উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত:: সরাইলে ব্যাংক কর্মকর্তা সহ তিন শিক্ষা কর্মকর্তা অবরুদ্ধ
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল :: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের সময় হাতে নাতে ধরে ফেলেন অভিভাবকরা। এমন অনিয়মের প্রতিবাদে মূহুর্তের মধ্যে কয়েক শত অভিভাবক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের উপর চরম ভাবে ক্ষুদ্ধ হয়। স্থানীয় লোকজন ব্যাংক কর্মকর্তারসহ তিন শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। লোকজনের নানা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের। এ সময় তার পাশে হতকচিত অবস্থায় বসা ছিলেন দুই সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার নোয়াগাঁও পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় অভিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সমগ্র উপজেলার ন্যায় গতকাল কালিকচ্ছ-নোয়াগাঁও ক্লাস্টারের উপবৃত্তির টাকা বিতরন করতে নোয়াগাঁও পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নজরুল মিয়া। মোট ৫টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪১ লাখ টাকা বিতরনের কথা। অন্য ৪ টি বিদ্যালয় হল-নোয়াগাঁও পূর্ব, নোয়াগাঁও চওড়াগুদা, নোয়াগাঁও কাজিউড়া ও নোয়াগাঁও মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকাল ১১টা থেকে সরাইল জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক দীন মোহাম্মদ শরীফ মৈশানকে সাথে নিয়ে শুরু করেন বিতরন। তিন মাসে ৯’শ থেকে ১২’শ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তারা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ১’শ/২’শ ও ৩’শ টাকার বেশী দেননি।
টাকা কম দেওয়ায় এক সময় ওই এলাকার অভিভাবকরা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। ফলে মূহুর্তের মধ্যে গ্রামের কয়েক শত মহিলা পুরুষ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের প্রতিবাদে ফোলে ফেঁপে উঠেন। তারা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের। ঘটনা জেনে ও অভিভাবকদের উত্তেজনা দেখে তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। বিক্ষুদ্ধ অভিভাকরা দুপুর ১টার দিকে শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের, তার দুই সহকারি মোস্তফা কামাল, নজরুল মিয়া ও প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। এ সময় ভেতরে আটকা পড়েছিল সকল সহকারি শিক্ষকরা। অভিভাবকরা ক্ষোভে তাদের কাছ থেকে উপবৃত্তির ১০-১২টি পাস বই ও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সরজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠ ভবনের নীচে উপরে শুধু মানুষ। পুরো বিদ্যালয় জুড়ে বিরাজ করছে উত্তেজনা। একটি কক্ষের ভেতরে অবরুদ্ধ আছেন শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা। আরেক দল বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পাস বই হাতে মাঠে ঘুরে ঘুরে চিৎকার করছেন কতিপয় অভিভাবক। মাঠে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে সকল শিক্ষকের বদলির দাবী করছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিরা বেগমকে ১২’শ টাকার মধ্যে ৫’শ টাকা, তানজিনা রুজিনা তিশা ও জুনাঈদ খানকে ১২’শ টাকার মধ্যে ৫’শ টাকা, আদিলকে ১১’শ টাকার মধ্যে ৩’শ টাকা দিয়েছেন কর্মকর্তরা। আর দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মোস্তাকিমকে ৯’শ টাকার মধ্যে মাত্র ১’শ টাকা দেয়া হয়।
অভিভাবক জামাল হোসেন ও আনিছুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে শিক্ষা কর্মকর্তারা নিয়মিত এভাবে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করছেন। সরকার চাচ্ছে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে। আর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিজেদের আখের গুছাতে ব্যাস্ত। তারা ভাল উদ্যেশ্যকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছেন। আমরা তাদের বিচার চাই। তিন ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকদের সাময়িক শাস্তি দিয়ে আগামী ১৯ তারিখে সকলকে পুরো টাকা উপবৃত্তি প্রদানের আশ্বাস দেওয়ায় লোকজন শান্ত হয়।
নোয়াগাঁও পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোঃ করিম খান ক্ষোভের সাথে জানান, উনারা উপ-বৃত্তির টাকা বিতরন করেন অতি গোপনে। আমাদেরকে কোন সময় জানান না। এবার তাদের অপকর্মের মুখোশ উম্মোচিত হয়েছে। অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকেন। কোন উত্তর দেননি। তবে সৈয়দ আবুল খায়ের শুধু বলেন, আমি এখন কি করব?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, বিষয়টি জেনে আশ্চর্য হলাম। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।