নাসিরনগর হাসপাতাল যেন অনিয়ম ভোগান্তির স্বর্গরাজ্য:: অফিস সময়ে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখা!!!
এস.এম.বদিউল আশরাফ(মুরাদ মৃধা) :: জেলার নাসিরনগর উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি অনিয়ম ভোগান্তির স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। অফিস চলাকালীন সময়ে খোদ টিএইচও নিজের রুমে বসে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখা, ডায়াগনষ্টিক ও ক্লিনিকগুলোর দালালদের সহায়তায় রোগীদের আলট্রাসুনোগ্রাম সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় বাধ্য করে কমিশন বাণিজ্য বর্তমানে ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে।
হাসপাতালে নেই নার্স। পরিছন্নতা কর্মী ও কুকমসালসি দিয়ে চলছে নার্সের কাজ। এক্সরে মেশিন চালু থাকলেও Voltage stabilizer না থাকার ফলে প্রায় ছয় বছর যাবৎ অলস পড়ে আছে এক্সরে মেশিন। তাই রোগীদের যেতে হয় প্রাইভেট ক্লিনিকে। প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও নার্স না থাকায় বর্তমানে রেগীদের চিকিৎসা চলছে বেহাল অবস্থার মধ্য দিয়ে।
রোগীরা যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করে বলেন, নেবুলাইজার যন্ত্র দিয়ে শিশুদের গ্যাস দেওয়ার সময় সেবিকাদের টাকা দিতে হয়। প্রতিবারের জন্য ১০টাকা করে দিতে হয়। টাকা না দিলে তাঁরা গালিগালাজ করেন। এছাড়া রোগীদের হাতের কেনোলা স্থাপন ও ক্ষতের জায়গায় ব্যান্ডেজ করার মেডিকেল সহযোগীদের (সাকমো) ৪০ টাকা করে দিতে হয়। গত ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ, মহিলা, ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ড সরেজমিন ঘুরে চিত্র পাওয়া গেছে। তাছাড়া পুরুষ ওয়ার্ডে প্রায় ৫ মাস যাবৎ নেই বাথরুমের ব্যবস্থা এবং গত ৭ দিন যাবৎ হাসপাতালের পানির পাম্প নষ্ট হওয়ায় চরম ভুগান্তি পোহাচ্ছে রোগীরা।
নোংরা পরিবেশ যেন হাসপাতালের নিত্যসঙ্গী। হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য দুজন কর্মচারী সরকারী বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও অদ্যবদি তারা হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে সহযোগিতা করছে না বলে হাসপাতাল সূত্রে নিশ্চিত করেছেন। অথচ হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কথা বলে গত অর্থ বছরে বিভিন্ন স্মারকে ১৮,০০০/-, ১৭,৮০০/- ও ২৪,০০০/- টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে একটি জেনারেটর থাকলেও রোগীদের প্রয়োজনে তা ব্যবহার হয়না। বিদ্যুৎ না থাকলে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে জরুরী ভিত্তিতে এক্সরে অথবা আলট্রাসনোগ্রাফী করানো সম্ভব হয়না। (খোদ টিএইচও জানান, গত এক বছরে জেনারেটর ১০ ঘন্টাও ব্যবহার হয়নি)। উল্লেখ্য গত ১৪/০১/২০১৬, ১৩/১০/২০১৬ ও ২৭/০৬/২০১৬ তারিখে ৪১৭১/১, ৬৭৫১/১/৪/ ও ১৬৪৭/(২) স্মারক মূলে জালানি বাবদ যথাক্রমে ১৯,০০৮/= টাকা, ১৯,০০৮/= টাকা ও ১৪,২০৮/= টাকা উত্তোলন করা হয়।
অথচ বছর শেষে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ভুয়া বিল ভাউচার করা হচ্ছে জেনারেটর বাবদ।
