যুবলীগের বর্ধিত সভা, ব্যানার-ফেস্টুন, হাতি-ঘোড়া, পারফরমেন্সে সেরা
জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা ঘিরে পদপ্রার্থীদের মহড়া আলোচিত হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মুখে মুখে নাম ছড়িয়ে পড়েছে কয়েকজনের। লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন তারা শোডাউনে। শুধু হাতি-ঘোড়ার সমাবেশ নয়, সমর্থকদের মাঝে হাজার হাজার পিস গেঞ্জি বিতরণ, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা ছাড়াও ভাড়ায় শত শত মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তারা।
জায়গায় জায়গায় তোরণ নির্মাণ, ব্যানার-ফেস্টুনে সয়লাব করেছেন গোটা এলাকা। সমর্থকদের আপ্যায়ন করার জন্য ট্রাক ভরে ফেনসিডিল আনার খবরও চাউর আছে। সব মিলিয়ে তাদের মহড়ায় শনিবার কম্পমান হয়ে উঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। দলের সাধারণ নেতাকর্মীরাও বিস্মিত এতে। তাদের এই টাকা পয়সার উৎস কি তা নিয়েও কথা হচ্ছে। পদপ্রার্থীদের কেউ কেউ ওই মহড়ার পেছনে ৪০/৫০ লাখ টাকা খরচ করেছেন বলে নিজেরাই বলে বেড়াচ্ছেন।
শোডাউনের পারফরমেন্সে সেরা হিসেবে সবার মুখে নাম উঠেছে সভাপতি প্রার্থী হাসান সারোয়ারের। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
তারপরেই আছেন সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আলী আজম। আজম জেলা যুবলীগে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। হাসান সারোয়ার তার সমর্থকদের মধ্যে ৫ হাজার গেঞ্জি বিতরণ করেন। হাতি ভাড়া করে নিয়ে আসেন নরসিংদী থেকে। ৩ দিনের জন্য হাতি ভাড়ায় গেছে তার ৯০ হাজার টাকা। সমর্থকদের খাবার, ব্যানার-ফেষ্টুন ও তোরণ নির্মাণে তার খরচ হয়েছে বিশাল অঙ্কের টাকা। বর্ধিতসভার আগের দিন হাসান ২৬টি তোরণ করার কথা জানান সাংবাদিকদের। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘নেতা যেহেতু আইবো কলিজাটা খুলে রাস্তায় বিছাইয়া দিতে ইচ্ছে করতাছে। যতদূর পারি চেষ্টা করতাছি।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল তার মোবাইলে একাধিক বার ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়।
আলী আজম তার সমর্থকদের জন্য ৩ হাজার গেঞ্জি বানানোর কথা স্বীকার করেন। আর তোরণ বানিয়েছেন ৩টি। ৮/১০ লাখ টাকা খরচ করার বিষয়টি ঠিক নয় বলে জানান তিনি। জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য শনিবার ১৪/১৫ জন প্রার্থী নিজেদের নানাভাবে উপস্থাপন করেন।
এদিকে, জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী যুবলীগের কমিটি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাইম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, কোথাও মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কমিটিতে ঠাঁই দেয়া হবে না। আমরা নিজেদের মতো করে খোঁজ নিচ্ছি। যে ব্যক্তি দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছে তাকেই কমিটি গঠনে মূল্যায়ন করা হবে। এর জন্য সকলকে সাহায্য করতে হবে। নৈরাজ্যবাদী কেউই কমিটির অন্তর্ভুক্ত হবে না বলে আমি আশ্বাস দিলাম।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৮শে জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। এরপর এই এক কমিটিতে পেরিয়েছে ১৭ বছর। এই সময়ে জেলা যুবলীগের কমিটিতে থাকা অর্ধেক সদস্যই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েন। মৃত্যু, দলের অন্য ইউনিটে পদ গ্রহণ, মামলায় জেলে ও প্রবাসে রয়েছেন তারা। উপজেলা ইউনিটগুলোও বেহাল। ফলে এই বর্ধিত সভা আশা জাগিয়েছে দলের নেতাকর্মীদের। আগামী সম্মেলন ঘিরে চাঙ্গা হয়ে ওঠেন তারা।
(প্রতিবেদনটি পূর্বে মানবজমিনে প্রকাশিত)