পুলিশ মোটা অংকের টাকায় বিতর্কিত এ মামলার অভিযোগ পত্র দেওয়ার চুক্তি করেছিল
সরাইল প্রতিনিধিঃ : কলেজের প্রভাষক মোঃ তাউস মিয়া (৩০)। শাহজাদাপুর গ্রামের ইরা মিয়ার ছেলে। ফিরোজ মিয়া ডিগ্রী কলেজের কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক তাউস। পেশাগত কারনে থাকেন আশুগঞ্জে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি যাওয়ার পথে নামেন শাহবাজপুরে। সাথে সাথে তাকে আটক করেন ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা এএসআই আক্তার হোসেন। নিয়ে যান শাহবাজপুর পুলিশ ক্যাম্পে। কি কারনে তাউসকে আটক করেছেন প্রথমে তিনি নিজেও বলতে পারেননি। কারন তার কাছে তখনও তাউসের বিষয়ে কোন অভিযোগ, ওয়ারেন্ট বা অন্য কিছুই নেই। তিনি কথা বলেন সরাইল থানার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। অনেক্ষণ পর তাউসকে নিয়ে রওয়ানা দেন থানার উদ্যেশ্যে। চলন্ত পথে আবার থানা পুলিশের ফোন। পাল্টে যায় পূর্বের সিদ্ধান্ত। তাউসকে নিয়ে এএসআই আক্তার হোসেন চলে যান জেলা শহরের দিকে। চলন্ত গাড়ি থেকে মুঠোফোনে কথা বলেন সরাইল থানা কর্তৃপক্ষের সাথে। পরে তাউসকে নিয়ে যাওয়া হয় সিআইডিতে। তাউসের প্রশ্ন কেন তাকে আটক করল পুলিশ? পরে কেন তাকে দেয়া হল সিআইডিতে। এ বিষয়ে ক্যাম্পের এ,এস,আই আক্তার হোসেন, এস,আই আব্দুল আলীম ও ওসি’র বক্তব্যে যথেষ্ট গড়মিল পাওয়া গেছে। দুপুরে আক্তার হোসেন বলেন, ওসি স্যার ও আলীম স্যার সপ্তাহ দিন আগে আমাকে বলেছেন শাহজাদাপুরের কয়েকজন আসামী আছে, তোমাকে ধরতে হবে। তাই আজ আমি তাউসকে ধরেছি। ধরেই স্যারদের জানিয়েছি। তারা তাউসকে নিয়ে থানায় যেতে বলে। আমি শাহবাজপুর থেকে তাউসকে নিয়ে রওয়ানা দেয়। কুট্রাপাড়া মোড়ে গিয়ে স্যারদের ফোন দেয়। তখন ওসি স্যার বলেন তাউসকে নিয়ে জেলায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চলে যেতে। পরে আবার বলেন সিআইডিতে নিয়ে যেতে। চাকুরী করলে তো স্যাররা যা বলে শুনতে হবে। দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে (মুঠোফোনে) কথা হয় তাউসের সঙ্গে। তাউস তখন জানায় আক্তার স্যার আমাকে নিয়ে সরাইল থানার ওসি স্যারের নির্দেশে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শাহবাজপুর ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা এস আই আবদুল আলীম মুঠোফোনে বলেন, তাউসের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে তাকে ক্যাম্প থেকে সরাইল থানায় নিয়ে আসতে বলেছি। থানার মুন্সি আবুল বাশার মুঠোফোনে জানান, শাহবাজপুর ক্যাম্প থেকে তাউসকে থানায় নিয়ে আসতেছে। থানায় আসলে তার বিরুদ্ধে কি আছে? কিন্তু বিকেল ৫টা ২৮ মিনিটে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলী আরশাদ কিছুটা হতকচিত হয়ে বলেন, না পুলিশ নয়। তাউসকে সিআইডি’র ইন্সপেক্টর আব্বাস সাহেব ধরেছেন। বুঝছেন এই আর কি। সন্দেহ সংশয় দানা বাধে তাউসের পরিবার ও পরিজনের মনে। নানা কথা মন্তব্য করতে থাকেন তারা। তাউসের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত বছর শাহজাদাপুরে একটি সরকারি পুকুরের লীজ পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে ফিরোজ মিয়া (৮০) নামের এক বৃদ্ধ খুনের নাটক সাজায় ইউপি সদস্য মফিল মিয়া। বিতর্কিত ওই হত্যা মামলায় প্রভাষক তাউসকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলাটির আই ও ছিলেন এস, আই আব্দুল আলীম। বানোয়াট এ মামলার বিরুদ্ধে গ্রামের হাজার হাজার নারী পুরুষ মানববন্ধন করেছে। করেছে মিটিং ও মিছিল। পুলিশের তদন্তে আসামী পক্ষের নানা ধরনের অভিযোগের ফলে মামলাটি চলে যায় সিআইডিতে। সেখানে মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধিন। তাউসের পরিবারের একাধিক সদস্যে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ মোটা অংকের টাকায় বিতর্কিত এ মামলার অভিযোগ পত্র দেওয়ার চুক্তি করেছিল বাদীর সাথে। কিছু টাকা লেনদেনও হয়েছিল। মামলাটি হঠাৎ সিআইডিতে চলে যাওয়ায় সরাইল থানা পুলিশ ক্ষুদ্ধ হয়। এ জন্য তারা কৌশলে আজ তাউসকে নিজেরা আটক করে সিআইডিতে নিয়ে দিয়ে এসেছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইুড’র এস আই আব্বাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।