এডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চুর মৃত্যুর পর তার স্মরণে আগরতলা থেকে "দৈনিক সংবাদে" প্রকাশিত নিবন্ধ
চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের দু:সাহসিক যোদ্ধা
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ২২ নভেম্বর: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই নম্বর সেক্টরের অন্যতম সংগঠক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাংসদ লুৎফুল হাই সাচ্চু সোমবার অপরাহ্ণে রাজধানীর অ্যাপলো হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। সকালে প্রাতরাশ খাওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা সহ বহু আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। জনপ্রিয় এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। দলীয় নেতা কর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ ছুটে আসেন তাঁর বাসভবনে। আগামীকাল সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্ল্যাজায় তাঁর নামাজে জানাজা হবে। আগামীকালই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রামে পারিবারিক কবরখানায় লুৎফুল হাই সাচ্চুকে কবরস্থ করা হবে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। লুৎফুল হাই সাচ্চু ছিলেন বর্তমান সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
বিকচ চৌধুরীর সংযোজন: ‘৭১-এর দুর্যোগপূর্ণ দিনগুলিতে বিশেষ করে এপ্রিল ‘৭১ থেকে ডিসেম্বর দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশ নেশন্যাল এসেম্বলীর সদস্য (এমএলএ) লুৎফুর হাই সাচ্চু যিনি সংবাদ পরিবারের কাছে সাজুভাই হিসেবে আমাদের ঘরের লোক হয়ে পড়েছিলেন। তিনি নেই- যেন আমাদের কাছে চার যুগের একটি যোগসূত্র ছিন্ন হয়ে যাওয়া। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে ভূপেনদার সান্নিধ্যে এসে তিনি দৈনিক সংবাদকে রীতিমত মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক নিউজ কন্ট্রোল রুম হিসেবে পরিণত করেছিলেন। অতি অমায়িক একজন সাধারণ মানুষ বিপুল সাংগঠনিক শক্তিতে সেদিন একাধিক সেক্টরের সঙ্গে রীতিমত সেতুবন্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ থেকে অষুধপত্র, রসদ এবং আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা অবিশ্বাস্য। অগ্রবর্তী রণক্ষেত্রের বহু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ তার নিখুঁত ও বিশ্বস্ত যোগসূত্রের মাধ্যমে সেদিন সংবাদ ভবন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সংবাদ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তুলে ধরার কাজে সাজুভাই একজন অবিস্মরণীয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় অবশ্যই চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। সংবাদ পরিবারের সঙ্গে বিশেষ করে প্রয়াত সম্পাদক ভূপেন দত্ত ভৌমিকের সঙ্গে যুক্তি পরামর্শ করে রাতের অন্ধকারের ত্রিপুরার একাধিক দুঃসাহসিক যুবকদের সহায়তা সেদিন ত্রিপুরার অন্তত দুটি সেক্টরে যেভাবে অস্ত্রশস্ত্র পাঠাবার ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং একাধিক অভিযানের সফল রূপায়ণ সম্ভব করেছিলেন তা ত্রিপুরাবাসী কিংবা আজকের বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ খুব কমই জানেন।
৩০ বছর বাদে ২০০৩ সালে আগরতলায় এসে সংবাদ ভবনে প্রথম পা দিয়েই প্রয়াত ভূপেনদার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর সেসব নাম-না-জানা বীর যুবকদের অকৃপণ সহায়তার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তার অনুরোধে সে-সময়ের দু’তিনজন সাহসী যুবক যারা এখন প্রায় প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তে উপনীত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে সেদিন বলেছিলেন। আপনাদের মত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য ও সহায়তা না পেলে আমাদের এই সংগ্রাম অবশ্যই কঠিন হত। সমগ্র ত্রিপুরাবাসীর কাছে এবং বিশেষ করে ভূপেনদা ও সংবাদ পরিবারের কাছে আমাদের জাতির সীমাহীন ঋণ আমরা। কোনদিনও ভুলতে পারব না।