আবার হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও কেবিনে নেই লাইট,বৈদ্যুতিক পাখা। যে রুমে রুগী ভর্তি হয় সেই রুমের লাইট নিজেদের কিনে লাগাতে হয়। ৫০ শয্যা উপজেলার হাসপাতালটিতে এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকলেও সবসময় বিকল হয়ে থাকে। এছাড়া রেফারকৃত জটিল রোগীদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালসহ জেলার বাহিরে জরুরী ভিত্তিতে নেওয়া সম্ভব হয় না।
উল্লেখ্য যে, ২৭/০৬/২০১৬, তারিখে ৪১৭১/১ ও ১১৮৫(৯) স্মারক মূলে ২৯,৭০০ টাকা এ্যাম্বুলেন্স মেরামত বাবদ উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ এ্যাম্বুলেন্সটি প্রায় ২বছর যাবৎ বিকল হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু বছর শেষে এ্যাম্বুলেন্স মেরামত বাবদ ভুয়াবিল ভাউচার উঠানো যেন বছর শেষে রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। যার ফলে রোগীদের কারও ভাগ্যে নিশ্চিত মৃত্যু নয়ত কারও ভাগ্যে দুর্ভোগের ঘনঘটা।
সরেজমিনে দেখা গেছে,-সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভর্তিকৃত রোগীদের বিছানার চাঁদর পরিবর্তনের পর প্রতিদিন পরিষ্কার করে দেয়ার কথা থাকলেও রোগীদের অভিযোগ ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাড়পত্র পাওয়া পর্যন্ত একই চাঁদর দিয়ে সময় কাটাতে হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ শুখলাল সরকারের সাথে কথা বল্লে তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের কথা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগীর অভিযোগ, কতর্ব্যরত নার্সদের কাছ থেকে কোন সেবা পায়না। কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা বকাবকি করেন, এমন অভিযোগ হাসপাতালে ভর্তি শতভাগ রোগীর। ময়লা দুর্গন্ধময় পরিবেশে চলছে চিকিৎসা সেবা গ্রহন। যেখানে সর্বত্র দেখা মেলে অব্যবস্থাপনার নিদর্শন। দিনের বেলায় দু একজন ডাক্তারের উপস্থিতি মোটামোটি লক্ষ্য করা গেলেও রাতের বেলায় পরিস্থিতি দেখা যায় ভিন্ন। রাতের বেলায় প্রতিদিন জরুরী বিভাগে একজন ডাক্তার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও মুলত এই নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বলে ভোক্তভোগী রোগীদের অভিমত। রাতের বেলায় কর্তব্যরত ডাক্তারকে খুজে পাওয়া প্রায় দুস্কর। এর পর ও যদি ডাক্তারের প্রয়োজন হয় তাহলে নার্সরা সিরিয়ালে থাকা ডাক্তারকে ফোনের মাধ্যমে অথবা ডেকে এনে রোগীদের সেবা দেন। মুলত রাতের চিকিৎসা সেবা ও জরুরী বিভাগের কার্যক্রম চলছে কুক ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে।
জানা গেছে, হাসপাতালের ডাক্তার/কর্মচারী সিন্ডিকেটকে ম্যানেজ করতে না পারায় গরীব রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এছাড়াও রোগীদের অভিযোগ,প্রতিটি ঔষুধ বাইরের ফার্মেসী থেকে ক্রয় করেতে হচ্ছে। রোগীদের ভাষায়,সরকারী হাসপাতাল হলেও সবকিছু রোগীদের বাইরের ফার্মেসী থেকে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা: হাসিনা আক্তারের সাথে কথা বললে, তিনি বলেন, আমি বিষয়টি দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
স্থানীয়দের দাবী অচিরেই মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগীতায় হাসপাতালের সমস্যা সমাধান করে নাসিরনগর উপজেলাবাসীদের বেহাল চিকিৎসা সেবার হাত থেকে রক্ষা করবে।