সরাইলে সড়ক নির্মাণ কাজে চলছে চরম অনিয়ম
মোহাম্মদ মাসুদ,সরাইল ॥ সরাইলে সড়ক নির্মাণের কাজে চলছে লেপপুজ। একেবারে নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী দিয়েই চলছিল কাজ। স্থানীয় লোকজনের বাঁধায় বন্ধ এখন কাজটি। মানসম্মত মালামালের ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়ায় কাজটি বন্ধ রাখতে ঠিকাদারকে পত্র দিয়েছেন সরাইল উপজেলা এলজিইডি। নির্ধারিত সময়ের ৩ মাস পরও কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ।
সময় বৃদ্ধি না হলেও সবকিছু উপেক্ষা করে আগের কাজের উপরই গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঠিকাদার আবারও শুরূ করেছেন কাজ। এ ঘটনায় স্তদ্ধ হয়ে পড়েন স্থানীয় লোকজন। কার ইশারায় ও তদবিরে কর্তৃপক্ষের নিষেধ অমান্য করেই চলছে কাজ। সরাইলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এশিয়ান হাইওয়ে থেকে পানিশ্বর বাজারের অটোরিকশা ষ্ট্যান্ড পর্যন্ত ৮৫০ মিটারের এ কাজে চলছে অনিয়ম।
সরজমিনে ও স্থানীয় এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, বৃহত্তর কুমিল্লা এলাকার গুরূত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (৩য় ধাপ) কাজ এটি। কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ৬০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫ টাকা। আর চুক্তি মূল্য ৫৭ লাখ ৫২ হাজার ৩৪০ টাকা। ঠিকাদার মেসার্স মুনা এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. হেলাল বায়েজিদ। তদারকির দায়িত্ব সরাইল এলজিইডি অফিসের। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরূ করে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের পর আরো তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ।
এরপরও এখন তড়িঘড়ি করে নিম্নমাণের সামগ্রি দিয়ে কোন রকমে লেপপুজ করার চেষ্টা করছেন ঠিকাদার। সড়কের দৈর্ঘ্য প্রস্থে অনিয়ম। আর ১ নং ইটের খোয়া ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করছেন ৪-৫ নং ইটের খোয়া দিয়ে করছেন মেকাডম। স্থানীয় লোকজনের অনুরোধ শুনেননি ঠিকাদার। গত ৪ জুলাই অনিয়মের অভিযোগে কাজে বাঁধা দেন স্থানীয় লোকজন। ৭ জুলাই ঠিকাদারকে নিম্নমাণের সামগ্রি ব্যবহারের অভিযোগে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে পত্র দেন সরাইল এলজিইডি।
এরপরও কাজ করার চেষ্টা করেন। পরে গত ৯ জুলাই স্থানীয় লোকজন রাস্তায় নেমে ঠিকাদারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। পানিশ্বর ইউপি আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক মো. সজু মিয়া ক্ষোভের সাথে বলেন, শুরূ থেকেই অনিয়মের মাধ্যমে যেনতেন ভাবে চলছে এ কাজ। কর্তৃপক্ষের পত্র ও স্থানীয় জনগণের বাঁধায় কাজ বন্ধ ছিল। সময়ও চলে গেছে মার্চের ১৫ তারিখে। সড়কে ব্যবহৃত নিম্নমাণের সামগ্রি তুলে নেওয়ার কথা ছিল। সবকিছুু উপেক্ষা করে হঠাৎ গত ১৬ জুলাই সকাল থেকে ঠিকাদার শুরূ করেছেন কাজ। মনে হচ্ছে ঐশ্বরিক কোন শক্তির ক্ষমতায় তিনি কাজ পুনরায় শুরূ করলেন।
ঠিকাদার বায়েজিদ আহমেদ হেলাল কাজের সময় চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সময় বৃদ্ধির আবেদন পক্রিয়াধীন আছে। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না। যে ইটার কথা বলা হচ্ছে সেটা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া মাল।
সরাইল উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিলুফা ইয়াছমীন কাজে অনিয়ম, স্থানীয়দের বাঁধা ও সময় চলে যাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, পত্র দিয়ে কাজ বন্ধ রেখেছি। মানসম্মত নির্মাণ সামগ্রি নিশ্চিত না করে ঠিকাদার কাজ করতে পারবেন না। সময় শেষ। সময় বৃদ্ধির আবেদন পক্রিয়াধীন আছে। এখন পর্যন্ত কাজের মাত্র ৩০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার কোন বিল পাননি। পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।