ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার আয়োজনে শিক্ষাবৃত্তি ও সর্বোচ্চ পৌরকরদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে মোকতাদির চৌধুরী এমপি
অনেক টাকাওয়ালারাই যথারীতি পৌরকর পরিশোধ করেন না
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার আয়োজনে শিক্ষাবৃত্তি ও সর্বোচ্চ পৌরকরদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় শহরের দানবীর লোকনাথ রায় চৌধুরী ময়দান কমপ্লেক্স সংলগ্ন পৌর কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ রুহুল আমিন, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জুলফিকার হোসেন, আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সোপানুল ইসলাম সোপান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী মোঃ আঃ কুদ্দূস। পৌরসভার সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পৌর পরিষদের সম্মানিত কাউন্সিলরগণের পক্ষে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র-২ ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মিজানুর রহমান আনসারী।
এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সকল কাউন্সিলরবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পৌর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে বাছাইকৃত ৬৯ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। একই সাথে বিগত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নিয়মিত করদাতাদের মধ্য হতে সর্বোচ্চ পৌরকরদাতা হিসেবে ১০ জনকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, একসময় মানুষ টাকা-পয়সা, জায়গা-সম্পত্তিকে সম্পদ মনে করলেও বর্তমানে অনেক রাষ্ট্রে এটা বিশ্বাস করেন যে, মানুষের প্রকৃতি সম্পদ হচ্ছে তার জ্ঞান। যে জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে যত উন্নত হয়েছে, তারা অন্য সবদিকেই ততটাই উন্নতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, প্রায় সকল ধর্মেই জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎসার কথা বলা হয়েছে। শাস্ত্রে যেমন ‘ছাত্র নং অধ্যায়নং তপও’ বলা হয়েছে, তেমনি মুসলিম ধর্মেও ‘তালাবুল ইলম্ িআলা কুল্লি মুসলিমিন’ উল্লেখ করা হয়েছে বলে তিনি আরো বলেন- জ্ঞান মানুষের অন্তর চক্ষু খুলে দেয়। মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ ও বিবেক জাগ্রত করে। যে বোধ তাকে আলোকিত মানুষ হতে সহায়তা করে। তিনি বলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা যে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আজ বৃত্তি প্রদান করছে, তারা একদিন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে বাংলাদেশ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নেতৃত্ব দেবে। তিনি বলেন, এই শিশুরা একদিন আলোকিত মানুষ হবে, যে মানুষ নিজের দেশকে ভালোবাসবে, নিজের মাতৃভাষা এবং মানুষকে ভালোবাসবে। তারা শহর দখল-দূষণ করবে না, তারা শহর ভাংচুর-লুটপাট, অগ্নিসংযোগকারীদের দলে যাবে না। তিনি আরো বলেন, যারা যারা বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতকে পছন্দ করে না, যারা বাংলাদেশকে পছন্দ করে না, যারা শহর পোড়ায়, পৌরসভা পোড়ায়, রেলস্টেশন পোড়ায়, কম্পিউটার পোড়ায় তারা দেশ, সমাজ, মানবতা ও ধর্মের শত্রু। এই শত্র“দের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। তিনি পৃথিবীর যে সমস্ত বিজ্ঞানীরা মানুষের কল্যাণে জ্ঞানকে উৎসর্গিত করেছেন, যে সমস্ত বাঙালিরা দেশের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করেছেন, তাদের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে তৈরি করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সর্বোচ্চ পৌরকরদাতাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, অনেক টাকাওয়ালারাই যথারীতি পৌরকর পরিশোধ করেন না, আমি আশা করবো আজকের এই সম্মাননা অনুষ্ঠান ওই সকল লোকদেরকে পৌরকর প্রদানে উৎসাহিত করবে। তিনি তিনি পৌরবাসীকে পৌরকর প্রদানের আহবান জানিয়ে আরো বলেন, ভবিষ্যতে এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা একটি স্বাবলম্বী পৌরসভা গঠনে এবং পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ডে ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির বলেন, যারা শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছে তারা একদিন আলোকিত মানুষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখতে শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি সম্মাননা প্রাপ্ত পৌরকরদাতাসহ পৌরসভার সকল নাগরিকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।