী দেয়। অন্যথায় তাকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে খুন করে ফেলবে বলে হুমকী দেয়। এ বিষয়ে ভূক্তভোগী আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেছেন। এদিকে মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভিতি দেখাচ্ছেন। অন্যথায় পরে তার পেছনে পেছনে ঘুরতে হবে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদিকে।
মামলার বাদি ও তুর্নার পিতা মো. মফিজুল হক সাংবাদিকদের জানান, রনি ও তার পরিবারের লোকজন আমার মেয়েকে হত্যা করেও তাদের স্বাদ মেটেনি। এখন আমাকে বিভিন্ন লোকজন দিয়ে প্রতিনিয়ত হুমকী ধামকী দিচ্ছে মামলা তুলে নেয়ার জন্য। অন্যথায় তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে রনির পরিবারের লোকজন। এছাড়াও ঘাতক রনি জেল থেকে ছাড়া পেলে দেশ ছেড়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে মামলার আসামী তুর্নার ঘাতক স্বামীর পিতা মো. আমরুল হক প্রকাশ ছোট্ট মিয়া হুমকীর সকল বিষয় অস্বীকার করেন। তিনি জানান, হুমকী ধামকী এমনকি যায়গা বিক্রির কোন বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেন নি। এছাড়াও কাউকে দিয়েও তিনি হত্যার বিষয়টি আপোষ মিমাংসা করার জন্য বলেন নি।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন মুঠোফোনে জানান, আমি মফিজুল হককে কোন প্রকার হুমকী দেইনি। রনির পরিবারের লোকজন আমাকে মফিজুলের সাথে মিমাংসার বিষয়ে কথা বলতে বললে আমি তার সাথে কথা বলি। যায়গা বিক্রি করতে না দেয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি এটি কয়েকদিনের মধ্যে সমাধান হবে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল অলম তালুকদার জানান, মফিজুল হকের একটি সাধারণ ডায়রী আমরা পেয়েছি। এই ব্যাপারে সব ধরনের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।