৮০ শহীদের স্বজনদের স্বপ্ন পূরণ
সরাইলে ‘বিটঘর গণহত্যা দিবস’ পালিত



মো: মাসুদ, সরাইল:: যথাযোগ্য মর্যাদায় সরাইলের ‘বিটঘর গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর গতকাল শনিবার দ্বিতীয়বার বধ্যভূমিতে ফুল দিয়েছেন সরাইল উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের উদ্যোগে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ৮০ শহীদের স্বজনদের। কাঁদলেন ও কাঁদালেন শহীদ জায়া মালেকা খাতুন। সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ^র ইউনিয়নের বিটঘর।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়ারণ্য। এখানে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় নিয়েছিল। গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। এখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্নস্থানে পাকিস্থানি সেনাদের ওপর গেরিলা হামলা চালাতো। সরাইল থানাও আক্রমণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ৩০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা বিটঘর গ্রামের পাশর্^বর্তী বেড়তলা গ্রামে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের (রাজাকার) সঙ্গে ঘন্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এদিন সন্ধ্যার পর পাশর্^বর্তী দুর্গাপুর গ্রামবাসী পাকিস্তানি এক সেনা সদস্যকে বল্লমের আঘাতে হত্যা করে। সেই সাথে মনু মিয়া নামের এক রাজাকারকে পিটিয়ে আহত করে। এসব ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ৩১ অক্টোবর দুই শতাধিক পাকিস্তানি সেনা সদস্য বিটঘর গ্রামের ৬১টি জনসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের ৮০ জনকে একত্র করে নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লাশগুলো বিটঘর ছোটখালে ফেলে দেয়।
এ ঘটনাটি অধ্যাপক মুনতাসির মামুন সম্পাদিত এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মুক্তিযুদ্ধ গবেষক কবি জয়দুল হোসেন রচিত ১৯৭১:গণহত্যা-নির্যাতন নির্ঘন্ট গ্রন্থমালা:৩৫, বিটঘর গণহত্যা গ্রন্থমালায় বিশদভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। গণহত্যায় শহীদ সামসু মিয়ার স্ত্রী মালেকা খাতুন তার স্বামীসহ সকল শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে ৪৮ বছর ধরে আগলে রাখা ১৫ শতক জমি বিটঘর বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য দান করেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁনের উদ্যোগে সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। সেখানে ৮টি স্মৃতিফলকে ৮০ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ওই বছরই প্রথম উপজেলা প্রশাসন বধ্যভূমিতে ফুল দিয়েছিল।
সকাল ১১টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা প্রিয়াংকা, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাররা ও এলাকাবাসী দ্বিতীয়বার বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন- সরাইল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বদর উদ্দিন, প্রভাষক মোহাম্মদ মাহবুব খান, ইউপি চেয়ারম্যান মো. দ্বীন ইসলাম ও ইউপি সদস্য মো. ইজ্জত আলী। পরে শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এ সময় শহীদ জায়া মালেকা খাতুনসহ শহীদদের স্বজনরা কাঁদছিলেন। কাঁদিয়েছেন অনেককে। তারা বলেন, ৪৮ বছর ধরে ৩১ অক্টোবর এলেই এখানে বসে শুধু কেঁদেছি। এতদিনে আল্লাহ জেলা প্রশাসক ও সরাইল উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিলসহ অনেকে বলেন, এখানের গণহত্যায় পাকবাহিনীকে সহায়তা করেছে রাজাকার মতিন ঠাকুর, মনু মিয়া ও টিঘরের আব্দুল্লাহ।