সম্প্রীতি
নামহীন, পরিচয়হীন, কারো বুকের ধন?
কারো বুকের ধন না বলাই ভালো। কোন মা তার নাড়ি ছেড়া ধনকে এভাবে ফেলে দিতে পারবেনা।
গত ১৪ অক্টোবর ভোরে কাজীপড়ার মিয়া পাড়া [সরকার পাড়া] রাস্তার উপর অসহায় অবস্থায় পাওয়া যায় বাচ্চাটিকে। ভোরে নামাজ পড়তে যাবার সময় একজনের চোখে ধরা পড়ল বাচ্চাটিকে ঘিরে এলাকার কয়েকজন মহিলা দাড়িয়ে আছে। ব্যাপারটিকে গুরুত্ব না দিয়ে সে মসজিদের দিকে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল হেজাব পড়া একজন মহিলা হাতে ফিডার ও বার বার পেছন ফেরে তাকাচ্ছে। সে মসজিদে চলে গেল।
নামাজ পড়ে আসার পথে বাচ্চা কার? বাচ্চা কার? উক্তি শুনে সে থমকে দাড়ায়। ইতিমধ্যে একজন রিক্সাওয়ালা যে মহিলাটিকে পৈরতলা থেকে নিয়ে এসেছিল সে বলল, মহিলা উত্তর দিকে থেকে আগত একটি সিএনজিতে করে এসে এখানে নামে। কিছুক্ষণ পর মহিলাকে আবারও পৈরতলা যেতে দেখে ঐ রিক্সা চালক তাকে জিজ্ঞেস করে, এই মহিলা তোমার বাচ্চা কোথায়? মহিলা ধমকের সুরে বলে উঠে, এই মিয়া কি আবোল তাবোল বকছ। বাচ্চা কেন আমার হবে? আমারে কাউতলী নিয়া চল।
ইতিমধ্যে এলাকার একজন পুলিশকে ফোন দেয়। পুলিশ বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।সদর মডেল থানার ওসি বাচ্চাটিকে দেখে অবাক হলেন। এত সুন্দর বাচ্চা? পরিপাটি পোশাক, ডায়পারও পড়া আছে। কে এই বাচ্চাটিকে এভাবে ফেলে দিয়ে গেল? আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি বাচ্চাটিকে তুলে দিলেন সরকারি শিশু পরিবারের হাতে। পাশাপাশি শিশুটির জন্য পোশাক ও খাবারও কিনে দিলেন।
১৫ অক্টোবর রাত আটটায় শিশু পরিবারে গিয়ে দেখা গেল ওসি সাহেব সেখানে অবস্থান করে বাচ্চাটির খোজ খবর নিচ্ছেন। বর্তমানে শিশু পরিবারে বাচ্চাটির যার পরম মমতায় রয়েছেন তিনি হলেন তত্বাবধায়ক রওশন আরা। তিনি মাতৃস্নেহে বাচ্চাটিকে বুকের মাঝে আগলে রাখছেন। রাতে বাচ্চাটিকে এক পাশে রেখে ঘুমান অন্যপাশে রাখেন তার নিজের সন্তানকে।কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, আজ তার এখানে থাকার কথা নয়, তার এক ভাই, যিনি পেশায় স্থাপত্যবিদ। বিবাহ করেছে মাত্র দেড় মাস। হঠাৎ গত পরশু তার ভাইয়ের অকাল প্রয়াণ হয়। তাই মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত। তবুও বাচ্চাটিকে দেখে নিজের কষ্টটুকু চাপা দিয়ে শিশুটিকে বুকে তুলে নিলেন। ইতিমধ্যে তিনি বাচাটির একটি নামও দিয়েছেন।
“সম্প্রীতি”
বাচ্চাটির বুকে কফ জমা ছিল এবং বয়স সম্পর্কেও তিনি ধারণা করতে পারছিলেন না। পরে শিশু বিশেষজ্ঞ বাচ্চাটিকে দেখে বাচ্চাটির বয়স সাড়ে তিন থেকে চার মাস হতে পারে বলে জানান। পাশাপাশি বাচ্চার জন্য এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিলেন।
বাচ্চাটিকে দেখার জন্য শিশু পরিবারের গেইট ভিড় করছেন শতশত মানুষ। সদর থানার অফিসার ইন চার্জ জানান যে, গত ২৪ ঘন্টায় তিনি পাচ শতাধিক ফোন রিসিভ করেছেন। সবাই বাচ্চাটিকে নিতে চাচ্ছে। তিনি অবশ্য বাচ্চাটিকে প্রকৃত বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে আগ্রহী।
আমরাও চাই “সম্প্রীতি” খুজে পাক তার নিজের বাবা মা কে; আর যদি না পাওয়া যায়, তাহলে একটি উপযুক্ত পরিবারে হাতে তুলে দেয়া হউক।কারন মানুষত্য এখনও হারিয়ে যায়নি-এ কথার প্রমান মেলে সদর মডেল থানার অফিসার ইন চার্জের কথায়,“গত ২৪ ঘন্টায় তিনি পাচ শতাধিক ফোন রিসিভ করেছেন। সবাই বাচ্চাটিকে নিতে চাচ্ছে।“