করোনার প্রভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২০ দিনের চাঁদনীর জীবন ও পুলিশ কর্মকর্তার মানবিকতা
মনিরুজ্জামান পলাশ : মাত্র দিন বিশেক আগে পৃথিবীর আলো বাতাস স্পর্শ করেছে সে। ঘরে আলো ফুটিয়েছে বলে বাবা ইমন ও মা শেফালী আক্তার আদর করে নাম রেখেছে চাঁদনী। কিন্তু চাঁদনী এমন এক সময় পৃথিবীতে এলো যখন পৃথিবী জুড়ে করোনার ঘোর অন্ধকার। সবচেয়ে বেশি আধার নেমেছে শহরের ঘাটুরা এলাকার তাদের ছোট ঘরটিতে। তার রিক্সা চালক বাবা ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য দিনের খাবার টুকুও যোগােতে পারছে না। ফলে চাঁদনীর মা তাকে পর্যাপ্ত বুকের দুধ ও খাওয়াতে পারছে না। ডাক্তারের পরামর্শ চাঁদনীকে কৃত্তিম দুধ খাওয়াতে হবে। বাধ্য হয়ে বাবা ভাড়ার রিক্সা নিয়ে সড়কে।
কিন্তু সড়কে সড়কে চলছে পুলিশের তল্লাসি। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় এক রিক্সায় দুইজন যাত্রী হলেই থামিয়ে দেয়া হচ্ছে রিক্সা। ফলে তেমন যাত্রীও পাচ্ছে না । সন্ধ্যায় দুজন যাত্রী নিয়ে কাউতুলী এলাকা অতিক্রম করছিল ইমন। তখন সেখানে তদারকি করছেন খোদ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর ) আবু সাঈদ । তিনি তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ইমন করোনার প্রভাবে তার ২০ দিনের মেয়ে চাঁদনীর জীবনের কথগুলো তুলে ধরে। তখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ দোকান থেকে একটি কৃত্তিম দুধের কৌটা কিনে চাঁদনীকে উপহার দেয়।
এসময় তিনি সেখানে উপস্থিত থাকা এ প্রতিবেদককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করতেও অনুরোধ করেন। কিন্তু বর্তমান এ সমাজ ব্যবস্থায় আবু সাঈদদের মত পুলিশ কর্মকর্তা আছে বলেই যে চাঁদনীর মত ফুলগুলো বেঁচে উঠে তা না প্রকাশ করলেও হয়তো নিজের দায়বদ্ধতা থেকে যেতো। সৃষ্টির পর থেকে এ পৃথিবীতে অনেক দূর্যোগ এসেছে, সামনে হয়তো আর আসবে। আমরা যদি বিপদের দিনগুলোতে এভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়াই তাহলে বেঁচে যাবে মনুষত্ব। আর মনুষত্ব বেচে থাকলেই বেচে থাকবে আমাদের এ পৃথিবী।