Main Menu

সরাইলে জাল রসিদে দলিল:: পালিয়েছে সাব রেজিষ্ট্রার

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ,সরাইল থেকে:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জাল রসিদে হেবা দলিল রেজিষ্ট্রি করেছেন সাব-রেজিষ্ট্রার। পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধ এ কাজটি করেছেন সাব-রেজিষ্ট্রার অভিযোগ আবদুর রশিদের।  আদালতে বিচারাধীন ওই জায়গার দলিল সম্পাদনের সময় স্বশরীরে হাজির হয়ে বাঁধা দেন ইউএনও মোহাম্মদ এমরান হোসেন। প্রথমে ক্ষুদ্ধ হলেও পরে দ্রুত দফতর থেকে পালিয়ে যান উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার মাইকেল মহিউদ্দিন আবদুল্লাহ। এ বিষয়ে সাব-রেজিষ্ট্রার ও আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন রশিদ। নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর ও অভিযোগ পত্র সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চুন্টা মৌজার সেঃ মেঃ ২১৮৮ দাগ হালে ৪৯৭৪ দাগের ২৬ শতক ভিটি বাড়ি ও সেঃ মেঃ ২১৮৯ হালে ৪৯৮৮ দাগে ৪১ শতক নাল ভূমির সম্পূর্ণ মালিক আবদুর রশিদ (৬০)। কিন্তু উভয় দাগের সম্পূর্ণ জায়গার মালিকানা দাবী করে সরাইল সহকারি জজ আদালতে দেওয়ানী (৮১/২০০৫ খ্রিঃ) মামলা দায়ের করেন মৃত ইজ্জত আলীর ছেলে আবদুর রাজ্জাক (৬৫)। সাক্ষ্য প্রমাণ কাগজ পত্রাদি পর্যালোচনা ও চুড়ান্ত শুনানী শেষে আদালত আবদুর রশিদের পক্ষে রায় দেয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে একাধিকবার আপিল করে ও হেরে যান আবদুর রাজ্জাক। সর্বশেষ রাজ্জাক বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে দেওয়ানী আপিল মোকদ্দমা করেন (নং-০৭/২০১৩ খ্রিঃ)। ওই মোকদ্দমা চলমান অবস্থায় রাজ্জাক পুরো জায়গা তার ছেলেদের নামে হেবা দলিল করে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেন। সাব-রেজিষ্ট্রার মাইকেল মহিউদ্দিনের সাথে শুরু হয় রফাদফা। বিষয়টি জানতে পেরে আবদুর রশিদ পূর্বের মামলার রায় ও বর্তমান আপিলের বিষয়টি লিখিত ও মৌখিক ভাবে জানান সাব-রেজিষ্ট্রারকে। রশিদের অভিযোগ আমলে নেননি রেজিষ্ট্রার। মোটা অংকের টাকার কাছে হার মেনে যায় গরীবের আকুতি। আবদুর রাজ্জাক চুন্টা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক সময়ের সহকারি কর্মকর্তা মোঃ আইয়ুব আলীর স্বাক্ষর ও সীল জাল করা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের একটি রসিদ (ইউ-৬২৬১২৯৮) জমা দেন রেজিষ্ট্রারের কাছে। ওই জাল রসিদের দ্বারা গত মঙ্গলবার রাজ্জাক তার ছেলেদের নামে ওই জায়গা হেবা দলিল সম্পাদনের কাজ শুরু করেন। বিষয়টি জেনে কাগজ পত্র দেখে নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন হাজির হন সাব-রেজিষ্ট্রারের দফতরে। তিনি জাল রসিদে মামলা চলমান ওই জায়গাটি রেজিষ্ট্রি করতে বাঁধা দেন। এতে চরম ক্ষুদ্ধ হন সাব-রেজিষ্ট্রার। এক পর্যায়ে ইউএনও’র মুভমেন্ট খেয়াল করে দ্রুত অফিস থেকে পালিয়ে যান সাব-রেজিষ্ট্রার। আবদুর রশিদের মেয়ে শাহানা বেগম (৩২) বলেন, রায়ের পর রাজ্জাক দুইবার আপিল করে হেরেছে। এটা তৃতীয় আপিল। জাল কাগজে দলিলের খবর জেনে সাব-রেজিষ্ট্রারের সাথে সাক্ষাত করেছিলাম। তিনি (রেজিষ্ট্রার) সাফ বলে দিয়েছেন, ৬০ হাজার টাকা দিলে দলিল করা থেকে বিরত থাকব। টাকায় দুনিয়ার সব কিছু হয়। টাকা না দিলে ওই দলিল হবেই। সরাইল উপজেলা ভূমি অফিসের কাননগো মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ভূমি উন্নয়ন করের রসিদটি জাল। কারন এই সিরিয়ালের কোন রসিদ সরাইল অফিসে নেই। নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত এসি ল্যান্ড মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, বর্তমান সাব-রেজিষ্ট্রার নিয়ম নীতি অমান্য করে কাগজপত্র যাচাই-বাচাই না করেই দলিল রেজিষ্ট্রি করছেন। এটা দাঙ্গা প্রবন এলাকা। এসব দলিলের কারনে এখানে  ভূমি সংক্রান্ত দাঙ্গা হাঙ্গামা এমন ভাবে বৃদ্ধি পাবে তখন প্রশাসন থামাতে পারবে না। ওইদিন জাল রসিদে দলিল রেজিষ্ট্রি করতে বাঁধা দেওয়ায় তিনি প্রথমে ক্ষেপে যান। পরে অফিস থেকে পালিয়ে গেছেন। অভিযুক্ত সাব-রেজিষ্ট্রার মাইকেল মহিউদ্দিন আবদুল্লাহ টাকা নেয়া ও চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন। জাল রসিদের প্রসঙ্গে বলেন, রেজিষ্ট্রি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র হাতে পেলেই দলিল করা যায়। জায়গার উপর মামলা বা আপিল রেজিষ্ট্রির জন্য কোন বাঁধা নয়। পালিয়ে যায়নি। মনের অবস্থা ভাল ছিল না। তাই চলে এসেছি। ওদিকে সাব-রেজিষ্ট্রার ও আবদুর রাজ্জাককে আসামী করে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন আবদুর রশিদ। ওই অভিযোগ পত্রটি বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করেছেন ইউএনও। প্রসঙ্গত. সম্প্রতি সরাইলে জাল পর্চা, খতিয়ান ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রসিদের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কাগজ ব্যবহার হচ্ছে দলিল রেজিষ্ট্রি, ব্যাংক ঋন ও বিদ্যুত সংযোগের কাজে। প্রতারিত ও নিঃস্ব হচ্ছে দরিদ্র অসহায় এবং নিরীহ লোকজন।






Shares