Main Menu

আল্লামা সাঈখ মোহাম্মদ আলী (রহ:) এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা

সরাইলের বড় হুজুর ছিলেন শান্তির প্রতীক

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥আলেমে দ্বীন ওস্তাজুল ওলামা আল্লামা শাঈখ মোহাম্মদ আলী (রহঃ) ছিলেন শন্তির প্রতীক। তাঁর জীবনের পুরো সময়ই ইসলামী কর্মকা-ে ব্যয় করেছেন। অসামাজিক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসও সুদীর্ঘ। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন অসংখ্য মসজিদ ও মাদরাসা। তৈরী করেছেন অর্ধলক্ষাধিক আলেমে দ্বিন। হাজার হাজার ওয়াজ ও তফছির মাহফিলেন সভাপত্বি করেছেন। গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত আল্লামা সাঈখ মোহাম্মদ আলী (রহ:) এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এ সব কথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া সিরাজুল উলুম ভাদুঘর মাদ্রাসার মুহতামিম (অধ্যক্ষ) আল্লামা মনিরুজ্জামান সিরাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন অল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব, আল্লামা মুবারক উল্লাহ, আল্লামা সাজিদুর রহমান, অল্লামা সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, হাফেজ মাওলানা ড. মহিউদ্দিন, আল্লামা আবদুর রহিম কাসেমী, মুফতি আবদুল হান্নান, মুফতি বোরহান উদ্দিন আল মতিন, অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, সদস্য সচিব মাওলানা কুতুব উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার উদ্দিন, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শাহজাহান মিয়া প্রমুখ।
রোববার বিকেল তিনটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আল্লামা শাঈখ মোহাম্মদ আলী অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করেছেন। অনৈসলামিক কাজের বিরোধীতা করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন একাধিকবার। বৃদ্ধ বয়সে কারাবরণও করেছেন। ৭০ দশকে কুট্টাপাড়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে (কুট্টাপাড়া খেলার মাঠ সংলগ্ন) কালাশাহ’র কাল্পনিক আসন দরগা (মাজার) তৈরি করে শিরক ও বেদাআদ করতে থাকে নিজ গ্রোত্রের লোকজন। মাজার সমর্থকরা ওরসের নামে কুট্টাপাড়া খেলার মাঠে চালু করেছিল অনৈসলামিক কাজ। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ’৮৪ সালে কাল্পনিক মাজার উচ্ছেদ করতে সক্ষম হন। ওই বছর থেকেই কুট্টাপাড়া মাঠে হেফাজতে ইসলাম নামের এক সংগঠনের মাধ্যমে ওয়াজ ও তফসির মাহফিলেন অয়োজন করেন। দেশ স্বাধীনের পর পর সরাইল অন্নদা উচ্চবিদ্যালয় (বর্তমানে সরকারি) মাঠে চালু করা হয় মেলার নামে জুয়া ও অনৈসলামিক কাজ। এর প্রতিবাদে ’৭৫ সাল থেকে ওই মাঠে চালু করেন ওয়াজ ও তফসির মাহফিল। তিনি ছিলেন ওই তফসির মাহফিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (৪৫ বছর) ওই তফসির মাহফিলের সভাপতি ছিলেন। বৃদ্ধ বয়েসেও তিনি কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সময় কাঠাতেন। কোরআনই ছিল তাঁর আসল বন্ধু। তিনি কোরআন ও সুন্নাভিত্তিক জীবন যাপন করেছেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নত কায়েম করার চেষ্টা করেছেন।
ঊক্তারা বলেন, আল্লামা মোহাম্মদ আলী ছিলেন খুবই বিনয়ী ও শান্ত স্বভাবের। তিনি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষালয় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার তৎকালীন বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন কুতুবে আলম আল্লামা হুসাইন আহম্মদ মাদানীর প্রিয়ভাজন ছাত্র। সেখানে তিনি বৃত্তিলাভ করে বিনা খরচে অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করেন। সেখানে সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদীস লাভ করে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি দেশে ফিরেন ওস্তাদ ফখরে বাঙ্গালের নির্দেশে মালীহাতা মাদরাসায় শিক্ষকতায় যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে ওই মাদরাসায় প্রতিষ্ঠান প্রধান (অধ্যক্ষ) হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অধ্যক্ষ পদে ছিলেন। একই সময় থেকে তিনি আনসারিয়া মো‏হাম্মদীয়া ঈদগা মাঠে (কুট্টাপাড়া,খাঁটিহাতা ও বেতবাড়িয়া গ্রামের যৌথ ঈদগা মাঠ) ও খাঁটিহাতা জামে মসজিদে খতিবের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। একই সাথে ওই ঈদগা মাঠের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এলাকায় কোনো দাঙ্গা ফ্যাসাদ হলে তিনি ছুটে যেতেন শান্তির দূত হয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিস্পত্তি করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হতেন। তাই তিনি মানুষের কাছে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।
তিনি ছিলেন শিরক-কুফর-ফেতনা ও বাতেল বিরোধী আন্দোলনের জীবন্ত ইতিহাস। সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শতবর্ষী এ আলেমে দ্বীন গোটা উপজেলায় বড় হুজুর হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। নির্লোভ নিরর্হঙ্কার নিরোগ মানুষটি বার্ধক্যজনিত কারণে গত ৮ ডিসেম্বর ১০৩ বছর বয়সে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গত ৯ ডিসেম্বর বাদ জোহর কুট্টাপাড়া খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর ইচ্ছায় জামিয়া ইসলামিয়া তাজুল উলুম মালীহাতা মাদ্রারা প্রাঙ্গণে তিনি শায়িত আছেন।
মহান আল্লাহ্ তালার কাছে শান্তির প্রতীক আল্লামা সাঈখ মোহাম্মদ আলী (রহ:) এর জান্নাতের উচু মর্যাদা প্রত্যাশা করে রাত সাড়ে নয়টার দিকে দোয়া পরিচালনা করেন আল্লামা মনিরুজ্জামান সিরাজী। দোয়ায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।






Shares