যে কারণে নিষ্ক্রিয় ছাত্রদল
ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলনে খুব বেশি সক্রিয় হতে পারছে না বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভিন্ন গ্রুপের সমন্বয়হীনতা, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ণ না করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করা ও নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ করতে না পারার কারণে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে পারছে না সংগঠনটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, ১৯৭৯ সালের ০১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গসংগঠন হিসেবে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের ইতিহাসের সকল আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম হয় ছাত্রদল। আন্দোলন সংগ্রামে সফলতার সঙ্গে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ নব্বইর দশকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয় সংগঠনটি। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সংগঠনটি। বিভিন্ন কারণে এ সংগঠনটি বর্তমানে আন্দোলন সংগ্রামে আর আগের মতো শক্তি প্রদর্শন করতে পারছে না। দলে চাটুকার নেতাদের আধিপত্য, মেধাবীদের মুল্যায়ন না করা, অযোগ্যদের পদায়ন আর আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পদ বিক্রিসহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে দলকে বের করে আনার জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজে দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন যাচাই বাছাই শেষে আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সভাপতি ও হাবিবুর রশিদ হাবিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি অনুমোদনের সময় বিগত দিনে দলে কার্যরত বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন চেয়ারপারসন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাই কমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক সকল গ্রুপের সমন্বয়ে কমিটি করতে যেয়ে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছে বর্তমান নেতৃত্বকে। বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করতে যেয়ে ২৯৪ সদস্যের কমিটি করতে হয়েছে। ওই সকল গ্রুপের নেতাদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিশাল কমিটিতেও দলের অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু কমিটিতে পদ পাওয়ার পর বিভিন্ন গ্রুপ থেকে আসা ওই সকল নেতারা তাদের গ্রুপ লিডারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজেই অধিক ব্যস্ত থাকছেন। এ কারণে ইচ্ছে করেই তারা বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি থেকে নিজেদের কৌশলে আড়াল করে রাখছেন। অনেকক্ষেত্রে তারা বর্তমান নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে চলছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সার্বিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দলের ওপর। এছাড়া কমিটিতে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সিনিয়র জুনিয়র প্রটোকল মেইনটেইন না করে পদ পজিশন দেয়ায় অনেক নেতা নাখোশ রয়েছেন। এ কারণে তারাও মিটিং মিছিলসহ দলীয় কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছেন না। যোগ্যতা আর দলের জন্য ত্যাগ থাকা স্বত্ত্বেও বর্তমান কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে দলে অন্তভুক্তির দাবি জানিয়ে আসলে এখনো তাদের দেওয়া আশ্বাসের কোনো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না । তাই দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা এসব নেতাকর্মীরাও আন্দোলনে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। জানতে চাইলে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রনেতা প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে জানান, অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দলীয় পদে অধিষ্ঠিত হয়েও বর্তমান কমিটিতে পদবঞ্চিত হয়েছেন তিনি। এরপরও নেতাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে চলেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত না করায় খুবই হতাশায় ভুগছেন তিনি। তিনি বলেন, হরতাল ধর্মঘটের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দলীয় কর্মসূচিতে পদ পজিশন ছাড়া যেতে আর ইচ্ছে হয় না। এছাড়া পদ না থাকলে এ ধরনের কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বিপদ আসলে কেউ দায়িত্ব নিতে চান না বলে মনে করছেন তিনি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পাঁচ জন করে নেতা নির্বাচন করেছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও এসব ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি ইউনিট নেতারা। তাই পদ ছাড়া এসব ইউনিটের নেতাকর্মীরা হরতাল ধর্মঘটসহ ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে চাচ্ছেন না। এছাড়া এসব ইউনিটের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে পিছিয়ে থাকার কারণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এসব কারণে হরতাল ধর্মঘট বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দলীয় কর্মসূচিতে আগের মতো হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে রাজপথে আর মিটিং মিছিল করতে পারছেন না বর্তমান নেতারা । সম্প্রতি বিভিন্ন হরতালের সমর্থনে ছাত্রদলের মিছিলে ৪-৫ জন নেতাকর্মীর সমন্বয়ে নামমাত্র মিছিল নিয়ে মিডিয়া কাভারেজের বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলছে বিশ্লেষকদের। জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে জানান, ছাত্রদল অতীতের পথ অনুসরণ করে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখে চলেছে। এ মুহূর্তে সর্বশক্তি দিয়ে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এছাড়া খুব শিগগিরই দলের জন্য ত্যাগী ও যোগ্য পদবঞ্চিতদের কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে। পাশাপাশি ইউনিট কমিটিগুলো পূর্নাঙ্গ করার জন্যও সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও যারা আন্দোলন সংগ্রামে সাড়া দিচ্ছেন না তাদের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। সময়মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। |