ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বামীকে অপহরন করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, স্ত্রী ও চার অপহরণকারী আটক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বামীকে অপহরন করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করার ঘটনায় স্ত্রী এবং ৪ অপহরনকারীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর এলাকার দক্ষিন পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অপহরনকারীদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, দক্ষিণ পৈরতলার শওকতের (মাদক নিরাময় কেন্দ্র অশ্রুর মালিক) স্ত্রী ফারজানা সুলতানা পলি, অপহরণকারী নবীনগর উপজেলার উত্তর লক্ষীপুরের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে সানাউল্লাহ-(২৯), একই উপজেলার শ্রীরামপুরের ইসমাইল মিয়ার ছেলে গনি মিয়া-(২৫),নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ন গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে শামীম মিয়া-(২৫) ও সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের মধ্যপাড়ার মৃত মুরতুজ আলী মোল্লা ছেলে লোকমান মিয়া (৫৬)।
পুলিশ ও অপহৃত শওকতের পরিবারের সদস্যরা জানান, দক্ষিণ পৈরতলার ফজলুল হকের ছেলে পরিবহন ব্যবসায়ী ও মাদক নিরাময় কেন্দ্র (অশ্রু)র মালিক শওকতের সাথে গত ৯ বছর আছে শহরের মধ্যপাড়ার রফিকুল ইসলামের মেয়ে ফারজানা সুলতানা পলির বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়। পলি শওকতের দ্বিতীয় স্ত্রী। এর আগে পলিরও এক ছাত্রলীগ নেতার সাথে বিয়ে হয়েছিলো।
শওকতের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকে মধ্যপাড়ায় ভাড়া বাসায় পলিকে নিয়ে বসবাস করতো শওকত। বিয়ের পর থেকে পলি বিভিন্নভাবে শওকতের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ও প্রায় ৫০ ভরির মতো স্বর্নালংকার হাতিয়ে নেয়।
গত ১৩ মার্চ বিকেলে পলি শওকতকে তার দক্ষিণ পৈরতলা এলাকার মাদক নিরাময় কেন্দ্র অশ্রু থেকে কৌশলে মধ্যপাড়ার বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় যাওয়ার পর অপহরনকারীদের সহায়তায় তার হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে তাকে খাটের নিচে ফেলে রাখে।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রের একজন পরিচালক লিমন জানান- খবর পেয়ে পরদিন পলির মধ্যপাড়া বাসায় গিয়ে শওকতকে হাত-পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করি। সেখান থেকে তাকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকৎসা করানো হয়। তিনি বলেন, ওই ঘটনার পরই আমরা সামাজিকভাবে বসে পলিকে নগদ ৩ লাখ টাকা দিয়ে তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেই। এরপর বৃহস্পতিবার কয়েকজন অপহরনকারী দক্ষিণ পৈরতলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সামনে গিয়ে শওকতকে অপহরন করার জন্যে ঘুরাঘুরি করতে থাকলে আমরা তাদের চারজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি।
এ ব্যাপারে সদর থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী জানান-খবর পেয়ে তিনি ও এসআই রুবেল ফরাজীর নেতৃত্বে পুলিশের ৩টি টিম মধ্যপাড়া ও দক্ষিন পৈরতলা গিয়ে পলি ও ৪ অপহরনকারীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। তিনি জানান অপহরনকারীরা সংখ্যায় ১০ জন ছিলো।
সদর থানায় ডিউটি অফিসারের কক্ষে বসা পলি সাংবাদিকদের জানান- যাদের আটক করা হয়েছে তাদের কোন দোষ নেই। তিনিই তাদেরকে এনেছিলেন তার স্বামীকে বেঁধে দেয়ার জন্যে। স্বামী তাকে নির্যাতন করতো বলেও অভিযোগ করেন পলি। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তাকে বেঁধে রেখেছিলেন। তিনি বলেন, তার স্বামী একজন মাদকসেবী। মাদক সেবন করে তাকে প্রায়ই মারধর করতো। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই তাকে বেঁধে কোন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তার।
এ ব্যাপারে পলির পিতা রফিকুল ইসলামও বলেন শওকত তার মেয়েকে নির্যাতন করতো এটা ঠিক। তবে তাকে বেঁধে রেখে আমার মেয়ে অন্যায় করেছে। আমি সামাজিকভাবে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মঈনুর রহমান বলেন- এটি স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার মীমাংসা হয়ে যাবে। তবে অন্য যাদের ধরে আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।