নাসিরনগরে মেঘনার ভয়ংকর ভাঙ্গন। বসতবাড়ি, দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন।।



এম.ডি.মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর, একটি টিনশেড পাকা বাড়ির নিচের অংশের মাটি সরে গিয়ে ঝুলে আছে শূন্যে। আরেকটি বড় দোকান ঘর চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়েছে নদীগর্ভে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় বাজার ও সংলগ্ন এলাকার মেঘনা নদীর ভয়ংকর ভাঙ্গনের নমুনা এটি।
গত এক সপ্তাহ আগে মেঘনা নদী পাড়ের এ বাজারটিতে আকস্মিক ভাঙ্গন শুরু হয়। বাজার ছাড়াও বাজারের পশ্চিম পাশের বসতবাড়ি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। যা এখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। পুরো বাজার এবং গ্রামের বড় একটি অংশ মেঘনা গর্ভে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় আতংকে দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবদুল আহাদ জানান, উজানে নদী খননের কারনে ভাটিতে নদীর চার ভাগের তিন ভাগই পলি মাটি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। একভাগ দিয়ে পানি প্রবাহের কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ভূক্তভোগীরা জানান, নদীর ওপারে কিশোরগঞ্জের নোয়াগাঁও এলাকায় একটি ইটখলার পাশে ইট ফেলে বাঁধের মতো সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে প্রায় দুই একর জায়গাজুড়ে বালি ভরাট করা হয়েছে। এর ফলে আগের মতো সেদিক দিয়ে পানি সরতে পারছে না। আর এ কারণেই পানি প্রবাহ তীব্র বেগে এসে বাজারটিতে আঘাত করছে।
গত বুধবার বাজারের দোকানপাট ও বাড়িঘরের ভাঙ্গন অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে সেখানে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। এসময় স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন। সংসদ সদস্য স্বচক্ষে এই অবস্থা প্রত্যক্ষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
বাজারের পশ্চিম দিকের বাসিন্দা প্রবীর রায় জানান, তার ৬৪ শতক বাড়ির পুরোটাই নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পথে। ইতিমধ্যে একটি পাকা ঘরের নিচের মাটি সরে গিয়ে সেটি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এমন ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকেই নি:স্ব হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন গিয়ে চাতলপাড় চক বাজারের অনেকাংশ পর্যন্ত মাটি ভাঙ্গার ছাপ দেখা গেছে। অনেক দোকানঘরেও ফাটল দেখা দেয়ায় সেখানকার ব্যবসায়িদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো বাজারটিই বিলীন হয়ে যেতে পারে।
বাজারের ব্যবসায়ি আব্দুল মালেক সরকার বলেন, এখন পর্যন্ত ১০-১২টি দোকান ভিটি ও কয়েকটি বাড়ি নদীগর্ভে ভেঙ্গে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে পুরো বাজার এবং চাতলপাড় গ্রামের অর্ধেকের বেশী নদীতে বিলীন হবে।
চকবাজারের ব্যবসায়িক সমতিরি সভাপতি আব্দুল হামিদ বলেন, নোয়াগাও’র পূর্ব পার্শ্বে এবং বালিখলার পশ্চিম দিক জুরে মেঘনার বুক চিরে জেগে উঠা চড়ের কারণে নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা হরিয়েছে। শুকনো মৌসুমে চাতলপার ইউনিয়নের মেঘনার পানির কলরবে মুখরিত থাকত এপাড় ওপাড়। আর এখন শুকনো মৌসুমে নদীতে চড় পরার কারনে নৌকাই চলতে পারেনা। অথচ গত ৩/৪ বছর আগেও এই নদীতে বড় বড় লঞ্চ-ষ্টিমার চলত। আর বর্তমান অবস্থা হল প্রবল স্রোত আর ভাঙ্গনের কবলে চাতলপাড়ের ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী চকবাজার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সার্ভে করেছি। যেহেতু নদীটি কিশোরগঞ্জ এলাকায়ও রয়েছে সেজন্য সেখানকার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আমরা সমন্বয় করেছি। চাতলপাড় এলাকায় জেগে উঠা চর এবং কিশোরগঞ্জ এলাকায় অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, ভাঙ্গন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলেছি। তারা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছেন এবং স্থ্ায়ী ভাবে ভাঙ্গন রোধেও পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে বলা হয়েছে তাদেরকে।