Main Menu

২ বারের মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের বিশাল এই পরাজয়ের নেপথ্যে ………..

+100%-

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি সিলেট থেকে জানান: জননন্দিত জননেতা, ভোটের রাজা এরকম কত পরিচয়ই না আছে সদ্য সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের। কিন্তু এসব পরিচয়ে পরিচিত কামরানকে বিপুল ভোটে পরাজিত হতে হয়েছে গতকালের জনরায়ে। এই রায়ের ফলে দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধিত্বের চেয়ার ছাড়তে হচ্ছে তাকে। এতদিন নগরবাসী যাকে ক্ষমতার চেয়ারে বসিয়েছিল।

মিছবাহর কেন্দ্রেও পরাজিত কামরান: মিসবাহউদ্দিন সিরাজ। ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেখান থেকেশেখ হাসিনা তাকে দায়িত্ব দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের। পরপর দুইবারতিনি সে দায়িত্ব পান। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদনির্বাচন ও হবিগঞ্জে দেওয়ান ফরিদ গাজীর আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। আর সর্বশেষঅনুষ্ঠিত হলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কোন নির্বাচনেই সিলেট বিভাগে ভালোকরতে পারেনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। ফলে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজেরসাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।মিসবাহ উদ্দিনসিরাজের নিজ কেন্দ্র মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজেও বিএনপি নেতা আরিফুল হকচৌধুরী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। ওই কেন্দ্রে আরিফ পেয়েছেন ১৭৬০ভোট, আর কামরান পেয়েছেন ৭০০ ভোট।

অভিযোগ রয়েছে, মিসবাহ নিজ দলীয় প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের প্রধাননির্বাচনী এজেন্ট হলেও তিনি গোপনে কামরানের বিপক্ষে কাজ করেছেন। গোপনেযোগাযোগ রক্ষা করে গেছেন আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে। মিসবাহর কেন্দ্রেকামরানের চরম ভরাডুবির ঘটনায় নেতাকর্মীদের সন্দেহের তীর এখন কেন্দ্রীয়সাংগঠনিক সম্পাদকের দিকেই।

হেফাজত মূল ফ্যাক্টর : সিলেটের ভোটের মাঠে এবার কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিল হেফাজতে ইসলাম। কামরানের পথের কাঁটা হয়ে ১৮ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সরব প্রচারণা চালিয়েছে  হেফাজত নেতারা। অরাজনৈতিক দাবিদার এ সংগঠনটি এই প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের মাঠে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করেছে। সিলেট নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে রয়েছে তাদের শক্ত অবস্থান। বহু আবাসিক মাদরাসা রয়েছে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডজুড়ে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত সিলেটে ভোটের মাঠে হেফাজতই হয়েছে মূল ‘ফ্যাক্টর’।
সিলেট সিটিকরপোরেশন নির্বাচনে আরিফের ‘পরিবর্তন’র হাওয়ায় উড়ে গেছে সদ্য সাবেক মেয়রবদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পাহাড়সম জনপ্রিয়তা। সেই সাথে সিটি পৌরসভা ওপরবর্তীতে সিটি করপোরেশনে কামরানের ৪১ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটল। নগরীর সুবহানীঘাটের আমকুনী হুজুরের মাদরাসা, কাজীরবাজারে প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের মাদরাসা এবং শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাসংলগ্ন গাছবাড়ী হুজুরের বড় তিনটি আবাসিক মাদরাসা রয়েছে। ওই তিন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও অনেক কওমি মাদরাসা রয়েছে সিলেট শহরে। এদের পাশাপাশি রয়েছে জামায়ত-শিবিরের বিশাল ভোটব্যাংক। বিগত দুই নির্বাচনে এদের ভোট কামরানের বাক্সে গেলেও এবার ভিন্ন চিত্র। জামায়াতের কোনো ভোটই পায়নি আওয়ামী সমর্থিত বদর উদ্দীন আহমদ কামরান। সিলেটে এমসি কলেজ সহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস,এবং এ সরকারের আমলে সরকার দলের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড,বিগতদিনের সিলেট নগরীতে চোখে পড়ার মত তেমন কোন উন্নয়ন না করতে পারা আর দলীয ষড়যন্ত্র এবং কোন্দলই কামরানের এই বিশাল পরাজয়ের মুল কারন। এর সাথে কামরানের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা ফাস হওয়া,শুন্য থেকে নগর ভবনকে ব্যাবহার করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে যাওয়া আর ভোটের মাঠের চতুরতার কেৌশলও এবার ফাস হয়ে যায়।সবমিলিয়ে ভোটারদের আবেগ,পরিবর্তন আর  মন্দের ভাল আরিফকে সুযোগ দেবার প্রয়াসেই আসে আরিফের বিজয় আর কামরানের বিশাল পরাজয়।

কামরানের সঙ্গে নেই জাতীয় পার্টি, আরিফের সঙ্গে ১৮ দল :সিলেটের ভোটের হিসাব পাল্টে দিয়েছে এবারের জোটগত ঐক্য। ১৪ দলীয় জোট অন্যতম দল জাতীয় পার্টি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা কামরানের সঙ্গে  ছিল না ।  কোনো প্রচারণাতেও নেই তারা। মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ইশরাকুল হোসেন বলেছেন, আমরা ১৪ দলের সঙ্গে নেই। মহাজোটে আছি। এ বক্তব্যেই প্রমাণিত হয় যে, কামরান নিজেই মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির ভোট হারিয়েছেন। এর ফলে লাভবান হন বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক। এরই মধ্যে ১৮ দলের পাশাপাশি আরিফের নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিল  হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। সব মিলিয়ে চাঙ্গা  ছিল সিলেটের বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকরা।



« (পূর্বের সংবাদ)



Shares