হেফাজতের কমিটির ২ নেতাকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্ষোভ
হেফাজতে ইসলামের ৩৩ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংগঠনটির চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় সমালোচিত নেতা মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মুবারক উল্লাহ। জেলা কমিটি থেকে এখন তারা সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এর মধ্যে সাজিদুর যুগ্ম মহাসচিব এবং মুফতি মুবারক এখন সদস্য।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিভিন্ন সংগঠন অনেকদিন ধরেই তাণ্ডবের ঘটনায় এই দুই নেতার গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছিল। এই দাবিতে গত ২ জুন ‘সর্বস্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী’ নামের সংগঠনটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে। এর মধ্যে এমন ঘোষণা আসায় ক্ষুব্ধ এসব সংগঠনের নেতারা।
জেলার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন করেন। সেখানে তাণ্ডবের ইন্ধনদাতা হিসেবে সাজিদুর ও মুফতি মোবারক উল্লাহসহ শীর্ষ হেফাজত নেতাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান আহবায়ক আবদুন নুর। আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সুপারের ভূমিকাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের দাবিও জানান তিনি।
হেফাজতের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে এই দুই নেতার নাম থাকার খবর পেয়ে আবদুন নুর বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার মূল হোতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহ। সেখানে তারা আজও রহস্যজনক কারণে গ্রেপ্তার হচ্ছে না। তারা এখন গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। ‘আজ তারা (হেফাজত) সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে কমিটি করেছে। তাদের এই নতুন কমিটি করা মানে আমরা বুঝি আগামিতেও তারা এমন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পিছপা হবে না। তাই সরকারকে উচিৎ এখনই তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করা।’
আগের কমিটিতে জেলা পর্যায়ে সভাপতি ছিলেন মাওলানা সাজিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুফতি মুবারক উল্লাহ।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালান। এ সময় হামলাকারীরা সরকারি, বেসরকারি অর্ধশতাধিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। ২৬ মার্চ জামিয়া বিকালে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে স্থানীয় রেল স্টেশনে আগুন দেয় কওমি ছাত্ররা। পরে তারা যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে। সেখানে আগুনে পুড়ে যায় বেশ কিছু গাড়ি ও মোটর সাইকেল। আগুন দেয়া হয় আনসার ক্যাম্পেও। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পরদিনও মহাসড়ক অবরোধ করে বেপরোয়া গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। আর ২৮ মার্চের ত্রাস ছিল আরও ভয়াবহ। সেদিন শহরের ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া হয়। হামলা হয় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে। শহরে এমন কোনো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বাদ ছিল না যেগুলোতে হামলা চালায়নি হেফাজত কর্মীরা। এমনকি ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিতে নির্মিত ভাষা চত্বরও জ্বালিয়ে দেয় তারা। এসব ঘটনায় ৫৬টি মামলায় এ পর্যন্ত ৫১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বেশির ভাগই হেফাজতের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। আছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও। গত ২৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয় কওমিভিত্তিক সংগঠনটি। এরপর সোমবার রাজধানীর খিলগাঁও চৌরাস্তা মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটির ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। এতে আমির হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। মহাসচিব হয়েছেন নূরুল ইসলাম জিহাদী। এ কমিটিতে জায়গা হয়নি সংগঠনটির আলোচিত নেতা মামুনুল হকের। হেফাজতের আগের কমিটিতে তিনি যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন।
কমিটিতে সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে সংগঠনটির সাবেক আমির আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানীকে। নতুন কমিটিতে স্থান পাননি হেফাজতের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদীও। তিনি সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে নূরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ভবিষ্যতে প্রত্যেক জেলা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া জেলা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতে হবে।