শফিকুল আলম এবং আমানুল হক সেন্টুর বিরুদ্ধে আল মামুন সরকারের মামলা



ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এবং জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা আমানুল হক সেন্টুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এই মামলা হওয়ার পরই পুলিশ আমানুল হক সেন্টুর শহরের ফুলবাড়িয়ার বাসভবনে অভিযান চালায়। এসময় সেন্টু বাসায় ছিলেন না। মামলার বাদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আল মামুন সরকার। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সেলিম উদ্দিন মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওসি জানান, গনমাধ্যমে মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করায় এই মামলা হয়েছে। ওসি সেন্টুর বাসায় অভিযান চালানোর কথাও স্বীকার করেন। এর আগে ১৭ই জানুয়ারি আল মামুন সরকার শফিকুল আলম ও আমানুল হক সেন্টুর বিরুদ্ধে থানায় এই অভিযোগটি দেন।
ওই সময় আল মামুন সরকার জানিয়েছিলেন তাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে হামলার জন্যে দায়ী করায় এই অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। তিনি আরো জানান- শফিকুল আলম এবং আমানুল হক সেন্টু তার দেয়া লিগ্যাল নোটিশের জবাব না দেয়ায় তিনি এই অভিযোগ দিয়েছেন। গত ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জেলা পরিষদ আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানস্থলে হামলার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারকে দায়ী করে গনমাধ্যমে বক্তব্য দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমানুল হক সেন্টু। পরদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মামুন ওই ঘটনায় তাকে জড়িত করার প্রতিবাদ জানান। সে সময় তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং আমানুল হক সেন্টু নামধারী মুক্তিযোদ্ধা বলে মন্তব্য করেন। সেন্টুর দুই ভাই স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন মামুন। এরপর ২৩শে ডিসেম্বর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এক মানববন্ধনে মামুন আবারো তাদের বিরুদ্ধে এই বক্তব্য দেন। গত ২৬শে ডিসেম্বর আমানুল হক সেন্টু ও শফিকুল আলমকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ও সাধারন সম্পাদক আল মামুন সরকারের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
এডভোকেট আবদুল জব্বার(মামুন) স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে আমানুল হক সেন্টুকে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান উল্লেখ করে বলা হয় তার ভাই হামিদুল হক টুক্কু ছিলেন চিহ্নিত ও তালিকাভূক্ত রাজাকার নেতা। যিনি যুদ্ধাপরাধ মামলায় কারাগারে ছিলেন। জেলা পরিষদে ১৬ই ডিসেম্বর সংগঠিত ঘটনা ছাড়াও নাসিরনগরসহ আরো কিছু সাম্প্রদায়িক ঘটনায় নোটিশ দাতাদের জড়িত করে দেয়া বক্তব্যকে মিথ্যা,ভিত্তিহীন,অশালীন,নিন্দনীয় এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত উল্লেখ করা হয়। কোন প্রকার স্বাক্ষ্য-প্রমান ছাড়া জনসমক্ষে এবং রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে জড়িত করে এধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে বলে বলা হয় নোটিশে। এরপর ১২ই জানুয়ারি এডভোকেট শওকত আলীর মাধ্যমে এই লিগ্যাল নোটিশের জবাব দেন আমানুল হক সেন্টু ও শফিকুল আলম। এতে আল মামুন সরকারের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়ে বলা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৫৮ সালের ১লা মার্চ। সুতরাং স্বীকৃত মতেই মুক্তিযোদ্ধের সময় আল মামুন সরকারের বয়স ছিলো আনুমানিক ১২ বৎসর। তাছাড়া তিনি কখন কোথায় কিভাবে মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন তার কোন তথ্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় বা সংশ্লিষ্ট কোন শাখায় নেই। তিনি কোন যুদ্ধে আহত হয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তারও কোন তথ্য কোন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধার কাছে নেই উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয় কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সকলেই জানেন যে আল মামুন সরকার স্বাধীনতা পরবর্তীকালে মরহুম হুমায়ুন কবিরের নির্বাচনী প্রচারনায় মোটর সাইকেলের চেইনে লেগে পায়ে ব্যাথা পান। আল মামুন সরকারের শ্বশুর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ওরফে ফরিদ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একজন প্রখ্যাত রাজাকার ছিলেন এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর খুনী খন্দকার মোশতাকের বিশ্বস্থ সহচর ছিলেন বলে সেন্টু তার নোটিশের জবাবে উল্লেখ করেন।