রক্ষকই ভক্ষক, বাল্য বিয়ে ঠেকাবে কে?
স্কুল ছাত্রীকেই বিয়ে করলেন শিক্ষক!



মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ অবশেষে সরাইলে এক স্কুল ছাত্রীকেই বিয়ে করলেন শিক্ষক। উপজেলা প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে ঘটা করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন তিনি।
গত শুক্রবারে বৌভাত ও বৃহস্পতিবারে ছিল বিয়ে। বর অরুয়াইলের চরকাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জিয়াউল আমীন ও কনে ২০১৫ সালের জেএসসি পরীক্ষার্থী রিনা বেগম (১৬)। এ বিয়ের পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন প্রভাবশালী চক্র। ছাত্রীর অভিভাবক ৭ লাখ টাকা দেনমোহরের কথা বললেও নিবন্ধনকারী বলছেন ভলিয়মে ওঠেনি। স্থানীয় লোকজনের রসালো মন্তব্য- রক্ষকই ভক্ষক, বাল্য বিয়ে ঠেকাবে কে?
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অরুয়াইলের রাণিদিয়া গ্রামের রুহুল আমীনের ছেলে স্কুল শিক্ষক জিয়াউল আমীন। আর একই ইউনিয়নের ধামাউড়া গ্রামের হাজী কাঞ্ছন মিয়া কন্যা রিনা বেগম। কাঞ্ছন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি করে অরুয়াইলে বসবাস করছেন। ২০১০ সালে ধামাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে যোগদান করেন জিয়াউল। সেখানে চাকুরি করেন দীর্ঘদিন। রিনা বেগম ওই স্কুলেরই ছাত্রী। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেছিল রিনা। এ বছরের মার্চ মাসে শিক্ষক জিয়াউল আমীন একই ইউনিয়নের চরকাকুরিয়া সিরাজ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশেনে চলে যান। এরপরই জিয়াউলের সাথে স্কুল ছাত্রী রিনার বিয়ের একটা গুঞ্জন ওঠে। উভয় পরিবারের লোকজন মিলে গত বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারন করেন। পাত্রী প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষককে এ বিয়ে থেকে আপাতত বিরত থাকার নির্দেশ দেন নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ইসরাত। ভেস্তে গেছে উপজেলা প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। মাঠে সক্রিয় একটি প্রভাবশালী চক্রের সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার মহা ধূঁমধাঁমে অরুয়াইল সদরেই দেড় শতাধিক মেহমানের অংশ গ্রহনে হয়ে গেল বিয়ে। আর গত শুক্রবার পাত্রের বাড়ি রাণিদিয়া গ্রামে ২ শতাধিক মেহমানকে খাইয়ে হয়েছে বৌভাত অনুষ্ঠান। উভয় অনুষ্ঠানে এলাকার শিক্ষক জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ নানা শ্রেণি পেশার লোকজন অংশ গ্রহন করেন।
ছাত্রীর বড় ভাই অরুয়াইল ইউপি শাখা যুবসংহতির সভাপতি মো. দুলাল মিয়া ৭ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হওয়ার কথা স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার অল্প সময় বাকী আছে। অন্য একটা সমস্যা ছিল তাই বিয়ে দিয়েছি। ভাই এটা নিয়ে কিছু করতে যাবেন না। আমি এমপি’র লোক। আমি বিপদে পড়লে আপনিও বিপদে পড়বেন। বিয়ের নিকাহ নিবন্ধনকারক মো. মোজাম্মেল বৃহস্পতিবারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিয়েটি ভলিয়মে লিপিবদ্ধ হয়নি।
অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি ও কামাল সাহেব বিয়েতে গিয়েছিলাম। আমার আগের চেয়ারম্যানের দেওয়া সনদ অনুসারে ছাত্রীর বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ১৩ দিন। প্রধান শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, রিনা ২০১৫ সালে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। জন্ম তারিখ আমার জানা নেই। আগে এ গুলোর রেকর্ড রাখতাম না। অভিভাবকরা ইচ্ছেমত দিত আমরাও আন্তাজ করে বসিয়ে দিতাম। গত ২-৩ বছর ধরে জন্ম তারিখের রেকর্ড রাখছি। সহকারি শিক্ষা অফিসারের নির্দেশানুসারে জিয়াউলের বড় বোনকে এ বিয়ে থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। তারা শুনেননি। বিয়ে হয়ে গেছে। তারা এমপি’র লোক। আরো অনেক শক্তিশালী লোক আছে। আমি কি করব?
সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, মেয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর না হলে আমি প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছি। এখন শুনতেছি বিয়ে হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ইসরাত এ বাল্য বিয়েতে বাঁধা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিব।