পৌরসভা ও জেলাবাসীর উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: জহিরুল হক খোকন জহিরের খোলা চিঠি
সম্মানিত পৌর ও জেলাবাসী আস্সালামু আলাইকুম,
দেশ ও জাতীর চরম ক্রান্তি কালে এক কঠিন সময়ে আমি আপনাদের সামনে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে খোলাখুলি কিছু তথ্য উপস্থাপনের জন্যই আজকের এই খোলা চিঠি।
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার মানুষের সকল প্রকার গণতান্ত্রিক অধিকার হরন করে তছনছ ও ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। সকল দলের মিলিত ইচ্ছায় যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা বর্তমান সংবিধান থেকে বাদ দিয়েছে এই সরকার, তারা দেশ চালাচ্ছে গায়ের জোরে, দেশে আজ গণতন্ত্রের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই। মিছিল, মিটিং, সমাবেশ ও মানবন্ধনের মত গণতান্ত্রিক কর্মসূচী করে আপনাদের সামনে তাদের কৃতকর্ম তুলে ধরতে না পারার জন্য আজ পত্রিকা তথা গণমাধ্যমের মারফতে আপনাদের কাছে খোলা চিঠির দারস্থ হতে হলো।
প্রিয় পৌর ও জেলাবাসী,
আগামী ২০শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন দাখিলের পূর্বে এবং দাখিলের দিন থেকেই প্রশাসনের বৈরি আচরনের সম্মূখিন হতে হয় আমাদের। সরকার দলীয় প্রার্থী নির্বাচনী আচরনবিধি ভঙ্গ করে ব্যাপক শোডাউন করে মনোনয়ন দাখিল করে। এমনকি অদ্যাবধি সমস্ত আচরনবিধি লঙ্ঘন করে তারা তাদের নির্বাচনী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। কোথাও প্রশাসন টু শব্দ টুকুও করেনি। বরং বার বার তাদের অবহিত করার পরও তারা নির্বিকার ভ্রুক্ষেপহীন। অপরাগতা প্রকাশ ছাড়া কোন প্রতিকারই আমরা পায়নি প্রশাসন থেকে। পক্ষান্তরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আইন মেনে ডিসি অফিসে মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রবেশ পথেই পুলিশ সদস্যদের হয়রানির শিকার হই। ঐ স্থানেই ঐ সময় উচ্চস্বরে পুলিশ কর্মকর্তার হুমকি প্রদান যা উপস্থিত সাংবাদিক ভাইয়েরা প্রত্যক্ষ করেছেন। ঐ দিন রাত থেকেই আবার শুরু হয় নতুন করে পুলিশি হয়রানি। সরকার দলের কতিপয় নেতার ইশারায় এসব অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে যা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে জেতাতেই মনোনয়ন দাখিলের রাত থেকে অদ্যাবধি দলের সাহসী ও দায়িত্বশীল সমাজের সর্বজন স্বীকৃত গ্রহণযোগ্য ভাল মানুষগুলোকে গ্রেফতার শুরু হয়। এই পর্যন্ত নাম বলে শেষ করা যাবে না, অসংখ্য নেতাকর্মীদের বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের গত ১১ ও ১২ই জানুয়ারী মাদ্রাসা ছাত্র, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সৃষ্ট ত্রিমুখী সংঘর্ষের মামলায় আসামী দেখানো হয়েছে।
প্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী!
আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে গত ১১ ও ১২ই জানুয়ারী সংঘটিত ঘটনায় বিএনপি তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেহই জড়িত ছিল না। আপনারা সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, এমনকি ফলাও করে সমস্ত ঘটনাবলি ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াতেও প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বিএনপির কোন নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রমান নেই। বিজ্ঞ সাংবাদিক ভাইদের কাছেও প্রচারিত ও প্রকাশিত তথ্য প্রমান, স্টীল ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে। আমরা যতদূর জানি জেলা আওয়ামীলীগ অফিসেও সিসিটিভি আছে। সেখানেও প্রমান করতে পারবে না যে অফিস ভাঙচুরের সাথে বিএনপির একজন সাধারণ সমর্থকও জড়িত ছিল। উল্লেখ্য যে, পাঁচ বার শোন এ্যারেষ্ট দেখিয়ে দীর্ঘ ৭৭ দিন আমাদের কারাগারে রাখা হয়। দীর্ঘ কারাবরণের পর মুক্তি পেয়ে বাড়ি পৌঁছে আপনজনদের সাথে সাক্ষাৎ পর্ব শেষের আগেই আবারও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আমাদের আসামী করা হয়। আমি এই খোলা চিঠির মাধ্যমে জোরালো কন্ঠে স্পষ্টভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাই এই ব্যাপারে যদি একজনও বিএনপির সংশ্লিষ্টতার প্রমান তারা দেখাতে সক্ষম হবে না। প্রকৃত অপরাধী যে কেউ হোক তার রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন তাকে প্রমান সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হোক।
সম্মানিত ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী,
আবারও একটু পিছনে ফিরি, ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্র হাফেজ মাসুদুল ইসলাম নিহত হওয়ার পর পরিস্হিতি শান্ত করার জন্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মাহবুবুর রহমানের মধ্যস্থতায় শর্ত স্বাপেক্ষে হরতাল প্রত্যাহার এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণেই প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে, পৌর নির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থীর পক্ষে একতরফা সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার পথ সুগম করার জন্যই এসব ধর-পাকড়, হামলা-মামলা, পুলিশি হয়রানির মাধ্যমে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে যাচ্ছে বলে জনমনে আশঙ্কা ও মুখে মুখে আলোচিত।
