সরাইল হাসপাতাল শুধু নামেই ৫০ শয্যা!!
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকেঃসরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে পাঁচ বছর। উপজেলার ছয় লক্ষাধিক লোক আশায় বুক বেঁধেছিল। দৃশ্যমান অবকাঠমোগত উন্নয়ন হলেও আভ্যন্তরিন নানাবিধ সমস্যায় বাঁধা গ্রস্থ হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ডাক্তারদের পর্যাপ্ত কক্ষের অভাব। রয়েছে শয্যা ও নিরাপত্তা জনিত সমস্যা। চালক থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে নেই এম্বোলেন্স। এক কক্ষের রান্না ঘরে অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটছে বাবুর্চির। হাসপাতালটি শুধু নামেই ৫০ শয্যা। সরজমিনে ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০ জানুয়ারী ২০০৬ সালে ৩১ হতে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়। আর ৫০ শয্যার কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারী থেকে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ছয় লক্ষাধিক লোক উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিল। ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর হাসপাতালটির দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই। বাড়েনি আশানুরুপ সেবার মান। এর জন্য অনেকাংশে দায়ী আভ্যন্তরিন নানাবিধ সমস্যা। কনসালটেন্ট ও বিশেষজ্ঞ সহ ডাক্তার আছেন বর্তমানে ৩৪ জন। তাদের বসার জন্য নেই পর্যাপ্ত কক্ষ। প্রতি কক্ষে তিনজন করে বসলেও ১১-১২টি কক্ষের প্রয়োজন। আছে মাত্র ৫টি। সেখানেই গিজাগিজি করে তারা দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। বসার জায়গা না থাকায় অনেক ঘুরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। তারপর রয়েছে সেবিকা সংকট। এ হাসপাতালে সেবিকার পদ রয়েছে ১৬টি। সেবিকা আছে মাত্র পাঁচজন। কেউ ছুটিতে গেলে বা রোগাক্রান্ত হলে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। অপরদিকে রোগীদের দূর্ভোগ বেড়ে যায়। ত্রিশ বছর আগের এক্স-রে মেশিন দিয়ে এখনো চলছে রোগ নিরীক্ষার কাজ। এখানে নেই আলট্রাসনো গ্রাফি মেশিন। নতুন ভবনে রোগীদের শয্যার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে ভর্তিকৃত রোগীদের মান্ধাতার আমলের ৩১ শয্যার কক্ষ গুলোতেই এলোমেলো ভাবে রাখা হচ্ছে। বারান্দা এবং কক্ষের ভিতরে খুবই কষ্টে ৮টি বেড বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৯টি। মুখে আর সাইনবোর্ডে ৫০ শয্যা বললেও বাস্তবে এখনো ১১ শয্যা কম। রোগীর খাবার রান্নাকারী বাবুর্চির জন্য নেই আলাদা কোন কক্ষ। হাসপাতাল শুরুর সময়ে ছোট একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছিল রান্না করার জন্য সেখানটিতেই জীবন কাটছে তার। যেখানে বসে রান্না করছে সেখানেই রাখছে মালামাল। নেই কোন ষ্টোর রুম। নেই বাবুর্চি ঘুমানোর কক্ষ। রাতে অন্যত্র ঘুমান বাবুর্চি। গুরুতর অসুস্থ্য রোগী বহনকারী এম্বোলেন্স নেই আজ সাত বছর। সাত বছরে এম্বোলেন্সের ফুয়েল ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ সরকারি বরাদ্ধ ফেরত গেছে ৭ লক্ষাধিক টাকা। চালককে বসিয়ে রেখে প্রতি মাসে বেতন দেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। রোগীদের দূর্ভোগ তো কমছে না। হাসপাতালের পূর্ব ও পূর্ব দক্ষিণ কোনায় সীমানা প্রাচীরের নিচের মাটি সরে গেছে। তৈরী হয়েছে বড় ধরনের ফাঁকা। সেই ফাঁকা শুধু দিনদিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। দিনে রাতে ওই ফাঁকা দিয়ে অবাধে ঢুকছে চুর ছিনতাইকারী ও মাদকাসক্তরা। সন্ধ্যার পর হাসপাতালের বেশ কয়েকটি স্থানে বসে বহিরাগত যুবকরা নিশ্চিন্তে চালায় মাদকসেবন ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কোয়াটারে বসবাসকারী ডাক্তার ও কর্মচারিরা। সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে দালাল। আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো থেকেই দালালদের উত্থান। পুরুষেরর তুলনায় মহিলা বা যুবতি দালালের সংখ্যাই বেশী। এদের কেউ বোখরা কেউ সালোয়ার কামিজ পড়া। এরা সব সময় জরুরী বিভাগ ও ডাক্তারদের কক্ষের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। কখনো হাসপাতালের প্রধান ফটকে ওত পেতে থাকে। এরা অজপাড়া গা থেকে আসা অনেক অশিক্ষিত সোজা রোগীদের ফুসলিয়ে নিয়ে যায় প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে। যেখানে চিকিৎসা ও নিরীক্ষা দুটোই ব্যয়বহুল। সেখান থেকে দালালরা পায় মোটা অংকের কমিশন। হাসপাতালের কার্যকরী কমিটির এক সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ঘোষনা দিয়েছিলেন এক মাসের মধ্যে সরাইল হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার। সেই ঘোষনার বাস্তবায়ন ঘটেনি আদৌ। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু ছালেহ মোঃ মুছা খান এম্বোলেন্স ও রান্না ঘরের সমস্যাটিকে প্রকট স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালের সকল সমস্যা প্রতিকারের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিত ভাবে জানিয়েছি। দালাল এখন আর আগের মত নেই।