পারিবারিক কলহের জের–সরাইলে দেবর ভাবী, পরীক্ষামূলক ফাঁসিতে কিশোরের আত্মহত্যা
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃসরাইলে পারিবারিক কলহের জের ধরে দেবর কলেজ ছাত্র রাজিব উদ্দিন (১৮) ও তিন সন্তানের জননী ভাবী আকলিমা বেগম (৩০) গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার খবর নিশ্চিত করেছে পরিবারের লোকজন। গৃহবধু আকলিমার বাবার বাড়ির লোকজনের দাবী এটা হত্যাকান্ড। ওদিকে ফাঁসির কষ্ট কেমন তা পরীক্ষা করতে গিয়ে সোহান (১৩) নামের এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে।
আজ শুক্রবার ভোরে ও বৃহস্পতিবার রাতে দুটি ঘটনাই ঘটেছে সদর উপজেলার উচালিয়া পাড়া গ্রামে। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করেছে। নিহত রাজিবের পারিবার ও এলাকাবাসী জানায়, উচালিয়া পাড়া গ্রামের তৈয়ব উদ্দিন মুন্সির সাত ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রাজিব সবার ছোট। রাজিব সরাইল ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের বিএম শাখার প্রথম বর্ষের ছাত্র। বড় ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩৩)। তার স্ত্রী মৃত মাজু মিয়ার মেয়ে আকলিমা। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে আকলিমা সবার ছোট। ভালই চলছিল হেলালের দাম্পত্য জীবন। গত নয় বছরে আকলিমার কূলজোরে আসে তৃষা (০৮), লামিয়া (০৫) নামের দুই কন্যা ও খালেদ (০১) নামের এক ছেলে সন্তান।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পারিবারিক বিষয় নিয়ে শ্বাশুড়ির সাথে আকলিমার বাক-বিতন্ডা হয়। মায়ের সাথে ভাবীর কথা বার্তায় কিছুটা ক্ষুদ্ধ হয় রাজিব। পরে এ বিষয়ে দেবর ভাবীর মধ্যে ও কথা কাটাকাটি হয়। ভাবীর গালমন্দ শুনে মনে প্রচন্ড কষ্ট পায় রাজিব। বিষয়টি জেনে বড় ভাই হেলাল রাজিবকে মারধর করে। জীবনের প্রথম বড় ভাইয়ের হাতে মার খেয়ে অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে রাজিব। দুপুর ১টার দিকে রাজিব তার মাকে বলে, “ মা আমার জন্য দোয়া করিও। তোমরা মনে কষ্ট নিও না। আমার আর এ দুনিয়াতে বেঁচে থেকে লাভ নেই।” সন্ধ্যার পর দীর্ঘক্ষণ ধরে রাজিবের কক্ষ ভেতরের দিকে লাগানো দেখে বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হয়। পরে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে খাটের উপরে গলায় উড়না পেছানো অবস্থায় রাজিবের নিথর দেহ পড়ে আছে। তাকে দ্রুত উপজেলা কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, রাজিব আগেই মারা গেছে।
রাজিবের মৃত্যুর খবর শুনে তার বড় ভাই হেলাল ষ্ট্রোক করে ফেলে। পরে তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে হেলাল ঢাকার একটি হাসপাতালের আইসিওতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। রাজিবের মৃত্যুর ঘটনার আধা ঘন্টা পর দেখা যায় আকলিমার শয়ন কক্ষের দরজা বন্ধ। কাছে এসে দেখা যায় কক্ষটির ভেতরের দিকে লক করা। অনেক চেষ্টা করে ওই দরজা খোলা সম্ভব হয়নি। পরে পেছনের দিকের জানালা ভেঙ্গে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে লোকজন। গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় কক্ষের মেঝে পড়ে থাকা অবস্থায় আকলিমার লাশ জানালা দিয়ে বের করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
ওদিকে আজ শুক্রবার ভোরে একই গ্রামের দক্ষিন পাড়ার বাসিন্ধা সৌদী প্রবাসী মোঃ হোসেন মিয়ার ছোট ছেলে মোঃ সোহান মিয়া (১৩) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসি দিয়ে দেবর ভাবীর আত্মহত্যার বিষয়টি সে জানে। ওই বাড়িতে সে গিয়েছিল। তার বাবা, দুই ভাই সোহাগ (২৭) ও সোহেল (২৩) সৌদী থাকেন। বাড়িতে শুধু মা ও সোহান। বৃহস্পতিবারে তার মা শিমরাইল কান্দি তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। বাড়িতে একা ছিল সোহান। সুযোগে ফাঁসির কষ্ট কেমন তা অনুভব করার জন্য পরীক্ষামূলক ফাঁসির চেষ্টা করেছিল সোহান। সেই চেষ্টাই তার জীবন কেড়ে নিল। আজ সকালে বাড়ির লোকজন দরজা ভেঙ্গে তার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে দেখে গলায় উড়না পেছানো অবস্থায় তার নিথর দেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলছে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আরশাদ বলেন, নিহত গৃহবধু আকলিমার বড় ভাই আক্তার মিয়া (৩৩) হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারন জানা যাবে। পরিবার সহ কারো কোন অভিযোগ না থাকায় সোহানের লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।