এমপি শিউলির বক্তব্যের প্রতিবাদে রফিক উদ্দিন ঠাকুর ও আওয়ামীলীগ নেতাদের সংবাদ সম্মেলন



মোহাম্মদ মাসুদ :সরাইলে সংরক্ষিত এমপি ও আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক সহ-সভাপতি প্রয়াত ইকবাল আজাদের স্ত্রী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলি আজাদ) বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর ও আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।
শনিবার দুপুরে সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর তার নিজ কার্যালয়ে এ সম্মেলন করেন।
এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১৯/০৬/২০২৩ ইং তারিখে মহান জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন-১২ এর সাংসদ উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলি আজাদ) এর দেয়া বক্তব্যে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও আপত্তিকর তথ্য তুলে ধরেছেন। শিউলি আজাদ তার বক্তব্যে স্বার্থ হাসিলের হীন উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত বিষয়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের পায়তারা করছেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন যে, মুস্তাক উত্তরসূরী তাহের উদ্দিন ঠাকুর চক্র সরাইলে সক্রিয়। যে চক্রটি ১৯৭৪ সালে তার শ্মশুর আব্দুল খালেক, ১৯৮৪ সালে ভাশুর হুমায়ন আজাদকে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে তার স্বামী ইকবাল আজাদকে হত্যা করে । তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন যে, ইকবাল আজাদ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাটিতে যাতে সকল অপশক্তির হস্তক্ষেপ মুক্ত থেকে দ্রুত বিচার কার্য সম্পন্ন হয় সেই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।
এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ২৭/৬/২০২২ ইং তারিখেও তিনি মহান জাতীয় সংসদে একই ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছিলেন। যার প্রতিবাদ আমরা ওই সময় করেছিলাম। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ইকবাল আজাদ হত্যাকান্ডের মিথ্যা মামলায় আমাদের যাদেরকে আজ হয়রানী করা হচ্ছে তাদের প্রায় অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম কুশিলব তাহের উদ্দিন ঠাকুরের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন সময়ে মিটিং, মিছিল ও প্রতিবাদ, সমাবেশ করেছি। অথচ তিনি মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সাথে মেশানোর অপচেষ্টা করেছেন, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক, আমরা এর জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
শিউলি আজাদের শ্মশুর মৃত আব্দুল খালেক একজন তালিকা ভুক্ত যুদ্ধাপরাধী ছিলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু হিন্দু পরিবারের জায়গা-জমি দখল করে তিনি অর্থ সম্পদের মালিক হন। সরাইল উপজেলায় যতগুলি গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল তার প্রায় সবগুলোতেই আব্দুল খালেকের সম্পৃক্ততা ছিলো। সরাইলের মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্যমতে দেশ স্বাধীন হবার পর কিছু দিন আব্দুল খালেক আত্মগোপনে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম কুশিলব তাহের উদ্দিন ঠাকুর তথ্য প্রতিমন্ত্রী হবার পর আব্দুল খালেক একটি টয়োটা গাড়ি উপহার দেন। তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সরাসরি হস্তক্ষেপে আব্দুল খালেক মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তৎকালীন সময়ে আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে সরাইলের নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর-বাড়ি দখল থেকে শুরু করে শারিরিকভাবে নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু করেন। তার অত্যাচার-নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ১৯৭৪ সালে আব্দুল খালেককে
হত্যা করেন ।
তার ভাশুর হুমায়ন আজাদ ছিলেন ঠিকাদার। তিনি ঠিকাদারী সংশ্লিষ্ট কাজে কুমিল্লা যাবার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন । এলকাবাসী এবং ইকবাল আজাদের পরিবারের সকলেই অবগত আছেন এবং একবাক্যে স্বীকার করেন।
তিনি আরো বলেন, বিগত ২১/১০/২০১২ ইং তারিখে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ও মাদকসেবীদের হাতে ইকবাল আজাদ দিবালোকে সরাইল বাজারে অসংখ্য মানুষের সম্মুখে নিহত হন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। কিন্তু উক্ত হত্যাকে শিউলি আজাদ সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা করছেন। এই হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সরাইল উপজেলা কমিটির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতিগণ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুবলীগের আহ্বায়ক, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার – ডেপুটি কমান্ডার, উপজেলা কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সহ সংগঠনের ২৯ জন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যা মামলায় আসামী করেন। যাতে স্পষ্ট দৃশ্যমান যে, তিনি সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে একক আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
তার স্বামী নিহতের ঘটনা সত্য। কিন্তু আমরা যারা এই হত্যা কান্ডের সাথে কোনভাবেই জড়িত নয় তাদেরকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা আসামী করা হয়েছে। আমরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমরা বলতে চাই যে, ইকবাল আজাদ হত্যা মামলাটি পূনঃ তদন্ত করতঃ হত্যাকান্ডে জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং আমরা যারা নির্দোষ তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা হোক ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুল আবেদন মহান সংসদে এই মিথ্যাচার এবং এই মিথ্যা মামলার পূনঃ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক ।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল জব্বার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত আলী, যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মাহফুজ আলী, সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী, উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিব মিয়া। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি হাজী ইকবাল হোসেন প্রমুখ।