ষাটবাড়িয়ায় ভাংচুর লুটপাট :: নিরাপত্তাহীতায় শিক্ষার্থী ও যুবতীরা
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল প্রতিনিধিঃ :সরাইলের ষাটবাড়িয়া একটি খুনের ঘটনায় এখন অশান্ত পুরুষ শুন্য। ভাংচুর লুটপাট ও নির্যাতন আতঙ্কে সময় পাড় করছে মহিলারা। বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছে যুবতী মেয়েদের। পাকশিমুল ইউনিয়নের ওই গ্রামের সর্বত্রই চলছে আহাজারি ও হ্যাঁ হুতাশ। দেদারছে গাছ কাটা, বন ও বসতঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগও করেছেন অনেকে। পূর্ব শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তারের জের ধরেই দুই গ্রামের সংঘর্ষে হরিপুরের প্রবাসী ও দুই সন্তানের জনক জাকির (৩০) খুনের ঘটনা থেকেই এর সূত্রপাত। গতকাল দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, গ্রামের একাংশে কয়েকজন পুরুষ নড়াচড়া করলেও অধিকাংশ বাড়িই পুরুষ শুন্য। চারিদিকে ঘুরাফেরা করছে কতিপয় যুবক। মহিলাদের চোখে মুখে হতাশার চাপ। অনাহার অর্ধাহারে মুখ শুকিয়ে আছে অনেকের। অনেকের বসত ঘর ভেঙ্গে ঘুরিয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। লুটপাট করে নিয়ে গেছে ধান চাউল গরু বাছুর ও আসবাবপত্র। কেউ কেউ ভাঙ্গা ঘরে বসে কাঁদছেন। অনেক মহিলা মাটিতে লুটুপুটি খাচ্ছেন আর বুক চাপড়িয়ে চিৎকার করছেন। সুফিয়া বেগম (৫৫) ও আলেকজান বেগমে (৪৮) বলেন, জাকিরকে দাফনের পর থেকেই গ্রাম জুড়ে চলছে ভাংচুর আর লুটপাটের তান্ডব। আমাদের সব কিছু নিয়ে গেছে। খাবারের চাউল নেই। রাতের অন্ধকারে কি অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও নির্যাতন সহ্য করছি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। উঠতি বয়সের মেয়েদের কোন নিরাপত্তা নেই। তাই তাদেরকে আমরা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। ভাত তরকারির পাতিল লাথি মেরে ফেলে দেয়। আতঙ্কে সারা রাত জেগে থাকি। দুপুর ১টায় ষাটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ঝুলছে তালা। স্কুলের পাশের বাড়ির জনৈক মহিলা জানান, গত তিন ধরে কেউ বিদ্যালয়ে আসে না। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রোমান মিয়া ও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র রায়হান জানায়, ঝগড়ার দিন থেকে বিদ্যালয় বন্ধ। ওইদিন রাতে কিছু লোক লুটপাট করার সময় আমাদের বই খাতা কলম সহ সব নিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ে যেতে চাইলে রাস্তায় আমাদের মারধর করে। তাই যায় না। স্যাররাও আসে না। এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক মোঃ বশির মিয়ার মুঠোফোনে (০১৭১৫-৩৪৪৩৪৩) একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মোঃ সলিম উদ্দিন বলেন, সংঘর্ষ ও খুনের পর পরিবেশ অন্যরকম। তাই শিক্ষার্থীরা ভয়ে স্কুলে যায় না। শিক্ষকরাও এসে চলে যায়। সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোন্তফা বলেন, স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না ওই গ্রামের ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী। হাজী মুকসুদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুঠোফোনে বলেন, এইমাত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ওই গ্রামের মাকছুদা বেগম দৌঁড়ে এসে চিৎকার করে কাঁদছে। সে বলছে তাদের বসত ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এই বিদ্যালয়ে ষাটবাড়িয়া গ্রামের ২৫জন শিক্ষার্থীর কেউই আসছে না। অরুয়াইল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ সাদী বলেন, খুনের পর ওই গ্রামের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একবারেই কমে গেছে। নিহত জাকিরের পিতা মোঃ আকবর আলী ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা শোকে কাতর। হরিপুর গ্রামের কেউ দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে ওই গ্রামে ভাংচুর লুটপাট করছে না। কে বা কাহারা এ গুলো করছে আমাদের জানা নেই। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আরশাদ বলেন, পুলিশ ওই গ্রামে নিয়মিত যাচ্ছে। আজও (গতকাল) সেখানে যাওয়ার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন এস আই বোরহান। প্রসঙ্গতঃ গত সোমবার হরিপুর ও ষাটবাড়িয়া গ্রামের সংঘর্ষে জাকির হোসেন নিহত হয়। নিহতের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে জজ মিয়াকে প্রধান আসামী করে ২৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।