Main Menu

মন্ত্রণালয়ের স্মারক ও সচিবের স্বাক্ষর জাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাজী জেলহাজতে

+100%-

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর ও সচিবের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ পাওয়ার ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজী) ইসলাম উদ্দিনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল রবিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাহিদ হোসেনের আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিনে ছিলেন ইসলাম উদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ আনোয়ারুল হক গত ২৬ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধানতলিয়া গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘরের মোঃ ইসলাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রফিকুল ইসলাম ও ইসলাম উদ্দিন পরস্পর চাচা-ভাতিজা। ২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর ইসলাম উদ্দিনের যোগসাজশে রফিকুল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ১২নং ওয়ার্ডের জন্য কাজীর একটি জাল নিয়োগপত্র তৈরি করেন। ঘটনার প্রায় ১১ বছর পর ওই দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। এর আগে ২০১৪ সালে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রনালয়ের এক আদেশে মোঃ ইসলাম উদ্দিনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তবে ইসলাম উদ্দিন ১৭ বছর ধরে পৌরসভার ১০, ১১, ১২ নং ওয়ার্ডের কাজী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
অভিযোগ উঠেছে, তিনি বে-আইনিভাবে দিনের পর দিন একটির বদলে তিনটি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে কাজী নিয়োগে ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
তবে ইসলাম উদ্দিনের দাবি, পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডটি বিভাজিত হয়ে ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে রূপান্তরিত হওয়ায় তিনি নিয়ম অনুসারেই তিনটি এলাকার দায়িত্ব পালন করছেন। বাল্য বিয়ে দেয়া, কাজী নিয়োগে ছলচাতুরির বিষয়টি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার। দুই একজন লোক নিজেদের স্বার্থে তাঁর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অবশ্য বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ইসলাম উদ্দিন নিয়োগের আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ওয়ার্ড বিভাজন হয়। ১৯৯৮ সালে ৩০ এপ্রিল পৌরসভার চারটি ওয়ার্ডকে বিভাজিত করে ১২টি ওয়ার্ড করা হয়। এর মধ্যে ৪ নং ওয়ার্ড রূপান্তরিত হয় ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে।
এদিকে ইসলাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগের কপিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অনুরোধও করেন। উধর্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই অভিযোগটির তদন্ত চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘরের বাসিন্দা মোহাম্মদ মুরাদুচ্ছালেহীন এর অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ইসলাম উদ্দিন ৪ নং ওয়ার্ডকে পরবর্তীতে বিভাজিত ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় উপস্থাপন করছেন, যা প্রতারণা, বেআইনি ও পেশাগত অসদাচণ। কেননা, ইসলাম উদ্দিন ২০০০ সালে নিয়োগ প্রাপ্তির আগেই ১৯৯৮ সালে পৌরসভার ওয়ার্ড বিভাজিত হয়। এছাড়া তিনি কৌশলগত কারণে ১২ নং ওয়ার্ডে মো. রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নামে জাল লাইসেন্স সৃষ্টি করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় লাইসেন্সটিকে জাল বলে ঘোষণাও করে। পরবর্তীতে আবারো আব্দুল সালাম নামে এক ব্যক্তির অস্থায়ী নিয়োগ সৃষ্টি করেন, যেটি নিয়ে তিনি আদালতে রিট করেন।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব বিচার শাখা-৭ ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৬ সালে রফিকুল ইসলাম নামে কাউকে নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স ইস্যু করা হয় নি। যা দায়ের হওয়া মামলায়ও উল্লেখ করা হয়।
গ্রেপ্তারের আগে সম্প্রতি সার্বিক বিষয়ে মোঃ ইসলাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার ক্ষেত্রে মুসলিম বিবাহ ও তালাক বিধি অনুযায়ি দুইটি ওয়ার্ডে অর্থাৎ ১০ ও ১১ নং ওয়ার্ডে জন্য আমাকে স্থায়ীভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স প্রদান করতে আবেদন করে রেখেছেন। এছাড়া তিনি এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছেন। আদালতের একটি আদেশে তিনি তিনটি ওয়ার্ডেই দায়িত্ব পালন করছেন। অবশ্য তিনটি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আদালতে কোনো আদেশের কপি তিনি দেখাতে পারেন নি।






Shares