প্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী,
আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন বা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছেন সরকার দলীয় প্রার্থী নির্বাচনী আচরনবিধি অবাধে লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন, এর স্বপক্ষে অাজও তথ্য প্রমানও আছে। জনসভা আকারে সভা করা, নৌকা প্রতীকের ব্যানারে রাজপথে মিছিল করা, গ্যাস ফিল্ডের মত রাষ্ট্রীয় স্পর্ষকাতর প্রতিষ্ঠানে বিদেশী কর্মরত প্রকৌশলীদের উপর সন্ত্রাসী কায়দায় ছাত্রলীগের যারা নেতৃত্ব দিয়ে হামলা করেছিল, প্রায়শই তারা ফিল্মি স্টাইলে প্রশাসনের নাকের ডগায় হোন্ডা মিছিল করছে।এছাড়াও আমাদের সম্ভাব্য এজেন্টের ঘরে ঘরে গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। প্রচার প্রচারণার সময় বিকট শব্দে পুলিশি ভেপু বাজিয়ে পিছে পিছে অনুসরন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। গত ৯ই মার্চ বিকেলে কাচারী পুকুর পাড় এলাকায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী লিফলেট বিতরন কালে হঠাৎ করে পুলিশ বাহিনী রণমূর্তি ধারণ করে প্রচারণায় অংশকারী নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়, এতে অনেক নেতাকমী মারাত্মকভাবে আহত হয় ও অনেককে গ্রেফতার করা হয়। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর সাথে যারা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে, প্রচারণা শেষে এবং রাতের বেলায় তাদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যাদের ধরে নেওয়া হচ্ছে, মুচলেখা দিয়ে দল ছাড়তে এবং সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ইদানিং প্রকাশিত শিরোনাম যেমন- “ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বিএনপি নিধন চলছে”, “বিএনপি প্রার্থীর সাথে হাটলেও বিপদ, হাত মেলালেও বিপদ”, “ধানের শীষে ভোট দিব বললেই গ্রেফতার”। উল্লেখিত শিরোনামগুলো দেখলেই আমাদের উল্লেখিত ঘটনাবলির সত্যতার প্রমান মেলে।
এমতাবস্থায় আমি একথাই বলব, প্রশাসন কর্তৃক এই গণগ্রেফতারের ঘটনা ও প্রশাসনের নিরবতাই প্রমান করে সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার মাধ্যমে বরাবরের মত ভোটারদের ইচ্ছা মত ভোট প্রদানের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও মত্ত হয়েছে।
সত্যিকার গণতন্ত্র চাইলে সুষ্ঠ নির্বাচন ব্যবস্থা লাগবেই। ভোটাধিকার নষ্ট করে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে, নির্বাচনকে মহা প্রহসনের হাত থেকে মুক্তি দিতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এর ব্যতিক্রম হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী ধরে নিবে প্রশাসনের কোন স্বকীয়তা নাই।
ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার বিগত দিনের রাজনৈতিক, সামাজিক, পারষ্পরিক, সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধাবোধের যে বন্ধন বিগত কোন শাসনামলেই নষ্ট হয়নি আজ তা ধ্বংস প্রায়। সেই ঐতিহ্যকে অটুট রাখার জন্য, প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করে সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনী লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করে, আওয়ামী নেতাকর্মীদের বর্তমান স্লোগান হচ্ছে “আমার ভোট আমি দেব, যত খুশি তত দেব,সকলের ভোটই আমি দেব” এই স্লোগানকে রুখে দিয়ে “আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব” সেই পরিবেশ সুনিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাই। সেই সাথে স্বাধীনভাবে ভোটাররা তাদের মত প্রকাশের সুযোগ পেলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
সবশেষে. আমি প্রশাসন ও সরকার দলের সকল অন্যায় ও অনৈতিক কর্মকান্ড এবং আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সকল প্রকার পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও আটককৃত সকল নেতাকর্মীর অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।
নির্বাচনের দিন সমাজের দর্পন ও বিবেক হিসেবে পরিচিত বিজ্ঞ সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন তাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনের দিনের সকল তথ্য ও উপাত্ত জাতির সামনে সাহসীকতার সাথে তুলে ধরবেন।
আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ও জেলাবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা ও মঙ্গল কামনা করছি। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হউন। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।প্রেস রিলিজ