Main Menu

সরাইলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিকের মৃত্যুর নেপথ্যে, মদ্যপ কর্মচারী ছাদেকের অবহেলা

+100%-

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃসরাইলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রুহুল আমীন (২৪) নামের বিদ্যুৎ শ্রমিকের মৃত্যুর নেপথ্যে মদ্যপ কর্মচারী ছাদেকের অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রয়েছে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের খাম-খেয়ালি। সরাইল সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে শাহবাজপুর ৩৩ কেভি সাব-ষ্টেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছাদেক মদ পান করে ছিলেন মাতাল। ষ্টেশন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেও রুহুলকে শাটডাউনের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিল ছাদেক। মিথ্যা আশ্বাসকে সরল মনে বিশ্বাস করেই জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে অস্থায়ী কর্মচারী রুহুলকে। মাদকাসক্ত ছাদেকের দায়িত্বে অবহেলার কারনে পূর্বেও একাধিক দূর্ঘটনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে আল্লাহর কুদরতে রক্ষা পেয়েছে অনেক কমূচারী। এমন তথ্য দিয়েছেন সরাইল পিডিবি অফিসের একাধিক কর্মচারী। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবারও বিদ্যুত অফিস ছিল একদম ফাঁকা। অনুসন্ধানে ও সরাইল পিডিবি’র একাধিক কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শাহবাজপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে তিতাস নদীর পাড়ে ঝরাজীর্ণ পরিত্যাক্ত একটি ভবনের পাশে সরাইল পিডিবি’র ৩৩ কেভি সাব-ষ্টেশন। সেই ষ্টেশনের দায়িত্বে রয়েছেন ওই গ্রামের ছাদেক মিয়া নামের এক লোক। মাষ্টার রোল ভিত্তিতে নিয়োজিত ছাদেকের মাসিক বেতন ৭-৮ হাজার টাকা। শাটডাউন দেওয়া ও উত্তোলন করা ছাদেকের দায়িত্ব। এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছাদেকের বিরোদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ছাদেক বেশীর ভাগ সময়ে নিজের প্রয়োজনে বাড়িতে ও বাজারে অবস্থান করেন। ষ্টেশন ফেলে বিভিন্ন এলাকায় ধান্ধায় ব্যস্ত থাকেন সর্বক্ষণ। এ ছাড়া অধিকাংশ সময় মদ পান করে মাতাল হয়ে থাকেন। তাই প্রায় সময় তিনি দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারেন না। মাতাল অবস্থায় ছাদেক বিদ্যুত কর্মচারীদের কখন কি তথ্য গ্রহন করেন ও দেন নিজেই জানেন না। দূরে থেকেও বলে থাকেন ষ্টেশনেই আছি। ফলে সরাইল পিডিবি’র লোকজন বিদ্যুতের কাজ করতে বড় ধরনের দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন হর-হামেশা। ছাদেকের খাম খেয়ালির কারনেই সর্বশেষ গত বুধবার সকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে রুহুলকে। ছেলে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে রুহুলের মা আর বিধবার শাড়ি পড়েছে তার স্ত্রী। ওইদিন সকাল ৯টায় রুহুল ডাল কাটতে যায় রসুলপুর এলাকায়। তার সাথে যায় রিয়াজ উদ্দিন নামের এক শ্রমিক। রুহুল ছাদেককে মুঠোফোনে ফোন করে শাটডাউন নেয়। কে জানত মদ পান করে সেই সময়ে ছাদেক ছিল মাতাল। অবস্থান করছিল সাব-ষ্টেশন থেকে দূরে। শাটডাউন না দিয়েই মাতাল অবস্থায় রুহুলকে শাটডাউন দেওয়ার কথা জানিয়েছে ছাদেক। ছাদেকের উপর ভরসা করে নিশ্চিন্তে এস টি তারের জাম্পার লাগাতে শুরু করে রুহুল। মূহুর্তের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পরপাড়ে পাড়ি জমায় রুহুল। রুহুলের মৃত্যুর সংবাদে যখন উত্তাল সরাইল সেই সময় শাহবাজপুর বাজার থেকে দৌঁড়ে গিয়ে ছাদক শাটডাউন দেয়। ওইদিন দুপুর বেলা রুহুলের স্বজনরা শাহবাজপুর গিয়ে ছাদেককে মারধর করেছে। ছাদেক কি পারবে রুহুলের স্ত্রীকে স্বামী আর মাকে সন্তান ফিরিয়ে দিতে ? মদ্যপ ছাদেকের অবহেলায় এভাবে আর কত তাজা অকালে জড়বে ? এমন প্রশ্ন আজ রুহুলের পরিবার ও সচেতন লোকজনের। বুধবার রাতেই কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কিছু গন্যমান্য লোকদের নিয়ে বসে রুহুলের লাশের মূল্য নির্ধারন করেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু ঘটনার হুতা ছাদেক এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। গত কয়েক মাস পূর্বে তপু (৩১) নামের এক অস্থায়ী কর্মচারী কাজ করতে গিয়েছিল স্বল্প নোয়াগাঁও এলাকায়। ছাদেকের কাছে মুঠোফোনে শাটডাউন চেয়ে তপু বসেছিল ট্রান্স মিটারের উপর। শাটডাউন না দিয়েই দেওয়ার কথা বলেছিল সেটা অজানা ছিল তপুর। কাজ করতে গিয়ে তপু দেখে তারে বিদ্যুত আছে। লাফিয়ে উপর থেকে নিচে পড়ে কোন রকমে সে যাত্রায় প্রাণ বাচায় তপু। কিন্তু ততকক্ষণে তপুর হাতের একটা বড় অংশ পুঁড়ে যায়। ওই ঘটনার পরও কর্তৃপক্ষ ছাদেকের বিরোদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযুক্ত ছাদেক মিয়া তাকে মারধর করার কথা স্বীকার করে বলেন, মদ পান সহ অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা। শাটডাউন দিয়েছিলাম। ও সি আর- এর সমস্যার কারনে অনেক সময় দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। ২০১০ সালে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে মারা যায় কাচারী পাড়া এলাকার কাতু মিয়ার ছেলে তিন সন্তানের জনক মাসুদ। সালিস সভা করে মাসুদের লাশের মূল্য নির্ধারন করা ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও আড়াই শতক জায়গা। মাসুদের বৃদ্ধ পিতা কাতু মিয়া বলেন, অনেক কষ্টে বহুদিন ঘুরে ৬-৭ মাসে পেয়েছি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাকি ৫০ হাজার টাকা পায়নি আদৌ। জায়গার জন্য অনেক আবেদন ছবি কাগজপত্র দিয়েছি। কিছুই হয়নি। তবে আমি ২ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী পেয়েছি। দেড় হাজার টাকা ঘর ভাড়া দেয়। রুহুলের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবারের ন্যায় গত বৃহস্পতিবারেও বিদ্যুত অফিসে কোন কাজ হয়নি। অফিস সহকারি সাইফুল ইসলাম স্বপন ছাড়া কোন ষ্টাফই আসেননি অফিসে। সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ) সুব্রত রায় বলেন, রুহুল মৃর্ত্যুর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ইলেকট্রিক বিষয় ছাদেকের অবহেলা থাকতে পারে। আজ থেকে (শুক্রবার) শাহবাজপুর ষ্টেশনে ফিরোজ নামের একজন কর্মচারী কাজ করবে। মার্চে কুট্রাপাড়া সাব-ষ্টেশন চালু হলে সকল সমস্যা সমাধান হবে।






Shares