হচ্ছে বিকল্প বিএনপি।।৫৪টি জেলায় কমিটি ও কার্যালয়
ডেস্ক ২৪:নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ যেন বিকল্প বিএনপি। বিএনএফের দলীয় গঠনতন্ত্র ঘেঁটে এর সপক্ষে নানা প্রমাণ পাওয়া গেছে। নতুন এ দলটির দলীয় পতাকার ঊর্ধ্বাংশ গাঢ় লাল। নিম্নাংশ গাঢ় সবুজ। ঊর্ধ্ব ও নিম্নাংশের মাঝ বরাবর আস্ত ধান গাছ। যার সঙ্গে বিএনপির দলীয় পতাকার পার্থক্য কিঞ্চিত। যদিও গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপির তরফে বিএনএফের প্রতীককে ‘গমের শীষ’ হিসেবে বর্ণনা করে আপত্তি জানানো হচ্ছিল। মঙ্গলবার বিএনএফের গঠনতন্ত্র হাতে আসে। এতে দেখা যায়, বিএনএফের নির্বাচনী প্রতীক ‘গমের শীষ’ নয় ‘ধান গাছ’। যা ‘ধানের শীষ’-এর প্রায় কাছাকাছি। এখানেই শেষ নয়, বিএনএফের ১৯ দফা ঘোষণায় স্থান পেয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত হতে দলটি তড়িঘড়ি করে ৫৪টি জেলায় কমিটি ও কার্যালয় করেছে। রমজান শেষ হওয়ার আগেই বাকি ১০টি জেলায় কমিটি ও কার্যালয় স্থাপিত হবে। নতুন দলের ব্যানারের প্রার্থীদের দলটির সঙ্গে তিন বছর যুক্ত থাকার বিধান প্রযোজ্য না হওয়ার সুযোগ নিয়ে দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনেই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শহীদ জিয়ার আদর্শে দলটি জনগণের কল্যাণে সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসন ব্যবস্থা (যাকে দলটি মিশ্র শাসন ব্যবস্থা বলে আখ্যা দিচ্ছে) প্রবর্তন করার লক্ষ্যে কাজ করছে। দলটির ঘোষণাপত্রেও রয়েছে বিএনপির ঘোষণাপত্রের সাদৃশ্য। বিএনএফের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, জনগণের গণতন্ত্র, ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতা, সম্পদের সুষম বণ্টনভিত্তিক সামাজিক ন্যায়বিচার বা সমাজতন্ত্র। সবশেষ খবর হচ্ছে, বিএনএফের প্রধান সমন্বয়ক/প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদের পক্ষে মঙ্গলবারও একজন প্রতিনিধি নিবন্ধনের অগ্রগতি জানতে হাজির হন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে। তিনি এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সময় কাটান। এর আগে মঙ্গলবার সকালে ২৭/১১/২ তোপখানাস্থ বিএনএফের প্রধান কার্যালয়ে কথা হয় দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি জানান, দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক আরিফ মাঈনুদ্দীন, কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম। দলে থাকা আরেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বেশ আগেই বহিষ্কৃত হয়েছেন। বিএনএফের প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ অবশ্য দাবি করেন, বিএনএফ বিএনপির বিকল্প নয়। আমরা রাজনীতিতে শহীদ জিয়ার আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছি। কিন্তু বিএনপি রাজনৈতিক অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে না জেনে না বুঝে আমাদের বিরোধিতা করছে। এমনকি আমরা যাতে নিবন্ধন না পাই সেজন্য তারা কমিশনেও একের পর এক অভিযোগ দায়ের করছে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন দল গঠন করা সাংবিধানিক অধিকার। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ীও এতে কোনো বাধা নেই। যোগ্য হলে নির্বাচন কমিশনও নিবন্ধন দিতে বাধ্য। এক্ষেত্রে অন্য কোনো দলের নাক গলানো কাক্সিক্ষত নয়। বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনএফ কোনো ভুঁইফোঁড় সংগঠন নয়। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনএফ গঠন করেন। পরে তিনি ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি নামে নতুন দল গঠন করলেও বিএনএফকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেননি। এ ধারাবাহিকতায়ই ২০১১ সালের ৭ নভেম্বর বিএনএফ পুনঃযাত্রা শুরু করেছে। বিএনপির ভাঙাগড়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শহীদ জিয়ার আদর্শ, চিন্তাধারা এবং সমসাময়িক রাজনীতির আলোকে বিএনএফ পুনঃসংগঠিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রের সঙ্গে বিএনএফের গঠনতন্ত্রের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দুই-ই আছে। এরকম সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য চার টুকরা হওয়া জাতীয় পার্টির মধ্যেও আছে। এটা দোষের কিছু নয়। তিনি দল নিবন্ধনে একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। বলেন, এগুলো রটানো হচ্ছে। এদিকে বিএনএফকে নিবন্ধন দেয়ার পথে অনেকখানিই এগিয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন। এগোচ্ছে ফাইলপত্রের কাজ। যদিও নির্বাচন কমিশনে তিন দফা হাজিরা দিয়ে ইসির ভূমিকার তীব্র বিরোধিতা করেছে বিএনপি। দলটি সংবাদ সম্মেলন করে ইসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার হুমকিও দিয়ে রেখেছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, বিএনপির দলীয় পতাকা, নির্বাচনী প্রতীক, লোগো, কর্মসূচি এরকম সবকিছুর সঙ্গে মিল রেখে বিএনএফ দেশের মানুষকে ধোঁকা দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এর পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। ইসিও এ ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে দলটিকে নিবন্ধন দেয়ার চেষ্টা করছে। ইসি তার অবস্থান না বদলালে আমাদের পক্ষে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কেউ নতুন দল করতেই পারে। কিন্তু একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতার কর্মসূচি এবং দলটির লোগো ও প্রতীকের আদলে প্রতীকের ব্যবহার কেন? বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপির নির্বাচনী প্রতীকের অনুরূপ কোনো প্রতীক, অফিসিয়াল লোগো, ১৯ দফা কর্মসূচি এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছবিসংবলিত কোনো ভুঁইফোঁড় সংগঠনের নিবন্ধনের আবেদন অনুমোদন করা যাবে না। এমন অপচেষ্টা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ বিএনএফের নিবন্ধন বিষয়ে বলেন, নিবন্ধনের জন্য দুটি রাজনৈতিক দলকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছি। এখনও কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। নিবন্ধনের শর্তাবলী পূরণ করতে পারলে ওই দলের নিবন্ধনে কোনো বাধা নেই। বিএনএফের নিবন্ধনে কোনো ধরনের চাপ নেই বলে জানান সিইসি। উল্লেখ্য, ১/১১-র সময়েও মেজর (অব.) এম হাফিজ উদ্দিনকে সামনে রেখে বিকল্প বিএনপি গঠনের তৎপরতা শুরু হয়েছিল। ড. এটিএম শামসুল হুদার কমিশন মূল বিএনপি হিসেবে মেজর হাফিজ নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী বিএনপিকে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপি হুদা কমিশনের প্রবল বিরোধিতায় নামে। পরে বিএনপির আন্দোলনের মুখে সংস্কারপন্থী বিএনপিকে নিবন্ধন দেয়ার সাহস দেখায়নি হুদা কমিশন। হুদা কমিশনের বিদায়ের পরও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। নানা সাফল্যের পরও বিকল্প বিএনপি তৈরির চেষ্টার কারণে হুদা কমিশনের কপালে তা কলঙ্কতিলক হিসেবেই রয়ে গেছে। |