এমপির হুশিয়ারীর পরও থামছেনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ব!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির গত ১৭ আগস্টের এক সভায় দালাল সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। হাসপাতালের দালাল প্রতিরোধ করতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার অভিযান পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা হয় ওই সভায়। তবে হাসপাতালে দালাল রয়েই গেছে। সাতসকালে বহির্বিভাগে রোগী আসার আগেই দালালরা এসে জড়ো হয়।
গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়ে। দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা।
দালালের খপ্পরে পড়ে ভুল চিকিত্সার শিকার জেলার কসবা উপজেলার পানিয়ারূপ গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে মো. শাহবুদ্দিন সোমবার দুপুর ২টার দিকে হাজির হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে। শাহবুদ্দিন জানান, মাস পাঁচেক আগে কাচ ভেঙে হাতের কবজি জখম হয় তাঁর। তিনি আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে। এ সময় দালালের খপ্পরে পড়ে হাসপাতালের বদলে তিনি চিকিত্সা নেন সেন্ট্রাল ল্যাব নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। সৈকত আহমেদ জনি নামের এক চিকিত্সক তাঁর হাতে অস্ত্রোপচার করেন।
কিন্তু পাঁচ মাসেও তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি।
হাসপাতালের ভেতর একাধিক স্থানে দালাল থেকে সাবধান থাকার সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি টানানো আছে। এটাতেই যেন দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটিতে পর্যায়ক্রমে ৭০-৮০ জন দালাল কাজ করে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। ভালো চিকিত্সককে দেখানো ও ভালো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর কথা বলে রোগীদের তারা বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। মাস্টাররোলে কর্মরত একাধিক কর্মচারীও বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার গুনারা গ্রামের মো. শাহ আলমের সঙ্গে। দালালের খপ্পরে পড়ে তিনি বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। শাহ আলম ও তাঁর স্বজনরা জানায়, হাসপাতালে ভালো চিকিত্সক নেই—এমন কথা বলে তাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার পর তারা আবার হাসপাতালের ভেতরে চলে যায়।
বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান লিটন বলেন, ‘সদর হাসপাতালের আশপাশের কিছু প্রতিষ্ঠান দালাল রাখে, যা দুঃখজনক। আমরা চাই কেউ যেন প্রতারণার শিকার না হয়। এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হবে। ’
গত তিন দিন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো রোগীর সঙ্গে একাধিক স্বজন অবস্থান করছে। একজন রোগীর সঙ্গে একজন স্বজন থাকা, রোগীর বিছানায় কেউ না বসা—হাসপাতালের এমন সব নির্দেশনা তারা মানছে না।
মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রঞ্জু মজুমদার জানান, একজন রোগীর সঙ্গে ১০ জন স্বজনও থাকে। একসঙ্গে অনেক লোক বসায় প্রায়ই রোগীদের শয্যা ভেঙে যায়।
হাসপাতালের ভেতর হকারদেরও ঘুরতে দেখা গেছে। বাদাম, পপকর্ন বিক্রি করতে দেখা যায় একাধিক হকারকে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে নিচতলার ব্লাড ব্যাংক কক্ষের সামনে কয়েকজনকে বাদাম খেয়ে খোসা মেঝেতে ফেলতে দেখা গেছে। হাসপাতালের ভেতর ধূমপানও করতে দেখা যায় অনেককে।
সদর হাসপাতালে রয়েছে চোরেরও উত্পাত।