নাসিরনগরে আমের মুকুলের আজ ভরা যৌবন, ফাগুনের ২০



এম.ডি.মুরাদ মৃধা,নাসিরনগর হতে। নাইওর আসবে গ্রাম্য বধু। আম-দুধ দিয়ে জামাই আদর থেকে শুরু করে সামজিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে আম হবে প্রদান উপাদান। এটাই গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। আর এই ঐতিহ্যকে লালন করতে আম যেন আসছি আসছি করে আগমনী বার্তা দিয়ে রেখেছে ফাগুনের মাঝামাঝি।
ফাগুনের ২০। শীতের বৃদ্ধকাল! আমের মুকুলের আজ ভরা যৌবন। পাতাঝড়া ঋতু রাজ বসন্ত। আবহমান বাংলার ঋতুর রাজা বলতে বসন্তকেই আমরা জেনে এসেছি। ফালগুন মাসে বসন্তের সঠিক আমেজ উপলব্ধি করা যায়। বসন্তের আমেজ মানেই দখিনা বাতাস, কোকিলের কুহু কুহু ডাক আর আমের মুকুলের মৃদু ঘ্রাণ। সন্ধ্যার পর মাতব্বর সাহেবের উঠানে কাওয়ালী আর ভাটিয়ালী গান।
চলছে বসন্তকাল। আম গাছের দিকে তাকেলেই চারদিকে শুধু মুকুলের সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে প্রকৃতিও যেন আপ্লুত। গেল বছরের তুলনায় এবছর আমগাছে মুকুল অনেক বেশি। আমের মুকুল যাতে অংকুরেই ঝড়ে না যায় গাছের মালিক সাধ্য মত চেষ্টা করছেন। পরির্চযার কমতি নেই।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে আম গাছের বিভিন্ন মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে আমের বাগান এখনো হয়ে উঠেনি। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কিছু এলাকায় ছোট আকারের বাগান আছে। গোকর্ণ ইউনিয়নরে ব্রাহ্মণশাসন গ্রামে ১টি। নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের নাসিরপুর ও দাতঁমন্ডলে ১টি বাগান আছে।
এলাকার বসতভিটা, রাস্তার দু’পাশ,অফিস-আদালত চত্বর, সরকারি বে-সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় আমের মুকুলের গন্ধে মুখরীত প্রকৃতির বাতাস। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রকৃতির আচরণ আমের মুকুলের অনুকুলে। যদি প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটে তবে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। তবে গত সপ্তাহের আস্মিক ঝড়ে মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই ঝড় আতঙ্ক এখন ভাবিয়ে তুলেছে আম প্রেমীদের মাঝে। আম একটি পুষ্টিকর ও সু-সাধু ফল। আম খাওয়া ছাড়াও, বাজারে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হওয়ার ভাল সুযোগ আছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে জানা যায়, মাঘ মাসের ১৫ তারিখ হতে আমের মুকুল আসতে শুরু করে। যদি শীতের প্রচন্ডতা বৃদ্ধি পায় তবে মুকুল আসতে দেরি হয়। লক্ষনীয় যে, এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ দিন পরে আমের মুকুল এসেছে। কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় কৃষি অফিস বলেন, যে বছর শীত দেরিতে আসে সে বছর আমের মুকুলও দেরিতে আসে। কারণ শীতের প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে মুকুল আসতে সময় ক্ষেপন করে। যখনই একটু গরমের আমেজ তৈরি হয় সেই সুযোগে মুকুল চলে আসে। কিছু কিছু গাছে মুকুল তুলনামূলক কম। তার কারণ জানতে চাইলে বলেন, আম গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে কিংবা গাছের বয়স বেশি হলে মুকুল কম আসতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিছুজ্জামান বলেন, এবছর আমের প্রচুর মুকুর এসেছে। যদি প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটে তবে আমের ভাল ফলন হবে। এলাকার মানুষ বিষাক্ত ফরমালিন মুক্ত ফল খেতে পারবে। গাছে মুকুল আসার পর হোপার পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। এজন্য আমের গুটি মটর দানার মতো হওয়ার পর গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। প্রতি এক লিটার পানিতে মেশাতে হবে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের তরল কীটনাশক ০.২৫ গ্রাম। আর দানাদার কীটনাশক হলে ০.২ গ্রাম। ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক ০.২ গ্রাম। আমের মুকুল ভাল রাখার জন্য ছত্রাকনাশক নোইন পাউডার ও যেকোন একটি কিটনাশক ঔষধ সংমিশ্রন করে গাছে স্প্রে করতে হবে। তাহলেই আমের ভাল ফলন হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।