ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুন:: সন্ধ্যার পর ভূতুড়ে শহর
ডেস্ক ২৪:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় আগামীকাল বুধবার সারাদেশে হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পক্ষে মাওলানা মোবারক উল্লাহ এ হরতালের ঘোষণা দেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসা ছাত্র নিহত ও মাদ্রাসায় হামলার প্রতিবাদ, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তাপস রঞ্জন বোস, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকূল চন্দ্র বিশ্বাসের অপসারণ ও নিহত মাদ্রাসা ছাত্রের নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল বুধবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা তৌহিদী জনতার ব্যানারে হরতাল পালিত হবে।
এর আগে ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাদ্রাসা ছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমানের (২২)। তিনি শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহরে থেকেই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন।তাঁর গ্রামের বাড়ি নবীনগর উপজেলার সামন্তঘর গ্রামে। বিকেলে নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে জেলার ঈদগা মাঠে জানাজার পর ভাদুঘরে দাফন করার কথা রয়েছে।
এদিকে সকালে মাদ্রাসার ছাত্র নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাদ্রাসা ছাত্ররা বিক্ষোভ করছেন। ভোর থেকেই ছাত্ররা শহরের টিএ রোড, হাসপাতাল রোড, কালীবাড়ি মোড়, মসজিদ রোড, কান্দিপাড়া রোড, মাদ্রাসার রোড, পাওয়ার হাউজ রোডসহ সকল সড়কে রোড ডিভাইডার, বাঁশ ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেন। শহরের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ৮টায় জামেয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শীর্ষ আলেমরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে বিকেল ৩টায় নিহতের জানাজা, পরে বিক্ষোভ এবং আগামীকাল বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রেলস্টেশন ও ব্যাংক এশিয়া ভাংচুর চালানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন ছাত্ররা। পুলিশ ফকিরাপুল ব্রিজের ওপর অবস্থান নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের ধাওয়ায় থানার ফটকের সামনে অবস্থান নেয়।
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শহরের টি.এ রোড এলাকায় পুলিশবাহী একটি পিকআপ ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পুলিশবাহী পিকআপ ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ছবি তুলতে গেলে র্যাবের এক সদস্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজের জেলা প্রতিনিধি মাসুক হৃদয়কে মারধর করেন। তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। একই সময়ে জেলা সদর হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধরা।এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, বিকেলে নিহত ছাত্রের ময়নাতদন্তের পর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ মাদরাসা ছাত্ররা অতর্কিতভাবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হামলা ও ভাঙচুর করে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা জরুরি বিভাগের দরজা-জানালা, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে সকালে দুই প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুরে আরো দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য শহরে নামে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহরের বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে। গোটা শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরজুড়ে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নজরুল ইসলাম, জেলা ম্যাজিস্টেট মো. সামছুল হকের পক্ষে মাইকিং করে ছাত্রদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এদিকে সংঘর্ষ ও মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনা তদন্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।